ফজলে রাব্বিকে দলে নেয়ার কারণ জানালেন হাবিবুল বাশার
দীর্ঘ প্রতিক্ষার পরে, প্রায় ১৫ বছর পর ঘরোয়া ক্রিকেট খেলে জাতীয় ক্রিকেট দলে ডাক পেয়েছেন ফজলে রাব্বি মাহমুদ। ত্রিশ বছর বয়সেও যে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলে ডাক পাওয়া যায় সে দৃষ্টান্তই স্থাপন করেছেন বাঁহাতি এ স্পিনিং অলরাউন্ডার। ক্রিকেটে তার এ যাত্রাটা সহজ ছিলো না কখনোই।
সহজ হতে যাচ্ছে না জাতীয় দলের যাত্রাটাও। কেননা তাকে যে নেয়া হয়েছে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের স্থানে। বাংলাদেশের টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক সাকিবের অভাব পূরণ করা সহজ কম্ম নয় মোটেও। সে কাজের দায়িত্বই এখন ঘরোয়া ক্রিকেট খেলে খেলে পুড়ে খাটি হওয়া ফজলে রাব্বির কাঁধে।
ঘরোয়া ক্রিকেটে ব্যাট করেন তিন নম্বর থেকে সাত নম্বর পর্যন্ত সব জায়গায়। বল নিয়ে হাতটাও ঘোরান নিয়মিতই। এ কারণেই মূলত তার কাছে ব্যাটিং-বোলিং উভয় সার্ভিসই চায় দল। শনিবার সাংবাদিকদের সাথে আলাপে এমনটাই জানিয়েছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচক প্যানেলের সদস্য ও সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার সুমন।
ফজলে রাব্বিকে একটি পরিপূর্ণ প্যাকেজ আখ্যা দিয়ে সুমন বলেন, ‘আমি তাঁকে অনেক আগেই দেখেছি। ওর ব্যাটিংটা এখন অনেক বদলে গেছে। আগে খুব অস্থির হয়ে ব্যাটিং করত, আগ্রাসী ব্যাটিং করত। কিন্তু ইদানীং আমি দেখছি (আয়ারল্যান্ড সিরিজ) সে দলের প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যাটিং করে থাকে। প্রান্ত বদল করে খেলে। একই সাথে যখন দরকার তখন বড় শট খেলার সামর্থ্য রাখে। সে এখন একজন পরিণত ব্যাটসম্যান। যেটা তাকে দলে নেয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছে। এছাড়াও সে একজন ভাল ফিল্ডার, সাথে স্পিন বল করতে পারে। সব মিলিয়ে আমাদের জন্য প্যাকেজ বলা চলে। একটু আলাদা লেগেছে, কারণ ওর খেলা আগে দেখেছি আর এখন সে অনেক বেশি পরিণত।’
জিম্বাবুয়ে সিরিজে সুযোগ পাওয়ার দৌড়ে শোনা যাচ্ছিলো মিজানুর রহমান, সাদমান ইসলাম অনিক ও ফজলে রাব্বির নাম। অন্য দুজনকে পেছনে ফেলে ওয়ানডেতে ডাক পেয়েছেন ফজলে রাব্বিই। তার মধ্যে এমন বিশেষ কি দেখেছেন নির্বাচকরা যে ত্রিশ বছর বয়সেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ডাকা হলো।
উত্তর শুনুন সুমনের কণ্ঠে, ‘ফজলে রাব্বির ক্যারিয়ারটা কিন্তু বেশ ইন্টারেস্টিং। সে পাঁচ ছয় বছর আগে আমাদের এইচপি স্কোয়াডে ছিল। তখন কিন্তু খুবই প্রমিসিং স্টার ছিল। তারপর অফ ফর্মে চলে গেল। কিন্তু শেষ তিন বছর ধরে সে অনেক বদলে গেছে। ওর খেলায় অনেক পরিবর্তন এসেছে। সে এখন অনেক পরিণত। এ দলের সফর গুলোতে দেখেছি, খুব ভাল ব্যাটিং করছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘হ্যাঁ, বয়সটা হয়তো একটু বেশি হয়ে গেছে, আমরা এমন খুব কম দেখি। কিন্তু ওর ফিটনেস খুব ভাল। সে একজন ফিট ক্রিকেটার, আর আমাদের একজন ব্যাটসম্যান দরকার ছিল, ঠিক সাকিব আল হাসানের মত না হলেও সে বোলিং করতে পারে। আমরা দেখেছি, ওর বোলিংটাও বেশ কার্যকরী। সেই বিবেচনায় এসেছে। আর আমার মনে হয় এখনকার প্রেক্ষাপটে ৩০ বছর খুব একটা বেশি না। শুরু করার জন্য হয়তো বেশি। কিন্তু এখন ওর সামনে অনেক বছর পড়ে আছে। আশা করি সে আমাদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে।’
ঘরোয়া ক্রিকেটে ফজলে রাব্বিকে নানা সময়ে দেখা গিয়েছে নানান ভূমিকায়। কখনো তিন নম্বরে দলের চাপ সামলানোর ভূমিকায়, আবার কখনো ছয়-সাত নম্বরে ধুমধাড়াক্কা ব্যাটিংয়ে ম্যাচ ফিনিশ করার দায়িত্বে। সাথে কার্যকরী বোলিংটা তাকে ক্রমেই পরিণত করেছে ঘরোয়া ক্রিকেটে গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটারে। তাহলে জাতীয় দলে তার দায়িত্ব বা ভূমিকা কি হবে?
এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়ক বলেন, ‘ওর শুরুটা হয়েছিল একজন ওপেনার হিসেবে। সেখান থেকে ৩ নম্বরে ব্যাট করেছে। এখন সে মিডল অর্ডারে অর্থাৎ পাঁচ-ছয়ে ব্যাট করছে। ‘এ’ দলের হয়ে সফর গুলোতে পাঁচ-ছয়ে ব্যাট করেছে সে, তবে তিন নম্বরে সে ব্যাট করতে পারে। ওর জন্য তিন থেকে পাঁচ-ছয়ের মধ্যে ব্যাট করা আদর্শ হবে। তবে জাতীয় দলে হয়তো মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলবে।’
এসএএস/আরআইপি