হতাশা গ্রাস করেছে মাশরাফিকেও
সবারই জানা মাশরাফি ভিন্ন ধাঁচে গড়া। সাধারণত আবেগ-টাবেগ তাকে স্পর্শ করে কম। খেলাটাকে তিনি মাঠেই রাখতে চান। ব্যক্তিগত জীবনে তুলে আনেন না। এটা নিজেই বেশ কয়েকবার মুখে বলেছেন তিনি। খেলার আবেগও তাকে স্পর্শ করে কম। কিন্তু মাঠে আবার নিজেকে উজাড় করে দিয়ে খেলেন। এ কারণে তিনি একটু আলাদা-অন্যরকম।
ঘরের মাঠে ত্রিদেশীয় সিরিজে হারের পর টি-টোয়েন্টি, টেস্ট এবং নিদাহাস ট্রফির ফাইনালে হারের পর লম্বা বিরতি দিয়ে বাংলাদেশ খেলতে গিয়েছিল ভারতের দেরাদুনে, আফগানিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে অংশ নিতে। সেখানে আফগানদের কাছে হোয়াইটওয়াশ হয়ে আসার পর ওয়েস্ট ইন্ডিজে গিয়ে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে রীতিমত বিধ্বস্ত। মানসিকভাবেই পুরো দলটি খুবই বাজে অবস্থায়।
এমন পরিস্থিতিতে ওয়ানডে অধিনায়ক হিসেবে দলের সঙ্গে যোগ দেয়ার পর পুরো দলটিকেই যেন বদলে ফেলেছেন মাশরাফি। যেন জাদুর কাঠি। তার ছোঁয়ায় পুরোপুরি বদলে গেল দল। উজ্জীবিত হয়ে উঠলো। প্রথম ম্যাচে তাই বাংলাদেশ অসাধারণ এক জয় নিয়ে এগিয়ে গেলো। দ্বিতীয় ম্যাচটিও একই মাঠে। ভাগ্যছোঁয়া স্টেডিয়ামে। বাংলাদেশ এই মাঠেই সিরিজ জয় করে নিতে চায়।
সব কিছু এগুচ্ছিল পরিকল্পনামতই। বিজয়ের ব্যাটে ফ্লাইং স্টার্ট। এরপর সাকিব-তামিমের ব্যাটে দারুণ জুটি। তারা দু’জন বিদায় নিলেও আরও দুই সিনিয়র মুশফিক এবং মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ব্যাটে জয়ের একেবারে দ্বারপ্রান্তে চলে আসার পর শেষ মুহূর্তের চাপে ভেঙে পড়ে হেরে যাওয়ার হতাশা যে কারও ওপরই ভর করার কথা। তিনি যতই বাস্তববাদী হোন না কেন। মাশরাফিকেও ছুঁয়ে গেছে সেই হতাশা। শেষ মুহূর্তে এভাবে হেরে যাওয়াকে মেনে নিতে পারছেন না বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক।
বিষয়টা হলো, বাংলাদেশ ক্রিকেট দল কিন্তু এই প্রথম কোনো ম্যাচে এভাবে তীরে এসে তরি ডোবায়নি। এর আগে আরও অনেকবার এভাবে শেষ মুহূর্তে পরাজয় সঙ্গী হয়েছে। ২০১২ এশিয়া কাপের ফাইনাল, ২০১৬ এশিয়া কাপের ফাইনাল, ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে শেষ মুহূর্তে এসে এবং নিদাহাস ট্রফির ফাইনালেও শেষ মুহূর্তে হেরে যাওয়ার যন্ত্রণা হয়েছে সঙ্গী। এবার সে তালিকায় যুক্ত হলো গায়ানার প্রোভিডেন্ট স্টেডিয়ামে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে শেষ মুহূর্তে ৩ রানে হার।
এমন পরিস্থিতিতে হেরে যাওয়ার পর নিশ্চিতভাবেই মন খারাপ হওয়ার কথা। হয়েছে মাশরাফিরও। তিনিও খুব হতাশ। ম্যাচ শেষে সেই হতাশার কথাই জানিয়েছেন মাশরাফি। তিনি বলেন, ‘এই ধরনের ম্যাচ হারা তো অবশ্যই হতাশার। শেষ ১৩ বলে ১৪ রান লাগবে, ৬ উইকেট হাতে। ওখন থেকে ম্যাচ হারার কথা নয়। আর এমন না যে এটা প্রথমবার হলো। সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকবার হলো। এটাই বেশি হতাশার। আমরা বারবার ভুল থেকে হয়ত শিখছি না। সহজেই শেষ করা উচিত ছিল এই ম্যাচ।’
কেন এমন ভুল বারবার হচ্ছে? কেন সেই ভুল থেকে শিক্ষা নেয়া হচ্ছে না? এই ভুলগুলো থেকে কিভাবে বের হয়ে আসা সম্ভব? এই প্রশ্নের উত্তর নেই মাশরাফির কাছেও। তিনি বলেন, ‘এখানে আসলে কি বলব…। টেকনিক্যাল না মেন্টালি, ব্যাখ্যা করা কঠিন। এমন যদি হতো যে, ১২ বলে ২০ রান লাগবে, অন্য কথা ছিল। কিন্তু ১৩ বলে যখন ১৪ লাগবে, তখন টেকনিক্যাল বা মেন্টাল কোনোটিই বলা কঠিন। তবে সত্যিকার অর্থে বললে, আমরা এই ধরনের ভুল বারবার করছি। এই ধরনের পরিস্থিতিতে হয়ত নার্ভ আরও সহজ রাখা যেত। বল প্রতি রান দরকার ছিল। এক এক করে রান নিয়েই শেষ করা যেত, যেটা আমরা করতে পারিনি।’
তবে পরাজয়ের জন্য বাজে ফিল্ডিংকেও দায়ী করেছেন মাশরাফি। মিস ফিল্ডিংয়ের মহড়ার কারণেই এত বেশি রান করতে পেরেছে ক্যারিবীয়রা। মাশরাফি বলেন, ‘আমাদের ফিল্ডিং আপ টু দ্য মার্ক ছিল না। কিছু ক্যাচ মিস হয়েছে, কিছু রান আউট মিস। বাজে ফিল্ডিংয়ের কারণে ২৪টি ডাবলও হয়েছে। হ্যাঁ, শিশির ছিল কিছুটা। হুট করেই বল টার্ন করা আরম্ভ করেছিল।’
আইএইচএস/আরআইপি