ঘুরেফিরে সেই ভুলের পুনরাবৃত্তিই ঘটছে : মাশরাফি
অফিসিয়াল প্রেস কনফারেন্সে মাশরাফি বিন মর্তুজা অনেক ভেবে-চিন্তে, মেপে আর প্রথা মেনে কথা বলেন। আর সাংবাদিকদের ভাই-বন্ধু মাশরাফি যখন শেরে বাংলার লাউঞ্জ, মাঠ, ড্রেসিং রুমের সামনে কিংবা একাডেমি মাঠে দাঁড়িয়ে বা বসে খোশ গল্প করেন- তখনকার তিনি একেবারে ভিন্ন এক মানুষ। আড্ডার মাশরাফি অনেক প্রানোচ্ছল। প্রাণবন্তু। রসিক।
আজ চট্টগ্রামের র্যাডিসন ব্লুর লবিতে প্রিন্ট ও অনলাইনের সাংবাদিকদের সাথে আনুষ্ঠানিক কথোপকোথনেও মাশরাফি ছিলেন আড্ডার আমেজে। কথা বলেছেন প্রাণ খুলে। রসিকতাও করতে ভোলেননি। কথা হচ্ছিল ইমরুল কায়েসের ৯০ আর লিটন দাসের ৮০’র ঘরে আউট হওয়া নিয়ে।
প্রশ্ন উঠলো আচ্ছা, ইমরুল আর লিটন তো অনায়াসে সেঞ্চুরি করে বিজয়ীর বেশে সাজঘরে ফিরতে পারতেন। তাহলে জয়টা আরও সহজ, আরও বড় ব্যবধানে হতে পারতো। এই যে শতরানের একদম দোরগোড়ায় গিয়ে উইকেট বিষর্জন দিয়ে আসা, তাতে নিয়ে আপনার ব্যাখ্যা কি?
উত্তর দিতে গিয়ে প্রথমে বললেন, হ্যাঁ তা নিয়ে কাল খেলা শেষে ড্রেসিং রুমেও আলোচনা হয়েছে। ‘আসলে এ ধরণের সুযোগ তো সব দিন আসে না। তাই সুযোগ আসলে তা অবশ্যই কাজে লাগানো উচিৎ। ইমরুল ৮০ থেকে ৯০ পর্যন্ত যে হিসেবি ব্যাটিংটা করলো সেটি ৯০ থেকে না করে আবার শট খেলতে গেল। এই সমন্বয়গুলো আসলে জরুরি।’
অধিনায়ক এমন কথা বলতেই পারেন। লক্ষ্য যদিও ২৪৭, তারপরও রানের তাড়া ছিল না। ওভার পিছু ৫ রানের কম দরকার ছিল। গড়পড়তা সেই রান উঠছিল স্বচ্ছন্দে। ওদিকে যেহেতু দুজনই ওপেনার, উইকেটেও পড়েনি। তাই কোনরকম চাপ আর তাড়া কিছুই ছিল না। দেখে ঠান্ডা মাথায় খেললে দুজনই সেঞ্চুরি পেয়ে যেতেন।
কিন্তু একদম জায়গামত গিয়ে দুজনই হাঁটলেন ভুল পথে। এক ওভারে বেশ কিছু স্কোরিং শটস খেলার পর অফ-স্পিনার সিকান্দার রাজাকে অযথাই অফ সাইডে তুলে মারতে গেলেন লিটন। তার মতিগতি বুঝে অফ স্ট্যাম্পের বাইরে একটু টেনে দিয়েছিলেন সিকান্দার রাজা। লিটন অফ সাইডে তুলে মারার জন্য বেরিয়ে গিয়েও বলের পিছনে যেতে না পেরে একটু দুর থেকে সপাটে না চালিয়ে পয়েন্টের আশপাশে প্লেস করতে গেলেন। সেটা জমা পড়লো ফিল্ডারের হাতে।
আর শতরান থেকে মাত্র ১০ রান দুরে দাড়িয়ে ইমরুল কায়েসও কি ভেবে হঠাৎ শতরান ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে তুলে মারতে গেলেন। আর তা ছক্কা না হয়ে সীমানার সামনে ক্যাচ হলো। এভাবে দু’ দুজন সেট ব্যাটসম্যান নিশ্চিত প্রায় শতরান হাতছাড়া করেছেন। তারা দুজন সেঞ্চুরি করতে পারলে বাংলাদেশ ৭ উইকেটের বদলে আরও কম উইকেট হারিয়ে জিততে পারতো। কে জানে ৯-১০ উইকেটের জয় ধরা দিতে পারতো।
যারা এমন ভুলে শতরানের সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করেছেন, খেলা শেষে সেই ইমরুল ও লিটন দাসের সাথে বসেছিলেন অধিনায়ক। কথাও বলেছেন। লিটন ও ইমরুল নাকি নিজেদের ভুলটা বুঝতে পেরেছেন। তাদেরও মন খারাপ। একথা জানিয়ে মাশরাফি বলেন, ‘লিটন এবং ইমরুল দুইজনই বুঝতে পেরেছে। ওদেরও খারাপ লেগেছে। তবে কঠিন সত্য হলো, যে সুযোগ একবার হাতছাড়া হয়, তাতো আর ফিরে আসে না।’
মাশরাফি যোগ করেন, যদি তারা খুব ভাল বলে আউট হতো, তাহলে কিছু করার ছিল না। কিন্তু যেভাবে দুইজনই আউট হয়েছে, সেটা মানানসই ছিল না। তারা হয়তো নিজেরাও বুঝতে পেরেছে যে ভুল হয়ে গেছে। আশা করবো যে পরবর্তীতে এমন সুযোগ আসলে যেন না ছাড়ে।’
ইমরুল আর লিটন দাসের নিশ্চিত শতরান হাতছাড়া করা প্রসঙ্গে টাইগার অধিনায়কের যে কথাটি বড্ড ঝাঝালো, ‘যদিও আমরা এসব নিয়ে সবসময় আলোচনা করি; কিন্তু বেশিরভাগ সময় আবার সেই ভুলগুলোই করছি। এগুলো আমাদের কমাতে হবে। অবশ্যই বড় মঞ্চে এগুলো ক্রাইমের পর্যায়ে চলে যাবে।’
এআরবি/আইএইচএস/পিআর