তামিম-সাকিবের চোট নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু দেখছেন না নান্নু-দেবাশীষ
তারা ‘পঞ্চ পান্ডবের’ দুই অন্যতম সদস্য এবং টিম বাংলাদেশের প্রধান চালিকাশক্তি। স্বাভাবিকভাবেই কোনো সিরিজ বা টুর্নামেন্টে তাদের দলে থাকা এবং খেলতে পারার ওপর বাংলাদেশের সাফল্য-ব্যর্থতার একটা বড় অংশ নির্ভর করে। তাই ভক্ত-সমর্থকরা সব সময়ই কায়মনে চান, তামিম ইকবাল ও সাকিব আল হাসান ইনজুরিমুক্ত হয়ে দলে থাকুক এবং সামর্থ্যের সেরাটা দিয়েই পারফর্ম করুক।
কিন্তু টাইগাররা এশিয়া কাপ খেলতে যাবার আগে সেই সমর্থকদের মনের আকাশে হঠাৎ কালো মেঘ। কারো কারো মনে রাজ্যের সংশয়, সন্দেহ- আচ্ছা, তামিম - সাকিব কি এশিয়া কাপ খেলার মত ফিট? এশীয় ক্রিকেটের শ্রেষ্ঠত্বের আসরে টিম বাংলাদেশ কি ঐ দুই অতি নির্ভরযোগ্য এবং অপরিহার্য্য সদস্যের সার্ভিস পাবে ?
একটি ইংরেজী জাতীয় দৈনিকে সাক্ষাতকারে সাকিব ২০-৩০ ভাগ ফিট থাকার কথা বলায় অমন প্রশ্নর উদ্রেক ঘটেছে। ভক্ত ও সমর্থকদের মনে সংশয় নানা প্রশ্ন উঁকি ঝুকি দিচ্ছে।
অন্যদিকে ডান হাতের অনামিকায় হঠাৎ ব্যথা তামিম ইকবালের খেলা নিয়েও সংশয়ের জন্ম দিয়েছে। আসলে এই দুই শীর্ষ তারকার সত্যিকার অবস্থা কি? সাকিব আসলে কতটা ফিট? তার ফিটনেস নিয়ে কি কতটা সংশয় আছে? আর তামিমের আঙুলের ব্যথারই বা সর্বশেষ অবস্থা কি? তা জানতে কৌতুহলের শেষ নেই।
এদিকে এশিয়া কাপ খেলতে যাবার সময়ও ঘনিয়ে এসেছে। আগামীকাল আরব আমিরাতের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবে মাশরাফির দল। তাই ২৪ ঘন্টা আগে দুশ্চিন্তাটা আরও প্রবল হয়েছে।
সাকিব কি সময়মতো দলের সাথে মিলিত হবেন, নাকি বিশ্রামে কাটিয়ে চিকিৎসক ও টিম ম্যানেজমেন্টের সাথে কথা বলে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরব আমিরাত আসবেন? তামিম কি দলের সাথে যাবেন? নাকি কদিন দেখে আঙুলের ব্যথা কমলে তারপর দুবাই যাবেন? এসব প্রশ্ন কিন্তু ডালপালা গজাচ্ছে।
যে সব ভক্ত ও সমর্থক প্রিয় তারকাদের ফিটনেস এবং চোট নিয়ে চিন্তিত, রীতিমত তাদের এশিয়া কাপ খেলা নিয়ে শঙ্কায়; তাদের আশ্বস্ত হবার খবর আছে। ভক্ত ও সমর্থকদের সে উদ্বেগ, উৎকন্ঠা ও কৌতুহল মেটাতেই জাগো নিউজের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়েছিল। তাদের দুজনার কথা বার্তা ও শরীরি অভিব্যক্তি অনেকটাই নির্ভার।
প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নুর আত্মবিশ্বাসী উচ্চারণ, ‘না না, তামিম ও সাকিবের কারো খেলা নিয়েই সংশয় নেই। আমাদের কাছে এমন কোন খবর নেই, যা শঙ্কার কারণ হতে পারে। সাধারণতঃ কোন ক্রিকেটারের ইনজুরি বা সমস্যা থাকলে তা ফিজিওর মাধ্যমে আমাদের কাছে আসে। অামরা তখন অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেই। ফিটনেসে ঘাটতি থাকলে কিংবা ইনজুুরি হলে তা পরিমাপের চেষ্টা করা হয়। ফিটনেস ঘাটতি কতটা কিংবা ইনজুরির মাত্রাই বা কেমন, তা নিরুপণের পরই আসরা করণীয় স্থির করি। কিন্তু এ ক্ষেত্রে অমাদের কাছে সে অর্থে কোনই নেতিবাচক খবর নেই।’
তিনি যোগ করেন, ‘সাকিবের ফিটনেস নিয়ে যে খবর চাওর হয়েছে এবং তা কেন্দ্র করে ভক্ত ও সমর্থকদের মনে যে সংশয়-সন্দেহর কালো মেঘ জন্মেছে ,আমার জানা মতে তা ভিত্তিহীন। অমূলক। সাকিব নিজে আমাদের কাছে তার ফিটনেস নিয়ে কোন অভিযোগ করেনি। ফিজিও, ট্রেনার, কোচ এবং বিসিবির চিকিৎসক কারো কাছেই সাকিব বলেনি যে, তার ফিটনেসে ঘাটতি আছে। বলেনি সে মাত্র ২০-৩০ ভাগ ফিট। যেহেতু তার ফিটনেস নিয়ে সাকিব টিম ম্যানেজমেন্টের কাছে কোন অভিযোগ করেনি, তাই আমরা ধরেই নিয়েছি সে সম্পূর্ণ ফিট। আর যদি কোনো ঘাটতি থেকেও থাকে, সেটাও বড় কিছু নয়।’
তামিম ইকবালের ডান হাতের অনামিকায় ব্যথা প্রসঙ্গে প্রধান নির্বাচকের ব্যাখ্যা, ‘আমরা জানি নাজমুল হোসেন শান্তর সাথে তামিম ইকবালেরও হাতের আঙুলে ব্যথা আছে। তাই তো আমরা শেষ মূহুর্তে মুুমিনুলকে ব্যাকআপ হিসেবে দলে নিয়েছি। তারপরও আমার মনে হয় না, তামিমের সমস্যা তেমন গুরুতর কিছু। আশা করছি তা কমে যাবে এবং তামিম ঠিক খেলতে পারবে।’
এদিকে আজ দুপুরে জাগো নিউজের সাথে আলাপে বিসিবির প্রধান চিকিৎসক দেবাশীষ চৌধুরীও কোনোরকম সংশয়-শঙ্কার কথা শোনাননি। বরং তাকেও তামিম ও সাকিব ইস্যুতে বেশ ইতিবাচক মনে হয়েছে।
ডা. দেবাশীষ বলেন, ‘আমরা জানি ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে সাকিব শতভাগ ফিট ছিল না। হাতে সমস্যা ছিল। কিন্তু বাস্তবতা হলো, পুরোপুরি ফিট না হয়েও সাকিব ওয়েস্ট ইন্ডিজে বেশ ভালো পারফর্ম করেছে। দলের সাফল্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদানও রেখেছে। তারপর প্রায় এক মাস সময় কেটে গেছে। সাকিব বিশ্রামেই ছিল। যেহেতু আর খেলেনি এবং প্র্যাকটিসও করেনি; মোটামুটি বিশ্রাম পেয়েছে। তাই আমার তো মনে হয়, তার ঐ সমস্যা পুরোপুুরি ভালো না হলেও ফিটনেস লেভেল আরও ভালো হবার কথা। আমার মনে হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের চেয়ে এশিয়া কাপে আমরা আরও ফিট সাকিবকে দেখবো।’
বিসিবির প্রধান চিকিৎসক যোগ করেন, ‘আর সত্যিই যদি সাকিবের ফিটনেসে বড় ধরণের ঘাটতি থাকতো , তাহলে আমরা জানতাম। কিন্তু সাকিব আমাদেরকে নিজের আঙুলের ব্যাথা ও ফিটনেস নিয়ে কোনো কথাই বলেনি। 'আমার ব্যথা আরও বেড়েছে। ফিটনেস কমেছে'- এমন কোনো অভিযোগও করেনি। করলে অবশ্যই আমরা জানতাম। আমরা তা নিয়ে আলাপ আলোচনা করে সম্ভাব্য করণীয় স্থির করে ফেলতাম। কিন্তু অমন কোন খবর আমাদের কাছে নেই। ঘুরিয়ে বললে সাকিবের পক্ষ থেকে আমাদের ফিটনেসে ঘাটতির কোনো কথা বলা হয়নি। তাই আমি সাকিবের ফিটনেস নিয়ে চিন্তার কিছু দেখছি না।’
তামিমের আঙুলের ব্যথা প্রসঙ্গে ডা. দেবাশীষ বলেন, ‘হ্যাঁ, তামিমের ডান হাতের অনামিকায় (রিং ফিঙ্গারে) ব্যথা আছে। সে কারণেই তাকে বিশ্রাম দেয়া হয়েছে। আমার বিশ্বাস তার ব্যথা কমে যাবে। এবং আশা করছি তামিম ঠিকই এশিয়া কাপ খেলতে পারবে। একই কথা প্রযোজ্য নাজমুল হোসেন শান্তর ব্যাপারেও। তারও ব্যথা আছে এখনো। তবে মনে হয় সময়ের সাথে সাথে তা কমতে থাকবে।’
আগেই জানা, হজব্রত পালনের পর দেশে ফিরে আবার ২৪ ঘন্টার মধ্যে স্ত্রী ও কন্যার সাথে সময় কাটাতে যুক্তরাষ্ট্র চলে গেছেন সাকিব। সেখান থেকে সরাসরি আরব আমিরাতে দলের সাথে মিলিত হবার কথা বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের। আগামীকাল জাতীয় দলের বহর আরব আমিরাত যাবার কয়েক ঘন্টার মধ্যে সাকিবও চলে আসবেন বলে জানা গেছে।
এআরবি/এমএমআর/এমএস