আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৭২ রানের ইনিংসটিই সেরা : ইমরুল
ঠিক অপবাদ বলা যাবে না। তবে সমালোচকরা বলেন, ইমরুল সেঞ্চুরি করলে নাকি দল জেতে না। সেটা শুধু সমালোচকদের ভাষা নয়। ইতিহাস-পরিসংখ্যানও তাই বলে। একদিনের ক্রিকেটে আজকের আগে দুটি সেঞ্চুরি ছিল ইমরুল কায়েসের। প্রথমটি ২০১০ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ক্রাইস্টচার্চে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে (১৩৮ বলে ১০১)। আর ইমরুলের ব্যাট থেকে সর্বশেষ শতরানের ইনিংস (১১৯ বলে ১১২) বেরিয়ে এসেছিল ২০১৬ সালের ৭ অক্টোবর।
কাকতালীয়ভাবে দুটি শতকই গেছে ভেস্তে। দুই ম্যাচেই হেরেছে বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ডের কাছে ৩ উইকেটে আর ইংল্যান্ড হারিয়েছিল ২১ রানে। আজ সে ইতিহাস পাল্টেছে। এবার আর ইমরুল কায়েসের শতরান বিফলে যায়নি। দুই বছর পর সেই অক্টোবর মাসে ইমরুলের সেঞ্চুরিতে ঠিকই জিতেছে টাইগাররা।
ওয়ানডেতে সেঞ্চুরি করে দল জেতাতে না পারার আক্ষেপটা যে কারো জন্যই অনেক বড় হতাশার। আর তা যদি হয় পরপর দুইবার- তাহলে দুঃখবোধটা আরও বেশি হবার কথা। ইমরুলও এতকাল সে অতৃপ্তির জ্বালা বয়ে বেড়িয়েছেন। কারণ, আগের জোড়া সেঞ্চুরিতে দল না জেতার আক্ষেপের পাশাপাশি ম্যাচ সেরা না হতে পারার যন্ত্রনাও ছিল।
আজ একসঙ্গে দুই অতৃপ্তি ও অপ্রাপ্তিই কেটে গেল। অবশেষে তার সেঞ্চুরি কাজে দিয়েছে। দলের বিপদে, সংকট উত্তরণে বড় ভূমিকা রেখেছে। ১৪০ বলে খেলেছেন ১৪৪ রানের অনবদ্য এক ইনিংস। যৌথভাবে যা বাংলাদেশের হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। ইমরুল হয়েছেন ম্যাচ সেরা। খুব স্বাভাবিকভাবে উৎফুল্ল, আনন্দিত। রোববার রাতে খেলা শেষে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলার সময় তার চোখ মুখ বলে দিচ্ছিলো একটা অন্যরকম তৃপ্তি ও সন্তুষ্টি ভর করেছে ভিতরে।
তিন বারের চেষ্টায় সেঞ্চুরি করে দল জেতানো, আর ম্যাচ সেরার পুরষ্কারই শেষ কথা নয়। ইমরুলের ভাল লাগার আরও উপলক্ষ আছে। ১০ বছরের ক্যারিয়ারে ওঠা নামার পালা চলছে বেশ। কখনো খুব ভাল খেলেছেন। আবার কিছুদিন পর ফর্ম হারিয়ে না হয় ইনজুরির কারণে বাদ পড়েছেন। এইতো মাঝে দলেই ছিলেন না। এশিয়া কাপে শেষ মুহূর্তে দলে জায়গা পেয়েছিলেন।
বারবার বাদ পড়ে আবার দলে ফেরা- সহজ কর্ম নয়। কিভাবে নিজেকে ধরে রাখেন, বারবার বাদ পড়ে আবার দলে ফেরার রহস্য কি? ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এমন প্রশ্নর জবাবে ইমরুল বলেন, ‘আমার সঙ্গে অনেক খেলোয়াড়ের অভিষেক হয়েছে, যারা এখন দৃশ্যপটেই নেই। লক্ষ্য ঠিক রাখাটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সব সময়ই বিশ্বাস করি, আমার ক্যারিয়ার এত দ্রুত শেষ হতে পারে না। নিজেকে সে কারণেই তৈরি রাখি জাতীয় দলের জন্য। যেদিন আর জাতীয় দলে খেলার সুযোগ থাকবে না, নিজেই বলব ধন্যবাদ।’
বারবার কামব্যাক করা নিয়ে ইমরুল বলেন, ‘যখনই সুযোগ পাই, চেষ্টা করি ভালো করতে। সব সময়ই সুযোগের অপেক্ষায় থাকি। খেলোয়াড়দের জীবনে উত্থান-পতন থাকে। টানা ভালো খেলা কঠিন। আমার ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। আমি বাদ পড়লে, সে জায়গায় যে এসেছে ভালো খেলেছে বলে আমার আর প্রয়োজন হয়নি। যেহেতু দেশের হয়ে খেললে অনেক ভালো লাগে। আমি এ সুযোগের অপেক্ষায় থাকি।’
আগেই ওয়ানডে ক্রিকেটে একজোড়া শতরানের কথা বলা হয়েছে। এছাড়া ইমরুলের ক্রিকেট ক্যারিয়ারে পাকিস্তানের বিপক্ষে দারুন এক টেস্ট শতক আছে খুলনায়। প্রথম ইনিংসে ২৯০ প্লাস রানে পিছিয়ে পড়া অবস্থায় তামিম ইকবালের সাথে প্রথম উইকেটে ৩১২ রানের ম্যাচ বাঁচানো পার্টনারশিপ আছে। এছাড়া এবার এশিয়া কাপে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৭২ রানের ইনিংসটি দল জেতাতে রেখেছে কার্যকর অবদান। সেটাও অনভ্যস্ত পজিসন, ৬ নম্বরে ব্যাট করতে নেমে। ওপেনার হয়েও মিডল অর্ডারে ব্যাট করতে নেমে আফগানদের বিপক্ষে ওই ৭০ প্লাস ইনিংসটিই ইমরুলকে নতুন ভাবে চিনিয়েছে। দলেও জায়গা পাকা হয়েছে।
ইমরুলের ধারনা, তার পুরো ক্যারিয়ারে আফগানদের বিপক্ষে ৭২ রানের ইনিংসটিই সেরা। সেটা রানের আলোকে হয়ত নয়, এর চেয়ে অনেক বড় ইনিংস আছে তার; কিন্তু সামগ্রিক বিচার-বিশ্লেষণে তার মনে হয় এশিয়া কাপে আফগানদের সাথে খেলা ওই ৭২ রানের ইনিংসটিই তার ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংস।
ইমরুল মনে করেন, তার আজকের ব্যাটিংটাও ওই ইনিংসের ফসল। তার শেষ কথা, ‘আফগানিস্তানের বিপক্ষে ইনিংসটি আমার ক্যারিয়ারে এক নতুন মাত্রার সংযোজন ঘটিয়েছে। ওই ইনিংস আমাকে শিখিয়েছে, আমি আসলে কি করতে পারি না পারি। নিজের শক্তি-সামর্থ্য সম্পর্কে একটা সম্যক ধারণা জন্মেছে আমার। আমি বুঝতে শিখেছি, আসলে কি পারি, কতটা পারি। নিজের সামর্থ্যের প্রতি ধারনা প্রবল হওয়ার কারণেই আমি আজ এমন এক ইনিংস খেলতে পেরেছি।’
এআরবি/আইএইচএস