আড়ালেই রইলেন ‘বিপদের বন্ধু’ মাহমুদউল্লাহ
১১ বছরের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে সেঞ্চুরি হাকিয়েছেন তিন বার। পাদপ্রদীপের আলোতেও আসতে পেরেছেন অই তিনবারই। এর মধ্যে আবার এক সেঞ্চুরিতে ম্যাচ হারায় আনুষ্ঠানিকভাবে নায়ক ছিলেন না। ক্যারিয়ারের বাকি সময়টা তিনি কাটিয়ে দিয়েছেন পার্শ্ব-নায়ক, নায়কের বন্ধু বা নিজের চিরায়ত 'বিপদের বন্ধু' খেতাব নিয়েই।
যার ব্যত্যয় ঘটেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সদ্য সমাপ্ত ওয়ানডে সিরিজেও। সিরিজ নির্ধারনী শেষ ম্যাচেও খেলেছেন ইনিংসের গতিপথ বদলে দেয়া ইনিংস। অপরাজিত থেকে দলকে নিয়ে গেছেন জেতার মতো সংগ্রহে। তবু চাপা পড়েছেন ব্যাটসম্যান তামিম কিংবা বোলার রুবেলের উজ্জ্বলতায়। পাননি যথাযথ পাদ প্রদীপের আলো।
বলছিলাম মিডলঅর্ডার ব্যাটসম্যান মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের কথা। আরো অনেকবারের ন্যায় আবারো আড়ালেই পড়ে গিয়েছেন শেষ ম্যাচের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় রিয়াদ। মিডলঅর্ডারে ব্যাট করতে নেমে খেলেছেন একদম শেষ পর্যন্ত। ৪৯ বলের ইনিংসে রান করেছেন ৬৭। ইনিংস সাজিয়েছেন ৫ চার ও ৩ ছক্কার মারে।
এটুকুতে বোঝা সম্ভব নয় রিয়াদের ইনিংসের গুরুত্ব বা মাহাত্ম্য। ইনিংসের ৩২তম ওভারে তিনি যখন ব্যাটিংয়ে নামেন তখন বাংলাদেশের রান ৩ উইকেটে ১৫২। অপরাজিত থেকে তিনি মাঠ ছাড়ার সময় বাকি ১৯ ওভারে আরও ১৪৯ রান পায় বাংলাদেশ। মোট দলীয় সংগ্রহ দাঁড়ায় ৬ উইকেটে ৩০১ রান।
শুরু থেকে বেশ ধীরগতিতে খেলতে থাকা তামিম ইকবাল চতুর্থ উইকেট জুটিতে রিয়াদকে পেয়েই হাত খুলে খেলতে শুরু করেন। জোড়া চার মেরে কাটান জড়তা, নড়বড় নব্বইতে ঢুকে মারেন বিশাল এক ছক্কা। মাত্র ৪৬ বলেই ৫১ রানের জুটি গড়ে ফেলেন রিয়াদ ও তামিম।
দলীয় ২০৩ রানের মাথায় তামিমের বিদায়ের পরেই মূল পরীক্ষায় পড়তে হয় রিয়াদকে। আচমকা সিদ্ধান্তে ছয় নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে যান অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। মাশরাফির সাথে জুটি গড়তেও পারদর্শিতা দেখান রিয়াদ। উইকেটের চার পাশে ব্যাট ঘুরিয়ে অধিনায়ক যখন দ্রুত রান তুলছিলেন তখন এক প্রান্ত আগলে রেখে মাশরাফিকে নির্ভরতা দিচ্ছিলেন রিয়াদই।
পঞ্চম উইকেট এই জুটিতে মাত্র ৪২ বলে ৫৩ রান পায় বাংলাদেশ। যেখানে রিয়াদের অবদান ১৭ বলে ১৭ রান। সিঙ্গেল নিয়ে নিয়ে তিনি খেলাচ্ছিলেন অধিনায়ককে। অধিনায়ক মাশরাফিও ২৫ বলে ৩৬ রানের ইনিংস খেলে সঠিক প্রমাণ করেছেন আগে নেমে যাওয়ার সিদ্ধান্ত। ৪৬তম ওভারে মাশরাফি ফিরে যাওয়ার পর ইনিংস শেষ করার দায়িত্ব বর্তায় রিয়াদের ঘাড়ে।
রিয়াদ তখন অপরাজিত ৪৩ রানে, খেলে ফেলেছেন ৩৮টি বল। ইনিংসের তখন বাকি মাত্র ২৫ বল। এই ২৫ বলের মধ্যে ১১টি বল খেলার সুযোগ পান রিয়াদ। এই ১১ বলে ২ ছয় ও ১ চারের মারে ২৪ রান করেন রিয়াদ। পূরণ করেন ক্যারিয়ারের ১৯তম অর্ধশত। দলকেও নিয়ে যান তিনশো পেরুনো সংগ্রহে।
দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের ইনিংস খেলে কিংবা গুরুত্বপূর্ণ দুটি গড়ে অথবা দায়িত্ব নিয়ে দলীয় ইনিংস শেষ করে আসার পরেও যথাযথ মাতামাতি নেই বাংলাদেশের ‘বিপদের বন্ধু’ খ্যাত রিয়াদকে ঘিরে। আগের আরো অনেকবারের মতো এবারও আড়ালে থেকেই নিজের কাজটা শেষ করেছেন রিয়াদ।
দলের প্রতি নিজের দায়বোধ কিংবা তার প্রতি দলের যে চাওয়া নীরবে নিভৃতেই তা পূরণ করে চলেছেন রিয়াদ। আগামীতেও এমনভাবেই নিজের কাজটা করে দলকে সফলয়ার পথ দেখিয়ে দেবেন রিয়াদ, এমনটাই চাওয়া থাকবে বাংলাদেশ ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট সকলের।
এসএএস/পিআর