অল্পের জন্য দু’দুটি বিশ্ব রেকর্ড ভাঙ্গা হলো না ইমরুলের
কি নেই এখন বাংলাদেশ দলে? একঝাঁক বিদেশি কোচিং স্টাফ, হেড কোচ, ব্যাটিং কোচ, পেস বোলিং কোচ, স্পিন কোচ, ফিল্ডিং কোচ, ট্রেনার, ফিজিও আর কম্পিউটার অ্যানালিস্ট-সবই আছে। এবং সবই বিদেশী। এটাই শেষ নয়। এ সিরিজের আগে একজন মনোবীদও নিয়োগ করা হয়েছে অল্প কিছুদিনের জন্য। কিন্তু আজ বোঝা গেল, টিম বাংলাদেশে জন্য একজন পরিসংখ্যানবীদও যে বড্ড দরকার!
একজন পরিসংখ্যানবীদ দলের সাথে থাকলে নির্ঘাত আজ একটি বিশ্ব রেকর্ডের জন্ম দিতে পারতেন ইমরুল কায়েস। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে সবচেয়ে বেশি রানের মালিক বনে যেতে পারতেন ইমরুল; কিন্তু মাত্র ১১ রানের জন্য সে সুযোগ হেলায় হারিয়েছেন মেহেরপুরের এ বাঁ-হাতি ওপেনার।
আজ রাতে বাংলাদেশ দল যখন জয় থেকে মাত্র ১৩ রান দুরে, ঠিক তখন জিম্বাবুইয়ের ওয়েলিংটন মাসাকাদজার বলে লং অফের ওপর দিয়ে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে সীমানার ঠিক এক থেকে দেড় গজ সামনে ক্যাচ দিলেন ইমরুল। শেষ হলো ১১১ বলে গড়া ১১৫ রানের দারুণ এক ইনিংস; কিন্তু হায় আর ১১ রান করতে পারলে পাকিস্তানের টপ অর্ডার বাবর আজমকে পিছনে ফেলে ইমরুলই হতে পারতেন তিন ম্যাচের একদিনের সিরিজে সবচেয়ে বেশি রানের মালিক।
খেলা শেষে ইমরুলের অকপট স্বীকারোক্তি, ‘না ভাই এমন রেকর্ডের কথা জানা ছিল না আমার।’ এই এক লাইন কথার অর্থ ও তাৎপর্য্য যে অনেক। ইমরুল বুঝিয়ে দিলেন, এত বড় কৃতিত্ব ও রেকর্ডের কথা জানা থাকলে বা মাথায় থাকলে তার অ্যাপ্রোচ হতো ভিন্ন।
নিশ্চিত করেই বলে দেয়া যায়, এ ম্যাচে শতরানের পর ১২৬ রান করতে পারলেই বাবর আজমকে টপকে তিনিই হবেন তিন ম্যাচ সিরিজের টপ স্কোরার- সেটা জানা থাকলে ইমরুল নিশ্চয়ই অন্যভাবে খেলতেন; কিন্তু জানবেন কি করে? কে জানাবে তাকে?
টিম বাংলাদেশে যে কোন পরিসংখ্যানবীদ নেই! থাকলে নির্ঘাত তিনিই বলে দিতেন, এক বিশ্বরেকর্ডের হাতছানি আপনার সামনে। এদিকে ওই বিশ্ব রেকর্ড করতে না পারলেও শতরান করার পথে তার রান যখন ৭৯, ঠিক তখনই একটি রেকর্ড স্রষ্টা হলেন ইমরুল কায়েস।
তামিম ইকবালকে টপকে তিন ম্যাচ সিরিজে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বাধিক রান সংগ্রহকারি ব্যাটসম্যান বনে গেলেন মেহেরপুরের এই বাঁ-হাতি ওপেনার। শেষ পর্যন্ত শতরান পূরণের পর ১১৫ রানে যখন সাজঘরে পা বাড়ালেন ততক্ষণে তার নামের পাশে জমা হয়ে গেছে (১৪৪+৯০+১১৫)= ৩৪৯ রান।
যেহেতু আগে জানা ছিল না, তাই বাবর আজমের রেকর্ড ভাঙ্গতে না পারার আক্ষেপটাও হয়ত তাকে সেভাবে পোড়ায়নি। আজ রাতে ম্যাচ শেষে সাগরিকার জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সাংবাদিক সম্মেলনে কথা বলতে এসে জানলেন, এক দারুণ রেকর্ড ভাঙ্গার একদম দোরগোড়ায় গিয়েও তা ভাঙ্গা হয়নি।
শুধু সেটাই নয়। আরও একটি বিরল রেকর্ড ভাঙ্গার সুযোগ ছিল তার সামনে। কাকতালীয়ভাবে সে রেকর্ডটিও বাবর আজমের। গত বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিন ম্যাচের সিরিজের সব ক’টা ম্যাচে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে ৩৬০ রানের রেকর্ড সৃষ্টি করেছেন তিনি। অর্থ্যাৎ, তিন ম্যাচের সিরিজে সব কটায় শতরান আর সবচেয়ে বেশি রানের দু’ দুটি বিশ্বরেকর্ড সৃষ্টিকারী ব্যাটসম্যান হচ্ছেন বাবর আজম।
এ সিরিজে ইমরুল সে সুযোগটা হাতছাড়া করলেন। গত ২৪ অক্টোবর দ্বিতীয় ম্যাচে নিশ্চিত সেঞ্চুরি হাতছাড়া না করলেই হয়ত আজ এই সাগরিকায় ইমরুলময় রাত হয়ে যেতো। তখন একজোড়া বিশ্ব রেকর্ডের স্রষ্টা বনে যেতেন তিনি। এরপর তিন ম্যাচের ওয়ানডে ক্রিকেট সিরিজ এলেই তার নাম উচ্চারিত হতো; কিন্তু ২৪ অক্টোবর সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে ৯০ রানে আউট হয়ে সে সুযোগ হেলায় হারিয়েছেন ইমরুল।
যেহেতু জানতেন না, তাই আগে খারাপ লাগেনি তেমন। তবে আজ খেলা শেষে সংবাদ সম্মেলনে জানলেন দু’দুটি বিশ্ব রেকর্ডের কথা, তাই আগে মনে না হোক, আজ রাতে হোটেলে ফেরার পথে টিম বাসেই হয়ত আফসোস-অনুশোচনা এসে বাসা বাঁধবে মনে। বার বার মনে হবে, ইস কি সুযোগটাই না হাতছাড়া করলাম! নিশ্চয় করে সে রেকর্ড ভাঙ্গতে না পারার কথা মনে হবে বার বার।
মাত্র ১০+১ = ১১ রানের আক্ষেপটা যে তখন অনেক বড় হবে! কে জানে আবার সে সুযোগ আসবে কি না সামনে?
এআরবি/আইএইচএস/