‘ব্যাটসম্যান’ রশিদের ঝড়ে আফগানদের সংগ্রহ ২৫৫
রশিদ খান তো রীতিমত ব্যাটসম্যান হয়ে গেলেন। ১৬০ রানে ৭ উইকেট হারানোর পর ব্যাট করতে নামেন রশিদ খান। জুটি বাদেন গুলবাদিন নাইবের সঙ্গে। এই জুটিই ম্যাচটাকে বাংলাদেশের নাগালের বাইরে নিয়ে গেলো। বাংলাদেশকে শেষ পর্যন্ত দিলো ২৫৬ রানের লক্ষ্য। রশিদ আর নাইব- দু’জন মিলে ৫৭ বলে গড়েন ৯৫ রানের জুটি। শেষ ৫ ওভারে তারা তোলেন ৫৭ রান। শেষ ওভারে মাশরাফির কাছ থেকে রিলেন ১৯ রান।
রশিদ খান ৩১ বলে পূরণ করেন হাফ সেঞ্চুরি। শেষ পর্যন্ত তিনি অপরাজিত থাকেন ৫৭ রানে। ক্যারিয়ারে এ নিয়ে তিনটি হাফ সেঞ্চুরি রয়েছে রশিদের। সর্বোচ্চ রান অপরাজিত ৬০। গুলবাদিন নাইব করেন ৪২ রান। বাংলাদেশের পক্ষে ৪ উইকেট নেন সাকিব আল হাসান। আবু হায়দার রনি নেন ২ উইকেট।
বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে খরুচে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। আজ তিনি উইকেট তো নিতেই পারলেন না। উল্টো ৮ ওভার বল করে ৮.৩৭ ইকনোমি রেটে রান দিয়েছেন ৬৭টি। অভিষিক্ত আবু হায়দার রনি ৯ ওভার বল করে দিলেন ৫০ রান। একমাত্র সাকিব আল হাসানই ১০ ওভার পুরো বল করেন। ৪২ রান দিয়ে তিনি নেন ৪ উইকেট। সবচেয়ে সজার বিষয় হলো, মোট ৮ জন বোলার ব্যবহার করেছেন এই ম্যাচে মাশরাফি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আফগানদের অলআউট করা গেলো না।
শুরুতে ঝড় তুলেছিলেন আবু হায়দার রনি। তারপর সাকিব আল হাসান। আফগান ব্যাটসম্যানদের ওপর পেস আক্রমণের পর চলছিল স্পিন ঘূর্ণির তোপ। এ দু’জনের সঙ্গে উইকেট নেয়ার মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন রুবেল হোসেনও। তাতে ভালোই দিশেহারা হয়ে ওঠে আফগান ব্যাটিং লাইন আপ। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসে সব এলোমেলো করে দিয়েছেন রশিদ খান আর গুলবাদিন নাইব। তাদের ঝড়ো ব্যাটিংয়েই বাংলাদেশের সামনে চ্যালেঞ্জিং স্কোর দাঁড় করায় আফগানিস্তান।
ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই আফগানিস্তানের ওপেনার ইহসানুল্লাহকে ফিরিয়ে দিয়ে দারুণ এক ব্রেক থ্রু এনে দিয়েছিলেন অভিষিক্ত পেসার আবু হায়দার রনি। ইনিংসের ৬ষ্ঠ ওভারে এনেছিলেন দ্বিতীয় আঘাত। ফিরিয়ে দিয়েছিলেন আফগানদের আরেক ভয়ঙ্কর ব্যাটসম্যান রহমত শাহকে। এ সময় তাদের রান ছিল ২৮।
এরপরই তৃতীয় উইকেট জুটিতে ওপেনার মোহাম্মদ শাহজাদ এবং চার নম্বরে ব্যাট করতে নামা হাশমতউল্লাহ শহিদি। দু’জন মিলে ৫১ রানের দারুণ একটি জুটি গড়ে তোলেন। বাংলাদেশের কোনো বোলারকেই যেন পাত্তা দিচ্ছিলেন না তারা দু’জন। ধীরে ধীরে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছিলেন শাহজাদ এবং শহিদি।
ইনিংসের ২০তম ওভারে বাধ্য হয়ে সাকিব আল হাসানকে বোলিংয়ে নিয়ে আসলেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। বোলিংয়ে এসে প্রথম বল থেকে সমীহ আদায় করতে পারলেও দ্বিতীয় বলে খেলেন বাউন্ডারি। তৃতীয় বলেও মোহাম্মদ শাহজাদ উড়িয়ে মারেন সাকিবকে। কিন্তু দুর্ভাগ্য আফগান ওপেনারের। বাউন্ডারি লাইনে লাফ দিয়ে উঠে ক্যাচটি তালুবন্দী করে নেন আবু হায়দার রনি।
নিজের অভিষেকটাকে সব ধরনের রঙে রাঙিয়ে দেয়ার জন্যই যেন নেমেছেন রনি। শুরুতে দুই উইকেট নেয়ার পর গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ধরলেন দুর্দান্ত এক ক্যাচ। বাউন্ডারি লাইনের ওপর লাফ দিয়ে অনেক ওপরে ওঠে বলটি তিনি তালুবন্দী না করলে আফগানদের ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা জুটিটিরও হয়তো সমাপ্তি ঘটতো না। ৪৭ বলে ৩৭ রান করে ফিরে যান মোহাম্মদ শাহজাদ।
শাহজাদকে ফেরালেও হাশমতউল্লাহ শহিদির সঙ্গে ভালোই জুটি গড়ার ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন আফগান অধিনায়ক আসগর আফগান। তবে তাদের গড়া ২২ রানের জুটিকে আর বাড়তে দিলেন না সাকিব। এবারও তিনি আঘাত হানলেন এবং ফিরিয়ে দিলেন আফগান অধিনায়ককে। ৮ রান করে সাকিবের বলে বোল্ড হয়ে ফিরে যান আসগর। এ সময় আফগানদের রান ছিল ১০১।
হাশমতউল্লাহ শহিদি এরপর জুটি বাধেন সামিউল্লাহ সেনওয়ারির সঙ্গে। যাকে দলে নেয়া হয়েচে নজিবুল্লাহ জাদরানের পরিবর্তে। তিনি ৩৮ রানের জুটি গড়েন শহিদির সঙ্গে। ১৮ রান করার পর অবশেষে সাকিব আল হাসানের ঘূর্ণিতে বিভ্রান্ত হয়ে বোল্ড হয়ে যান। শেষ পর্যন্ত ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা হাশমতউল্লাহ শহিদিকে ফেরালেন রুবেল হোসেন। তার বলে কট বিহাইন্ড হয়ে ফিরে যান শহিদি। আউট হওয়ার আগে তিনি করেন ৫৮ রান।
এরপর মাঠে নেমে অবশ্য বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি মোহাম্মদ নবি। ১০ রান করার পর সাকিব আল হাসানের ঘূর্ণি ফাঁদে পড়ে এলবিডব্লিউ হয়ে যান তিনি। এরপরই ঝড় তোলেন রশিদ খান আর গুলবাদিন নাইব। গুলবাদিন ৪২ এবং রশিদ খান অপরাজিত থাকেন ৫৭ রানে।
আইএইচএস/জেআইএম