দরকারের সময় কোচের দেশে থাকা নিশ্চিত করতে চায় বিসিবি
চন্ডিকা হাথুরুসিংহের কোচিংয়ে আয়-উন্নতি হয়েছে কতটা? তা নিয়ে বড় ধরণের বিতর্ক হতেই পারে। সেটা বিচার-বিশ্লেষণ, ব্যাখ্যা ও পর্যালোচনা সাপেক্ষে। তবে ইতিহাস-পরিসংখ্যান না ঘেঁটেই বলে দেয়া যায়, হাথুরুসিংহের আমলে বাংলাদেশের জয়ের সংখ্যা অনেক বেশি। সাফল্যের পাল্লাও ভারি।
হাথুরুর কোচিংয়ে এমন কটি নজরকাড়া ও বড় সাফল্য অর্জিত হয়েছে, যা আগে কখনই ছিল না। কাজেই ভাবা হয় এ লঙ্কানই বাংলাদেশের সফলতম কোচ; কিন্তু চাঁদের যেমন কলঙ্ক থাকে, একইভাবে হাথুরুরও কিছু বিষয় ছিল ভীষণ দৃষ্টিকটু।
ছুট নেয়ার বিষয়ে আর যে কোন কোচের চেয়ে অনেক বেশি স্বাধীনতা ভোগ করেছেন ওই লঙ্কান। সবচেয়ে বেশি সময় ও বছরে অনেক বেশি ছুটি উপভোগ করেছেন হাথুরু।
প্রায় চার বছরের কোচিংয়ে তিনি কখনোই বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেট দেখেননি। দেখার প্রয়োজনও মনে করেননি। প্রিমিয়ার লিগ, জাতীয় লিগ, বিসিএল এমনকি বিপিএল চলাকালীনও কখনো বাংলাদেশে ছিলেন না। ছুটি কাটিয়েছেন।
নতুন কোচ স্টিভ রোডসও কি তাই করবেন? হাথুরুর পথেই হাটবেন? হাথুরুসিংহেকে ছুটি কাটানোর ব্যাপারে কোন শর্ত জুড়ে দিতে পারেনি বিসিবি। বরং তাকে ইচ্ছেমত ছুটি ভোগ করার পরোক্ষ সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। তাকে কখনো বলা হয়নি, ‘আপনি এত বেশি সময় ছুটি কাটাতে পারবেন না।’ কারণ, তার সাথে চুক্তির সময় ওই বিষয়গুলো পরিষ্কার করা হয়নি।
হাথুরুর বেধে দেয়া শর্তে রাজি হওয়ার কারণে তাকে বছরের বেশিরভাগ সময় ছুটি কাটানো থেকে নিবৃত্ত রাখাও সম্ভব হয়নি। তাতে করে হাতে গোনা অল্প কিছু ক্রিকেটার ছাড়া আর কারো সম্পর্কে তেমন ধারণাই জন্মায়নি তার। তিন ফরম্যাটে ঘুরে-ফিরে যে ২২/২৩ জন ক্রিকেটার খেলেছেন ও দলে জায়গা পেয়েছেন, তার বাইরেও যে কোয়ালিটি ক্রিকেটার আছে, তারাও যে জাতীয় দলে খেলার সামর্থ্য রাখে- ঘরোয়া ক্রিকেট না দেখায় হাথুরুসিংহের সে ধারণাই ছিল না।
দুঃখজনক হলেও সত্য, বিসিবিই তাকে সে সুযোগ করে দিয়েছিল। কোচের সাথে চুক্তি করার সময় হাথুরুকে অনেক বেশি ছাড় ও বাড়তি সুবিধা দিয়ে ফেলা হয়েছিল। এখন প্রশ্ন উঠেছে, নতুন কোচ স্টিভ রোডসও কি তেমন স্বাধীনতা ভোগ করবেন? তাকেও কি তেমন স্বাধীনতা দেয়া হবে? তিনিও কি ঘরোয়া ক্রিকেট না দেখে ছুটিতে দেশে ফিরে যাবেন? এ নিয়ে সচেতন ক্রিকেট অনুরাগীদের মনে নানা ক্যৌতুহলি প্রশ্ন।
আজ বিকেলে বোর্ড পরিচালক ও বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল চেয়ারম্যান আফজালুর রহমান সিনহার স্মরণে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে অংশ নিতে এসে উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে এমন প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছিলেন বিসিবি সভাপতি।
জবাবে অনেক কথার ভীড়ে, তিনি বোঝানোর চেষ্টা করেন, স্টিভ রোডসকে ছুটি-ছাটা দেয়ার ব্যাপারে বোর্ড আরও বেশি সচেতন। সতর্ক ও সাবধনতা অবলম্বন করবে। দেশের ক্রিকেটের দরকারের সময় যাতে তাকে পাওয়া যায়, সে বিষয়ে আরও সচেতন থাকবে।
পাপন বলেন, ‘আগের কোচের সাথে এখন যে খুব একটা পার্থক্য হবে তা কিন্তু নয়। ছুটি বাড়তেও পারে, সেটাও নিশ্চিত নয়; কিন্তু আমাদের দরকারের সময় থাকতে হবে। গত চুক্তিতে দেখেছি, আমাদের দরকারের সময় কেউ ছিল না। এবার সেটা হওয়ার কোন সুযোগ নেই। আমরা নিশ্চিত করব, আমাদের যখন দরকার তখন যেন কোচ দলের সাথে থাকে।’
স্টিভ রোডস শুরু থেকেই কিছু নির্দিষ্ট সংখ্যক ক্রিকেটারের ওপর নির্ভরশীল না থেকে আরও কিছু ক্রিকেটারকে পরখ করে দেখতে চাইছেন। এ প্রবণতা ও ইচ্ছের প্রশংসা করেন বিসিবি সভাপতি। নতুন কোচ সবে দায়িত্ব নিয়ে প্রথম অ্যাসাইনমেন্ট সেরে এসেছেন। তাই তার ধারণা এখনো অস্পষ্ট। তা জানিয়ে বিসিবি প্রধান বলেন, ‘নতুন কোচ এখন কারো সম্পর্কেই তেমন একটা জানেন না। সামনা-সামনি তিনি অনেককেই দেখেননি। তিনি ওয়েস্ট ইন্ডিজে আমাদের প্লেয়ারদের কাছ থেকে অনেক নাম শুনেছেন। এবার কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে বোর্ডের পক্ষ থেকে তেমন কেউ দলের সাথে ছিল না। বোর্ডের কোন পরিচালক ছিল না, ম্যানেজার হিসেবে সুজন যায়, তিনিও ছিলেন না। সেই হিসেবে তার যতটুকু ধারণা নেয়া সম্ভব সেটা তিনি নিয়েছেন এর-ওর কাছ থেকে শুনে। এরপর ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেকে ঢাকা এসে তিনি (স্টিভ রোডস) আমাদের সাথে কথা বলেছেন। নির্বাচকদের সাথে বসেছেন। স্বভাবতই তিনি নতুন নতুন মুখ দেখতে চাইবেন। সে যেহেতু এখন পর্যন্ত পুরোপুরি দেখেননি, তাই সে আমাদের কাছে ৩০ সদস্যের একটা দল চেয়েছেন। সবচেয়ে ভালো দিক হচ্ছে সে আয়ারল্যান্ডে খেলা দেখতেও চলে গেছে। সুতরাং তার সেই আগ্রহটা তার মধ্যে আছে।’
এআরবি/আইএইচএস/পিআর