ভারতকে ১৭৪ রানের লক্ষ্য দিল বাংলাদেশ
টানা দুই দিন, দুই ভেন্যুতে দুই ম্যাচ। তারওপর, দলে নেই ওপেনার এবং সেরা ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল। প্রভাবটা বেশ ভালোভাবেই পড়েছে বাংলাদেশ দলের ওপর। আবুধাবিতে আফগানিস্তানের কাছে আগের দিন বিধ্বস্ত হওয়ার পর পরদিন দুবাইতে এসে ভারতের বিপক্ষেও একই অবস্থার পথে হাঁটছে বাংলাদেশ দল। দুবাইর ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ভারতকে মাত্র ১৭৪ রানের চ্যালেঞ্জ দিতে পারলো বাংলাদেশ।
টস জিতে বাংলাদেশকেই প্রথমে ব্যাট করার আমন্ত্রণ জানায় ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা। বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজাও বলেছিলেন, তারা যে করেই হোক চেয়েছিলেন প্রথমে ব্যাট করার। টস জিতে হোক কিংবা হেরে- বাংলাদেশ তো প্রথমেই ব্যাট করার সুযোগ পেয়েছে। কিন্তু ভারতীয় পেস কিংবা স্পিন- কোনো বোলারকেই ভালো খেলতে পারলো না সাকিব-মুশফিক-মাহমুদউল্লাহরা। যে কারণে শেষ পর্যন্ত ৫ বল বাকি থাকতেই ১৭৩ রানে অলআউট হয়ে গেলো বাংলাদেশ।
আফগানিস্তানের বিপক্ষেও বাংলাদেশের রান তোলার গড় ছিল খুবই স্লো। মাত্র ২.৮৩। ভারতের বিপক্ষে একটু উন্নতি হয়েছে। ৩.৫৩ করে। অথচ, টেস্টেও এর চেয়ে ভালো রান রেট থাকে। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের ব্যাটিং দেখে অনেকেই মনে করতে পারে, এটা বুঝি টেস্ট খেলা হচ্ছে! দুই ওপেনার লিটন কুমার দাস আর নাজমুল হোসেন শান্ত তো বরাবরের মতই ব্যর্থতার পরিচয় দিলেন। তামিমের ইনজুরির কারণে সুযোগ পাওয়া নাজমুল নিজেকে প্রমাণ করতে ব্যর্থ হলেন।
সাকিব আর মুশফিক- দু’জনই ভারতের সাজানো ফাঁদে সহজেই ধরা পড়েছেন। ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মার পরিবর্তে নেতৃত্বের ভুমিকায় এই ম্যাচেও বেশ সপ্রতিভ দেখা গেছে মহেন্দ্র সিং ধোনিকে। তার সেট করা ফিল্ডিংয়ের জারেই ধরা পড়েছিলেন সাকিব আর মুশফিক। এ দু’জনের দ্রুত বিদায় নেয়ার কারণেই বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের কোমর ভেঙে যায়। তবুও শেষ দিকে মেহেদী হাসান মিরাজ ৪২ এবং মাশরাফি ২৬ রান করে বাংলাদেশের রান ১৭০ পার করে দেন।
মূলতঃ রবীন্দ্র জাদেজাকেই ভালোভাবে খেলতে পারেনি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। তার ঘূর্ণিতেই একের পর এক উইকেট হারিয়েছে টাইগাররা। সঙ্গে উইকেট নেয়ার মিছিলে ছিলেন ভুবনেশ্বর কুমার এবং জসপ্রিত বুমরাহ। দু’জনই নেন ৩টি করে উইকেট।
টস হেরে ব্যাট করতে নেমে টানা ব্যর্থতারই মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশের ওপেনার লিটন কুমার দাস। শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান এবং সর্বশেষ ভারতের বিপক্ষেও দিলেন ব্যর্থতার পরিচয়। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তিনি আউট হয়েছিলেন কোনো রান না করেই। দ্বিতীয় ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে করলেন ৬ রান। ভারতের বিপক্ষে তার উন্নতি হলো মাত্র ১ রান। আজ তিনি ফিরলেন ৭ রান করে।
বলা যায় উইকেটটাই বিলিয়ে দিয়ে এলেন লিটন। আগের ম্যাচেও ঠিক একইভাবে আফগান পেসার আফতাব আলমের বলে লেগ বিফোর হয়ে ফিরে গিয়েছিলেন। এবার ভারতের বিপক্ষে রীতিমত উইকেট বিলিয়ে দিয়ে ফিরলেন লিটন। ভুবনেশ্বর কুমারের বলটা একটু বাউন্স হয়ে এসেছিল। লিটন সেটাকে করলেন পুল। আকাশে তুলে দিলেন বলটা। অবশেষে সেটা গিয়ে ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগে গিয়ে সোজা পড়লো কেদার যাদবের হাতে।
পরের ওভারেই স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফিরে গেলেন আরেক ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্ত। অভিষেকের পর দ্বিতীয় ম্যাচেও রীতিমত ব্যর্থতার পরিচয় দিলেন তিনি। তামিম ইকবালের ইনজুরির কারণে সুযোগ পেয়ে সেটাকে কাজেই লাগাতে পারলেন না শান্ত। প্রমাণ করতে পারলেন না, তিনি আগামীর তারকা হতে পারেন। ১৬ রানে পড়লো বাংলাদেশের দুই উইকেট।
সাকিব আল হাসান আর মুশফিকুর রহীম বিপর্যয় সামলে দিতে গিয়ে বেশিদুর এগুতে পারেননি। মাত্র ২৬ রান যোগ করেই ভাঙে এই জুটি। রবীন্দ্র জাদেজাকে পরপর দুটি বাউন্ডারি মেরে পরের বলেই আউট হলেন সাকিব আল হাসান। ইনিংসের ১০ম ওভারে, রবীন্দ্র জাদেজার (১ম ওভার) বলটিও ছিল মারার মত। কিন্তু সেটি যে একটি ফাঁদ, সেটাই বুঝতে পারলেন না সাকিব। আগের ডেলিভারির মতই ব্যাটিং করতে চাইলেন।
কিন্তু বলটা ছিল কিছুটা ভিন্ন প্রকৃতির। আউটসাইড অফের। কিছুটা সুইংও করেছিল। যে কারণে সরাসরি সুইপ শট খেলতে গেলেও বল উঠে গিয়েছিলো স্কয়ার লেগে। সেখানে দাঁড়ানো শিখর ধাওয়ানের ক্যাচটি নিতে কোনো বেগ পেতে হলো না। বাংলাদেশের বিপর্যয় বাড়িয়ে দিয়ে উইকেট বিলিয়ে এলেন সাকিব আল হাসান। ১২ বলে ১৭ রান করে ফিরে গেলেন সাকিব আল হাসান। ৪৩ রানে পড়লো তৃতীয় উইকেট।
৪৩ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর মুশফিক আর মোহাম্মদ মিঠুন মিলে চেষ্টা করছিলেন একটা জুটি গড়ে দলকে ভালো অবস্থানে পৌঁছে দেয়ার। কিন্তু এই জুটিতে ১৮ রান ওঠার পর জাদেজার এক ডেলিভারিতে বিতর্কিতভাবে আউট হয়ে যান মোহাম্মদ মিঠুন। তার বলে ব্যাট প্যাড হওয়ার পরও এলবিডব্লিউ আউট দেয়া হলো। ৬০ রানে পতন ঘটে চতুর্থ উইকেটের।
মুশফিকুর রহীমের ওপরই ছিল সব আশা-ভরসা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনিও হতাশ করলেন। রবীন্দ্র জাদেজার বলে সুইপ শট খেলতে গিয়ে শর্ট থার্ডম্যানে ক্যাচ দিয়ে বসলেন ইয়ুজবেন্দ্র চাহালের হাতে। ফলে মাত্র ২১ রান করেই ফিরতে হলো মুশফিককে। বাংলাদেশও পড়লো দারুণ বিপর্যয়ের মধ্যে।
৬৫ রানে ৫ উইকেট পড়ার পর বাংলাদেশের ইনিংসটাকে মেরামত করার দায়িত্ব নিয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ এবং মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। বাংলাদেশের শেষ ব্যাটিং জুটিও ছিল এটা। তারা দু’জন পারছিলেনও কিছুটা সফল হতে। ৩৬ রানের জুটি গড়েছিলেন মোসাদ্দেক-মাহমুদউল্লাহ।
কিন্তু এই জুটিকে বেশি টিকতে দিলেন না ভুবনেশ্বর কুমার। ভারতীয় স্পিনাররা যখন জুটি ভাঙতে পারছিলেন না, তখন ভুবনেশ্বরের হাতে বল তুলে দেয়া হয় এবং দারুণ এক ডেলিভারিতে লেগ বিফোর আউট করে তিনি ফিরিয়ে দেন মাহমুদউল্লাহকে। ৫১ বলে ২৫ রান করে ফিরে যান বাংলাদেশের মিডল অর্ডারে নির্ভরযোগ্য এই ব্যাটসম্যান।
রিয়াদ আউট হওয়ার পর টিকলেন না মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতও। দলের কঠিন মুহূর্তে যখন প্রয়োজন ছিল তখন মোসাদ্দেক আবারও ব্যর্থতার পরিচয় দিলেন। ৪৩ বল খেলে আউট হলেন ১২ রানে। ১০১ রানে পতন ঘটে ৭ম উইকেটের।
এরপর জুটি বাধেন মেহেদী হাসান মিরাজ এবং মাশরাফি বিন মর্তুজা। এ দু’জনের জুটিই ছিল বাংলাদেশের ইনিংসে সেরা। ৬৬ রানের জুটি গড়েন তারা দু’জন। ৩২ বল খেলে মাশরাফি করেন ২৬ রান। ২টি ছক্কার মারও মারেন তিনি। তবে ভুবনেশ্বর কুমারের বলে শর্ট ফাইন লেগে খেলতে গিয়েই ক্যাচ তুলে দেন জসপ্রিত বুমরাহর হাতে।
পরের ওভারেই উইকেট হারালেন ইনিংসে সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী মেহেদী হাসান মিরাজ। বুমরাহর বলে তিনি শিখর ধাওয়ানের হাতে ক্যাচ দেন ৪২ রান করে। ৫০ বলে ২টি বাউন্ডারি আর ২টি ছক্কার মারে এই রান করেন তিনি। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হন মোস্তাফিজুর রহমান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
টস : ভারত
বাংলাদেশ : ১৭৩/১০, ৪৯.১ ওভার (মেহেদী হাসান মিরাজ ৪২, মাশরাফি বিন মর্তুজা ২৬, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ২৫, মুশফিকুর রহীম ২১, সাকিব আল হাসান ১৭, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ১২, লিটন দাস ৭, শান্ত ৭, মিঠুন ৯, মুস্তাফিজ ৩, রুবেল হোসেন ১*; রবীন্দ্র জাদেজা ৪/২৯, জসপ্রিত বুমরাহ ৩/৩৭, ভুবনেশ্বর কুমার ৩/৩২)।
আইএইচএস/পিআর