টাইগারদের এশিয়া কাপ : পথচলা থেকে প্রত্যাশা
চেনা প্রতিপক্ষ, অচেনা কন্ডিশন। প্রায় দুই যুগ পর আরব আমিরাতে বাংলাদেশ। শেষবার যখন সেখানে খেলে বাংলাদেশ তখন জন্মই হয়নি বর্তমান স্কোয়াডের মেহেদি মিরাজ, নাজমুল শান্ত ও মুস্তাফিজুর রহমানের! এমনকি পেশাদার ক্রিকেটে হাতেখড়িও হয়নি দলের বয়োজ্যেষ্ঠতম সদস্য মাশরাফি মর্তুজার।
১৯৯৫ সালে আরব আমিরাতে হওয়া সেই এশিয়া কাপ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পথচলা শুরু হয় মাশরাফি-সাকিবদের পূর্বসূরি হাবিবুল বাশার, খালেদ মাসুদ, মোহাম্মদ রফিকদের। বাংলাদেশের কাছে এশিয়া কাপ মানে তখন দীর্ঘদিন পর পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার সুযোগ। সেই এশিয়া কাপে একটি ম্যাচও জেতেনি বাংলাদেশ।
তবে মোহাম্মদ রফিক আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিজের পথচলা শুরু করেছিলেন শচীন টেন্ডুলকারকে সরাসরি বোল্ড করে, হাসিবুল হোসেন শান্ত ক্যারিয়ারের প্রথম উইকেট হিসেবে পেয়েছিলেন রোশান মহানামার উইকেটটি। এশিয়া কাপ বা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তখন বাংলাদেশ দলের কাছে সাফল্য বলতে ছিল এসব ব্যক্তিগত স্মৃতিগুলোই। দল হিসেবে ভালো খেলা শুরু হয়নি তখনো, আসতো না নিয়মিত জয়।
সময়ের হিসেবে পেরিয়েছে ২৩টি বছর আর ক্রিকেট মাঠে সফলতার হিসেবে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলও পাড়ি দিয়েছে লম্বা পথ। দুই যুগ আগে স্রেফ কোটা পূরণ করতে অংশ নেয়া সেই দলটাই এখন রীতিমতো ফেবারিট। কাগজে কলমে টুর্নামেন্টের তৃতীয় সেরা দল। সকলের প্রত্যাশা এবার মিটবে অধরা ট্রফির পিপাসা।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সফলতা পেলেও ওয়ানডে ফরম্যাটের এশিয়া কাপে বাংলাদেশের পরিসংখ্যানটা বেশ অনুজ্জ্বল। ২০১২ সালের এশিয়া কাপের ফাইনাল খেললেও সেবার ২ জয়ের বিপরীতে হারতেও হয়েছিল ২টি ম্যাচ। সবমিলিয়ে ওয়ানডে ফরম্যাটের এশিয়া কাপে খেলা ৩৭ ম্যাচে জয় মাত্র ৪টি। যার একটি ২০০৪ সালে হংকংয়ের বিপক্ষে, অন্যটি ২০০৮ সালে আরব আমিরাতের বিপক্ষে। এশিয়া কাপে আফগানিস্তানের বিপক্ষেও মেলেনি জয়।
২০১২ ও ২০১৬ সালের আসরে রানার-আপ হওয়ায় এবারে সকলের প্রত্যাশার পারদটা বেশ উচুঁই বলা চলে। তবে ২০১৬ সালে ছিল টি-২০ ফরম্যাটে এবং দুটি আসরই ছিলো ঘরের মাঠে চেনা কন্ডিশনে। কিন্তু এবার যে কন্ডিশন অচেনা। ওয়ানডে ফরম্যাটের সবশেষ আসরে (২০১৪ সালে) চেনা কন্ডিশনেও মুশফিক বাহিনী হেরেছিল সবগুলো ম্যাচ। সে তুলনায় এবারের চ্যালেঞ্জটা যে অনেক বেশি কঠিন।
আরব আমিরাতে খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে কেবল সাকিব, তামিম ও রিয়াদের (সাব্বিরও)। তবে সেটাও কুড়ি ওভারের বিনোদনমূলক ফরম্যাটে। ওয়ানডে ক্রিকেটে এবারই প্রথম আরব আমিরাতে খেলতে নামবে বাংলাদেশ। আসরের উদ্বোধনী দিনেই দুবাইয়ের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ।
ফেরা যাক লেখার প্রথম লাইনে। এশিয়ার বাকি সব দলের চেয়ে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেই সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। এমনকি এশিয়ার অন্য সব দলের চেয়ে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেই সবচেয়ে বেশি জয় টাইগারদের। পরিসংখ্যান বলছে তাদের বিপক্ষে ৪৪ দেখায় বাংলাদেশের জয় ৬টিতে, পরিত্যক্ত ২টি। শ্রীলঙ্কা দলের ব্যাপারে বাংলাদেশ দলের জ্ঞান ও ধারণা অনেক বেশি। তাই প্রথম ম্যাচের প্রতিপক্ষ নিয়ে চিন্তার কিছু নেই মাশরাফিদের।
কিন্তু ঝামেলা বাঁধাতে প্রস্তুত দুবাইয়ের কন্ডিশন। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে আরব দেশগুলোর স্বাভাবিক আবহাওয়ার মতোই দিনে বেশ গরম থাকে সেখানে, রাত নামতেই ঠাণ্ডা হয়ে আসে চারপাশ। দেখা মেলে শিশিরেরও।
এশিয়া কাপের ম্যাচগুলো শুরু হবে স্থানীয় সময় দুপুরে সাড়ে তিনটায়। ঘড়ি ধরে পাক্কা সাত ঘণ্টা খেলা হলে শেষ হবে রাত সাড়ে দশটায়। এদিক-ওদিক হলেও সাড়ে এগারোটার বেশি বাজার সুযোগ নেই। অর্থ্যাৎ রাতের শিশির নিয়েও ভাবতে হবে দলগুলোকে।
দুবাইয়ের কিউরেটরের মতে সেখানের পিচে গড় সংগ্রহ ২৬০ রান। তবে আইসিসির নীতি মেনে তারাও চেষ্টা করছে রান বাড়ানো পিচ বানাতে। যেখানে গড় সংগ্রহ হবে ২৮০-৩০০। উইকেট ও কন্ডিশন সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি জানান যে ম্যাচের শেষভাগে সুইং পাবেন বোলাররা, সন্ধ্যায় গ্রিপ করা নিয়ে টেনশন করতে হবে না স্পিনারদের আর ম্যাচজুড়েই বাড়তি কিছু থাকবে পেসারদের জন্য।
সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশ দল এমন মিশ্র চরিত্রের উইকেট বা কন্ডিশনে খেলেছে বলে মনে পড়ে না। যেখানে বাঁকে বাঁকে বদলাবে কন্ডিশন, বের হবে উইকেটের নতুন চরিত্র। এই প্রতিকূলতা পাড়ি দিয়েই মাশরাফি-সাকিবদের পৌঁছতে হবে লক্ষ্যে, জিততে হবে শিরোপা।
দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ জানিয়েছেন কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে সমস্যা হবে না দলের। উইকেটের চরিত্রটাও বুঝে নেবেন ঠিকঠাক। রিয়াদের কথার প্রতিফলন মাঠে ঘটলেই পাওয়া সম্ভব সফলতা।
কিন্তু যদি না ঘটে ঠিকঠাক প্রতিফলন? যদি মাঠে নিজেদের স্বাভাবিক খেলা খেলতে ব্যর্থ হন রিয়াদ-মুশফিকরা? যদি বিপক্ষে যায় ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো? এই যদিগুলোর উত্তর সকলেরই জানা, পরাজয়। কিন্তু পরাজয় দেখতে চায় না কেউ, কারো লক্ষ্য নয় পরাজিত হওয়া। তবে প্রস্তুত থাকতে হয় মুদ্রার দু' পিঠের জন্যই। ফলাফল পক্ষে না এলে চুপসে যাবে আশার বেলুনটা, নেমে যাবে প্রত্যাশার পারদটাও।
তাই জয়-পরাজয় যাই আসুক না কেন দলের কাছে চাওয়া ইতিবাচক ক্রিকেট ও মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ মনোভাব। এই শর্ত পূরণ হওয়ার পর ফলাফল যাই আসুক না কেন তা সাদরে গ্রহণ করে নেবে বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা।
এসএএস/এমএস