জিম্বাবুয়ে সিরিজ সেই উচ্ছ্বাস-উন্মাদনা নেই চট্টগ্রামে!
প্রচার রাজধানী ঢাকাতেও তেমন ছিলো না। অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় এবার বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে ওয়ানডে সিরিজ নিয়ে উৎসাহ-উদ্দীপনা ও মাতামাতি তুলনামুলক কম। অন্য সিরিজের সময় আগে তেমন হৈ চৈ না হলেও প্রথম ওয়ানডের আগেরদিন বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামতেই অন্যরকম প্রাণ-চাঞ্চল্য পরিলক্ষিত হতো। এবার তার ছিটেফোঁটাও ছিল না।
আগের দিন পর্যন্ত বোঝা যায়নি, রাত পোহালে শেরে বাংলায় বাংলাদেশ খেলবে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। প্রচার কম থাকলেও শেষ পর্যন্ত গ্যালারি ফাঁকা থাকেনি। ২১ অক্টোবর প্রথম ওয়ানডে দেখতে মাঠে নেমেছিল দর্শকের ঢল। অন্তত ১৭-১৮ হাজার ক্রিকেট অন্তঃপ্রাণ বাঙ্গালির সরব উপস্থিতিতেই মেতেছিল হোম অফ ক্রিকেট।
বন্দর নগরীতেও কি তাই হবে? আজ দুপুরে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের গ্র্যান্ডস্ট্যান্ডের সামনে সাইট স্কিনের নিচে দাঁড়িয়ে এক সহকর্মীর কৌতুহলী প্রশ্ন। সে প্রশ্ন অমূলক নয় মোটেই। চট্টগ্রামে প্রচার-প্রাচরাণা যে আরও কম!
এতকাল জানা ছিল, বন্দর নগরীতে ক্রিকেট ম্যাচ মানেই উৎসবের উপলক্ষ। গোটা শহরে একটা উৎসবের আমেজ পরিলক্ষিত হতো আগে। শহরের প্রাণকেন্দ্রগুলোয় নির্মাণ করা হতো বড় বড় তোরণ। জিইসি মোড়, আগ্রাবাদ, খুলশিসহ অন্যান্য অভিাজাত এলাকাসমূহে প্রমাণ সাইজের ব্যানার, ফেস্টুনে ঠাসা থাকতো। এবার তার কিছুই নেই।
ভোরে বন্দর নগরীতে পা রাখার পর কিছুই চোখে পড়েনি। প্রথমে মনে হয়েছিল, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শেষ মুহূর্তে তোরণ, গেট, ব্যানার ও ফেস্টুন লাগানো হয়। হয়তো এবার সময় গড়ানোর সাথে সাথে তোরণ, ব্যানার কিংবা ফেস্টুনে ভরে যাবে শহর। নাহ, শেষ পর্যন্ত সে ধারণা অমূলক প্রমাণ হলো। শহরের কোথাও একটি তোরণ বহুদুরে, একটি ব্যানারও লাগানো হয়নি। এমনকি অলংকার মোড় থেকে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের মূল প্রবেশ পথেও বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে সিরিজ নিয়ে কোন গেট কিংবা ব্যানার নেই।
মোটকথা, জিম্বাবুয়ে সিরিজ নিয়ে বন্দর নগরী চট্টগ্রামে প্রচার-প্রচারণা বলতে কিছুই নেই। অন্য সময় জিইসি মোড়ের অ্যাম্বাসেডর হোটেল থেকে সাগরিকার জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের উদ্দেশ্যে সিএনজি ডাকলেই চালক বলে উঠতেন, ‘খ্যালা আছেনি বদ্দা?’
মঙ্গলবার দুপুরে জিইসি মোড় থেকে সাগরিকার জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের উদ্দেশ্যে সিএনজি ডাকার পরও চালক নির্বাক। যেন জানেই না এখানে একটা ক্রিকেট সিরিজ হচ্ছে। তবে একটা বিষয় ঠিক আছে আগের মতোই।
মাঠে ঢোকার পথে, স্টেডিয়ামের ভিতরে ও বাইরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগের মতই কড়া। নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা বেষ্টনির চাদরে মোড়া জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের আশপাশ। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের অন্তঃপ্রাণ মিডিয়া কর্মী, পাহাড়তলির সলিম উল্লাহ জুয়েল জানালেন, প্রচারণা যদিও কম, তারপরও দেখেন খেলা দেখতে মাঠে দর্শক আসবে। অন্তত হাজার পনেরো ক্রিকেট অনুরাগীর সমাগম ঘটবে মঙ্গলবার দিবা-রাত্রির ম্যাচে। কারণ টিকিট বিক্রির কাউন্টারে প্রচুর কিশোর, তরুণ এবং যুবার ভিড় দেখা গেছে।
এই যে প্রচার-প্রাচরাণা কম, হই চই, সাড়া শব্দও নেই তেমন- সেটা কেন? কেউ কেউ বলছেন, স্থানীয় সংগঠকদের প্রাণপুরুষ এবং চট্টগ্রাম থেকে বোর্ডের অন্যতম শীর্ষ পরিচালক, নগরীর মেয়র আ জ ম নাসির জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ব্যতিব্যস্ত। তাই এবার প্রচার তুলনামুলকম কম। তাও বলার অবকাশ নেই।
কারণ, আজ দিনের বেলায় জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের সর্বশেষ অবস্থা খুঁটিয়ে দেখতে ঠিকই ছুটে এসেছিলেন চট্টগ্রামের মেয়র আ জ ম নাসির। শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি ও আনুসাঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা ঠিক আছে কি না? তা নিজ চোখে পরখ করে গেছেন চট্টলার নগর পিতা।
আসল কথা, জিম্বাবুয়ে আগের জায়গায় নেই। এখন তামিম-সাকিব বিহীন বাংলাদেশের সামনে তারা দূর্বল এক প্রতিপক্ষ। যাদের শক্তি-সামর্থ্য অনেক সীমিত। এমন এক দুর্বল, অনুজ্জ্বল ও কমজোরি প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ঘটা করে তোরণ নির্মাণ, নগরীর প্রানকেন্দ্রগুলো, মোড়ে মোড়ে আলোকসজ্জা বাহুল্য বলেই মনে করা হচ্ছে। সেটা যেমন রাজধানী ঢাকায়, বন্দর নগরীতেও তেমন। তাই প্রচার-প্রচারণা কম। সাড়াও নেই তেমন। তারপরও ঢাকার মত দর্শক উপস্থিতি প্রবল হবে বলেই ভাবা হচ্ছে।
এআরবি/আইএইচএস/এমএস