বাঁচা-মরার লড়াইয়ে ২৩৯ রানে থামল বাংলাদেশ
ফাইনাল খেলতে জিততেই হবে, হেরে গেলে ধরতে হবে বাড়ি ফেরার বিমান- এমন সমীকরণ মাথায় নিয়েই পাকিস্তানের বিপক্ষে অঘোষিত সেমিফাইনাল ম্যাচে খেলতে নেমেছিল বাংলাদেশ। টসে জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে অলআউট হয়েছে ১ ওভার বাকি থাকতেই, বোর্ডে জমা হয়েছে ২৩৯ রান।
টসের সময় অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা জানিয়েছিলেন ইনজুরির কারণে খেলতে পারবেন সাকিব আল হাসান, তার বদলে নেয়া হয় মুমিনুল হককে। বাদ দেয়া হয় আরেক বাঁ-হাতি স্পিনার নাজমুল ইসলাম অপুকে। ফলে শুরু থেকেই জানা ছিল একজন বিশেষজ্ঞ বোলার কম নিয়েই খেলছে বাংলাদেশ।
এমতাবস্থায় ব্যাটসম্যানদের কাঁধে ছিল বাড়তি দায়িত্ব। কিন্তু মুশফিকুর রহিম ও মোহাম্মদ মিঠুন ব্যতীত আর কেউই পারেননি নিজেদের দায়িত্ব পালন করতে। যার ফলে ২৩৯ রানেই থেমে গিয়েছে বাংলাদেশ দলের ইনিংস। মুশফিক পুড়েন ১ রানের জন্য সেঞ্চুরি মিসের হতাশায়, ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় হাফসেঞ্চুরিতে মিঠুন করেন ৬০ রান। ফাইনালে যেতে পাকিস্তানকে করতে হবে ২৪০ রান।
এর আগে টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে ইনিংসের প্রথম বলেই দারুণ ফ্লিক শটে দুই রান নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলেন লিটন কুমার দাস। কিন্তু সেটি আর ধরে রাখতে পারেননি সৌম্য। শাহীন শাহ আফ্রিদির করা দ্বিতীয় ওভারে কোনো রান নিতে পারেননি লিটন, মেইডেন পান শাহীন।
জুনায়েদ খানের করা তৃতীয় ওভারের পঞ্চম বলে বড় শট খেলতে যান সৌম্য। কিন্তু গড়বড় করেন টাইমিংয়ে, বল উঠে যায় আকাশে। স্কয়ার লেগে দাঁড়িয়ে লোপ্পা ক্যাচ নেন ফাখর জামান। প্রমোশন পেয়ে তিন নম্বরে ব্যাট করতে আসেন মুমিনুল হক।
পরের ওভারের চতুর্থ বলে শাহীন শাহ আফ্রিদিকে দুর্দান্ত এক ফ্লিক শটে ডিপ মিড উইকেট ও মিড অনের মাঝ দিয়ে ইনিংসের প্রথম বাউন্ডারি হাঁকান মুমিনুল। কিন্তু পরের বলেই ঘুরে দাঁড়ান শাহীন। অসাধারণ এক ডেলিভারিতে সরাসরি বোল্ড করেন মুমিনুলকে। ৪ বলে ৫ রান করে ফিরে যান তিনি।
পরের ওভারে সৌম্য-মুমিনুলের পথ অনুসরণ করেন লিটনও। জুনায়েদ খানের মিড স্টাম্পে পিচ করা বল নিখুঁত আউটসুইংয়ে ভেঙে দেয় লিটন দাসের অফস্টাম্প। ১৬ বল খেলে মাত্র ৬ রান করে সাজঘরে ফেরেন লিটন।
এশিয়া কাপ স্কোয়াডে মিঠুনের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল বেশ, সংশয় ছিল একাদশে তার জায়গা পাওয়া নিয়েও। সেই মোহাম্মদ মিঠুনই গুরুত্বপূর্ণ দুটি ম্যাচে হাঁকালেন ক্যারিয়ারের প্রথম দুটি ফিফটি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আসরের প্রথম ম্যাচে খেলেছিলেন ক্যারিয়ার সেরা ৬৩ রানের ইনিংস।
আর এবার পাকিস্তানের বিপক্ষে ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে করলেন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় পঞ্চাশ। মাত্র ১২ রানের মাথায় তৃতীয় উইকেটের পতনে উইকেটে আসেন মিঠুন। চতুর্থ উইকেটে মুশফিকুর রহিমের সাথে সামাল দেন প্রাথমিক ধাক্কা। গড়েন শতরানের জুটি।
শুরু থেকেই সাবধানী ভঙ্গিমায় খেলতে থাকেন মিঠুন। অপর প্রান্তে থাকা মুশফিককে দেন নির্ভরতার অভয়। ৬৬ বল খেলে মাত্র ৩ চারের মারে পূরণ করেন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ফিফটি। ইনিংসের ৩৪তম ওভারের চতুর্থ বলে পুল শট খেলতে গিয়ে বোলারের হাতেই ক্যাচ দিয়ে বসেন মিঠুন। থেমে যায় তার ৬০ রানের দায়িত্বশীল ইনিংস।
মোহাম্মদ মিঠুন ৬০ রান করে আউট হয়ে গেলেও সেঞ্চুরির পথেই ছিলেন মুশফিকুর রহীম। কিন্তু কত বড় দুর্ভাগ্য তার! মাত্র ১ রানের জন্য ক্যারিয়ারের ৬ষ্ঠ সেঞ্চুরিটা মিস হয়ে যায় মুশফিকের। ৯৯ রানে গিয়ে শাহীন আফ্রিদির দারুণ এক ডেলিভারিতে ব্যাটের কানায় লাগিয়ে উইকেটের পেছনে সরফরাজ আহমেদের হাতে ক্যাচ তুলে দেন মুশফিক। ফিরে যান একরাশ হতাশা নিয়ে।
বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে সেঞ্চুরির খুব কাছে গিয়ে আউট হওয়ার রেকর্ডটা এতদিন ধরে মুশফিকুর রহিমেরই দখলে ছিল। ২০০৯ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তিনি আউট হয়েছিলেন ৯৮ রান করে। এবার সে রেকর্ডটিকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিলেন তিনি। পাকিস্তানের বিপক্ষে এশিয়া কাপের বাঁচা-মরার লড়াইয়ে ফিরলেন ৯৯ রান করে।
দলীয় ১৯৭ রানের মাথায় মুশফিকের বিদায়ের পরই থেমে যায় রানের চাকা। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও মেহেদি হাসান মিরাজ চেষ্টা করলেও করতে পারেননি বেশি কিছু। ১১ বলে ১ চারের মারে ১২ রান করেন মিরাজ। আগের ম্যাচের জয়ের নায়ক মাহমুদউল্লাহ চেষ্টা করে যান ভালো কিছু করার।
কিন্তু তাকে থামতে হয় বড় শট খেলার তাড়নার কারণে। জুনায়েদ খানকে সজোরে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে বোল্ড হয়ে ফেরত যান মাহমুদউল্লাহ। ৩১ বল খেলে ১ চারের মারে ২৫ রান আসে তার ব্যাট থেকে। শেষ দিকে ইনিংসের প্রথম ছক্কা হাঁকান অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। তার ১৩ বলে ১৩ রানের ইনিংসে ২৩৯ রানে থামে বাংলাদেশ দলের ইনিংস।
পাকিস্তানের পক্ষে একাই চার উইকেট নেন জুনায়েদ খান। এছাড়া ২টি করে উইকেট নেন অন্য দুই পেসার শাহীন শাহ আফ্রিদি ও হাসান আলি।
এসএএস/জেআইএম