সৌম্য যেদিন জ্বলে ওঠে সেদিন সব তার হয়ে যায় : ইমরুল
২১ অক্টোবর শেরে বাংলায় প্রথম ম্যাচে শতরানসহ ১৪৪ রানের দারুণ ইনিংসের পর চট্টগ্রামে দ্বিতীয় ম্যাচে ৯০, আর আজ আবার শতরান (১১৫)। সব মিলিয়ে ৩৪৯ রান। তামিম ইকবালের রেকর্ড ভেঙ্গে তিন ম্যাচ সিরিজে যা বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত অর্জন। সবচেয়ে বেশি রান।
তার ক্যারিয়ার সেরা ব্যাটিং পারফরমেন্স। ইমরুল কায়েসের একার ক্যারিয়ারই শুধু নয়, বাংলাদেশের কোন ব্যাটসম্যানের তিন ম্যাচের সিরিজে সেরা ব্যাটিং নৈপুণ্য এটা। ধারাবাহিকভাবে তিন ম্যাচে এমন ভাল খেলার পুরস্কারটা জুটলো নগদ। সিরিজ সেরা পারফরমারের পুরস্কার ইমরুল কায়েসের হাতে।
মাঝে দলের বাইরে থাকা। এশিয়া কাপে সুযোগ পেয়ে অনব্যস্ত পজিশন মিডল অর্ডারে খেলেও আফগানিস্তানের সাথে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ৭২ রানের দারুণ ইনিংস খেলে নিজের সামর্থ্যের প্রমাণটা নতুনভাবে দিয়ে আবারও পাদপ্রদীপের আলোয় উঠে আসলেন তিনি। আর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এ সিরিজে দুর্বার, দুর্দান্ত, দুরন্ত ইমরুল।
হঠাৎ ধারাবাহিকভাবে এমন ভালো খেলার পিছনের কারণ কি? এত ভাল খেলার রহস্যই বা কি? খেলা শেষে সংবাদ সম্মেলনে এমন প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে ইমরুলের একটু অন্যরকম জবাব- ‘ভাই আমারে খেলতে দেন, আমি অতো কিছু জানি না। কীভাবে কি! এত বড় প্লেয়ার হই নাই এখনো। তিনটা ম্যাচ ভাল খেলেছি আর চেষ্টা করব বাকি ম্যাচগুলো ভাল খেলার।’
এখন তিন ম্যাচের সিরিজে তামিমকে টপকে তিনিই দেশের হয়ে এক সিরিজে সবচেয়ে বেশি রানের মালিক। এত ভাল খেলার পর অনুভুতি কি? ‘খুব ভাল লাগছে কারণ ম্যাচটা জেতাতে পেরেছি। এটা অবশ্য আমার ক্রিকেট জীবনে বড় প্রাপ্তি। আমি চেষ্টা করব এটা ধরে রাখতে। আসলে অনেক কথাই বলে লোকে, যে ধারাবাহিকতা নাই। আমি জানি, আমি কোথায় রান করি বা করি না। এটা নিয়ে আমি আতঙ্কিত নই।’
আগের ম্যাচে সেঞ্চুরি মিস, আজ ৯০ তে গিয়ে কি ভেবেছিলেন? ইমরুলের জবাব, ‘আগের ম্যাচে আসলে নিজের কাছে আমার একটু বেশি প্রত্যাশা ছিল যে, পরপর সেঞ্চুরি করব। যার জন্য চাপ বেশি লাগছিল; কিন্তু আজকে ৯০ এর পর কোন চাপ অনুভব করিনি। ভেবেছি, শেষ করব ইনিংসটা। তখন সেঞ্চুরি হলে হবে না হলে নাই। যখন ৯০ রানে ছিলাম দলের জেতার জন্য অনেক রান লাগত। আল্টিমেটলি এটা একশো হয়ে যেত।’
টানা তিন সেঞ্চুরির আক্ষেপ মোটেই পোড়াচ্ছে না? দুঃখ দিচ্ছে না। ‘আলহামদুলিল্লাহ। আমি শূন্য রান আউট হতে পারতাম। আমি রান করেছি তিনটা ম্যাচে এটা অবশ্যই ভাল লাগছে। তিনটা সেঞ্চুরি হলে ভাল লাগত। যেহেতু এটা কেউ কখনো করেনি বাংলাদেশের হয়ে। বাংলাদেশি হিসেবে আমি প্রথম করতাম, আমার একটা সুযোগ ছিল। আমারও খারাপ লাগছে সেদিন রুমে গিয়ে। ওটাই চিন্তা করছিলাম, আবার ৯০ এর ঘরে গেলে আর ভুল করব না।’
এশিয়া কাপের দুজনের হুট করে আরব আমিরাত উড়ে যাওয়া। তারপর আজ সৌম্যর সাথে এই ম্যাচে ২২০ রানে জুটি। দুজনের মধ্যে বোঝাপড়া নিয়ে কিছু বলবেন?
ইমরুল বলেন, ‘সৌম্যের সঙ্গে যখন ব্যাট করি নিজের খুব ভাল লাগে। কারণ ওর সঙ্গে ব্যাট করলে চাপ জিনিসটা থাকে না। ও অনেক স্ট্রোক খেলে। যার জন্য আমি এক পাশ থেকে যদি রান নাও করতে পারি, তারপর দেখা যায় ও আরেক পাশ থেকে পুষিয়ে দেয়। তো যেটা তামিমের সঙ্গে হতো আমার, তামিম অনেক স্ট্রোক খেলত। এ জন্য ভালো হয়েছে, আমাদের জুটি ভালো হয়েছে। রানরেট ভাল ছিল। যদিও ব্যাটসম্যানদের জন্য রান করা সহজ ছিল। সব মিলিয়ে এনজয় করেছি।’
আপনার দেখা এটাই কি সৌম্যের সেরা ইনিংস কিনা? এমন প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে ইমরুলের জবাব, ‘অবশ্যই। দেখবেন সৌম্য ঘরোয়া পর্যায়ে থেকে ভাল করছে। ও আত্মবিশ্বাসী আছে। ওর মতো প্লেয়ার যেদিন খেলবে, আসলে ওয়ানম্যান শো হয়ে যাবে। আমি অন্তত বিশ্বাস করি। ওর এই সামর্থ্য আছে। আমি মনে করি ও এই যে ক্যামব্যাক করছে, এটা ধরে রাখবে। ভবিষতে বাংলাদেশ দলের জন্য লাভ হবে।’
তার সামনে বাবর আজমের বিশ্বরেকর্ড ভাঙ্গার হাতছানি ছিল। আপনি কি তা জানতেন? ইমরুলের অকপট স্বীকারোক্তি, ‘এটা মাথায় ছিল না। জানতাম না। আসলে খেলার সময় কোনটা রেকর্ড হচ্ছে কি হচ্ছে এটা মাথায় থাকে না। জাস্ট ফোকাস করি বল টু বলটা।’
তিনি নিজে এবং লিটন দাস ও সৌম্য- তিনজনই রানে ফিরেছেণ। টপ অর্ডারে তুমুল লড়াই। সেটা দলের জন্য ভাল বলে মনে হচ্ছে ইমরুলের। ‘আমি তামিমকে নিয়ে কথা বলব না। কোন সন্দেহ নেই সে বাংলাদেশের গ্রেট প্লেয়ার। আসলে কে কোথায় খেলবে এটা টিম ম্যানেজমেন্টই সিদ্ধান্ত নেবে। এটা তাদের বিষয়। আমাদের কাজটা আমরা যখন মাঠে নামি, শতভাগ দেওয়ার চেষ্টা করি। পারফরম্যান্স করার চেষ্টা করি। তারপরও বাংলাদেশ দলে এখন হয়ে গেছে হেলদি প্রতিযোগিতা। আমাদের দলের জন্য খুব ভাল এটা। বিশ্বকাপ পর্যন্ত যদি আমরা এটা ধরে রাখতে পারি, তাহলে বিশ্বকাপে ভাল একটা ফল আশা করা যায়। এর ভেতর থেকেই আমরা হয়ত ঘুরেফিরে খেলব। খেলতে তো হবে কাউকে না কাউকে।’
এআরবি/আইএইচএস