‘সাব্বির অনুতপ্ত, অনেক কিছু স্বীকার করেছেন’
আবার ক্রিকেট মাঠ থেকে নিষিদ্ধ সাব্বির রহমান রুম্মন। তবে এবার আর ঘরোয়া ক্রিকেট থেকে নয়। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন অনুমোদন দিলে কাল থেকেই পরবর্তী ছয় মাসের জন্য কোনো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে পারবেন না সাব্বির।
বিসিবির ডিসিপ্লিনারি কমিটি তার সাথে কথা বলে এবং অঘোষিত ও অনানুষ্ঠানিক শুনানি শেষে আজ এ শাস্তির সুপারিশ করেছে। সে খবর এখন চাওর হয়ে গেছে। তবে কেন, কি কারণে সাব্বিরের বিপক্ষে এ সিদ্ধান্ত? ডিসিপ্লিনারি কমিটি সাব্বিরের কাছে কি ব্যাখ্যা দাবি করেছে? সাব্বির ডিসিপ্লিনারি কমিটির মুখোমুখি হয়ে কি বলেছেন? জানতে কৌতূহলের শেষ নেই।
ডিসিপ্লিনারি কমিটির অন্যতম সদস্য ইসমাইল হায়দার মল্লিক এ সম্পর্কে বলেন, ‘সাব্বির অনুতপ্ত। সে ভবিষ্যতে এ রকম কিছু না করার প্রতিজ্ঞা করেছে। সে অনেক কিছু স্বীকারও করেছে।’
এ বছরের শুরুতে সাব্বিরকে শাস্তি দেয়া হয়েছিলো। তখনো ছয় মাস সাসপেন্ড করা হয়েছিল। এবারো তাই। পার্থক্য একটাই, আগে ঘরোয়া ক্রিকেটে নিষিদ্ধ ছিলেন সাব্বির। এবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে। একই ক্রিকেটার একই বছর দ্বিতীয়বারের মতো শৃঙ্খলাবিরোধী কাজে লিপ্ত থাকার পরও একই মেয়াদের শাস্তি। এ শাস্তিটা কি একটু কম নয়?
মিডিয়ার কাছ থেকে এমন প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে মল্লিক জবাবে বলেন, ‘কম কীভাবে হয়! ছয় মাস আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ। প্রতিটি খেলোয়াড়ের স্বপ্ন থাকে। সে কিন্তু এখনও ঘরোয়া ক্রিকেট খেলতে পারেনি (আগের শাস্তির কারণে)। সম্প্রতি ফেসবুকের একটা ঘটনার কারণে তাকে ডাকা হয়েছে। এটা কিন্তু অন্য কোনো কারণ নয়। সেখানে সে বলেছে, তার অ্যাকাউন্ট হ্যাক করা হয়েছিল।’
মল্লিক আরও জানান, তারা সাব্বিরের যাবতীয় কার্যকলাপকে পর্যবেক্ষণ করেছেন। এবং তাকে সতর্ক করা হয়েছে। এই সুপারিশ বোর্ড প্রেসিডেন্টকে পাঠানো হবে। তিনি অনুমোদন দিলে আগামীকাল থেকেই এটি কার্যকর হবে।
এবার ছয় মাসের সাজাটা কিসের উপর ভিত্তি করে, ফেসবুকের জন্যই কি? মল্লিকের জবাব, ‘হ্যাঁ। এ কারণেই। তার আগের নানা কারণের জন্য শাস্তি তো তাকে দেয়াই হয়েছিল। এটা নতুন ঘটনার কারণে। যদিও সে বলেছে আইডি হ্যাক হয়েছিল। বাকি কার্যকলাপের বিষয়ে সে কিছু স্বীকার করেছে। ওই বিষয়ে তাকে নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে।’
মল্লিক জানিয়েছেন, সাব্বিরকে বলে দেয়া হয়েছে, ভবিষ্যতে এমন কিছু ঘটলে আরও দীর্ঘমেয়াদে নিষিদ্ধ হবেন। তার ভাষায়, ‘এতদিন তার শাস্তি ছিল আর্থিক জরিমানা ও ছয় মাস নিষিদ্ধ। এর চেয়ে বড় শাস্তি হলো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিষিদ্ধ। এর সাথে বলা হয়েছে, ভবিষ্যতে এ রকম কিছু ঘটলে তাকে বড় শাস্তি দেয়া হবে। হয়তো তাকে দীর্ঘ মেয়াদে নিষিদ্ধ করা হতে পারে।’
কেউ কেউ মনে করেন, আগের শাস্তিগুলো বড় হলে সাব্বির নিজেকে শোধরাতে পারতেন। এই বিষয়ে মল্লিকের যুক্তি, ‘আগের শাস্তিতে আমরা হিসেবে করে দেখেছি, সে হয়তো দেড় কোটি টাকার শাস্তি পেয়েছে। কেউ নিজেকে শোধরায়, কেউ শোধরায় না। একটা কথা বলতে পারি, বোর্ড সভাপতি পরিষ্কারভাবে বলে দিয়েছেন, শৃঙ্খলা ভঙ্গের শাস্তি কঠোর হবে। যে শাস্তিগুলো দেয়া হচ্ছে, তা বোর্ডের আলোচনার আলোকে।’
সাব্বিরের আসলে সমস্যাটা কোথায়? বারবার কেন একই ভুল করছেন? মল্লিক মনে করছেন, সমস্যাটা সম্ভবত বন্ধু-বান্ধবের। এ নিয়ে তিনি বলেন, ‘গাইডেন্সের কথা বলব। বন্ধু-বান্ধব যাদের সাথে চলে, তাদের কারণে হতে পারে। বোর্ড প্রধান কঠোর হওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন। ভবিষ্যতে আরো কড়া শাস্তি দেয়া হতে পারে। তখন হয়তো ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও সে দীর্ঘ মেয়াদে নিষিদ্ধ থাকতে পারে।’
স্ত্রীর যৌতুক মামলায় ঝামেলায় পড়েছেন আরেক ক্রিকেটার মোসাদ্দেক হোসেন। তার ব্যাপারে কি সিদ্ধান্ত হলো? এমন প্রশ্নে মল্লিক বলেন, ‘ওটা পারিবারিক মামলা। বিচার-বিবেচনা করে আমরা তাকে নির্দেশনা দিয়েছি। তাকে সাবধান করা হয়েছে। ভবিষ্যতে সে যাতে নিজেকে সংযত করে চলে, এ বিষয়ে বলা হয়েছে। এটা যেহেতু বিচারাধীন বিষয়। কোর্ট থেকে যা বলা হবে, সেটাই তার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।’
এআরবি/এমএমআর/জেআইএম