সাকিব-মোস্তাফিজসহ সিনিয়রদের টেস্ট খেলতে অনীহা : পাপন
ওয়েষ্ট ইন্ডিজের সাথে টেস্ট সিরিজে যাচ্ছেতাই পারফরমেন্স করে চরমভাবে পর্যুদস্ত হয়েছে টাইগাররা। কাগজে -কলমে প্রায় সমান শক্তির ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে মাঠের এপ্রোচ-এপ্লিকেশন ও পারফরমেন্সকে মানদন্ড ধরলে সাকিব বাহিনী যারপরনাই খারপ ভাবে হেরেছে।
প্রথম টেস্টের পরই বোর্ডের উচ্চ পর্যায়ের নির্ভরশীল সূত্রে শোনা গেল, নতুন কোচ স্টিভ রোডস ও অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের সাথে পারফরমেন্স নিয়ে কথা বলতে গিয়ে এক পর্যায়ে বেশ নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন পেসার রুবেল হোসেন।
প্র্যাকটিসে ১৪০ কিলোমিটার গতিতে বল করতে পারলেও অ্যান্টিগার সবুজ ঘাসের পিচে রুবেল গড় পড়তা ১৩০ কিলোমিটার গতিতে বল করায় তাকে টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। অধিনায়ক সাকিব ও কোচ স্টিভ রোডস জানতে চান , কেন ১৪০ মিটার গতিতে বলার সামর্থ্য ও সক্ষমতা থাকা সত্বেও গতি কমিয়ে ১৩০ কিলোমিটার গতিতে বল করা? বিসিবির উচ্চ পর্যায়ের এক সূত্র জানিয়েছে, রুবেল নাকি জবাবে বলেছিলেন, ‘আমিতো টেস্টই খেলতে চাইনা। আমাকে টেস্টে না নিলেই হয়।’
সেটা যে গুঞ্জন ছিলনা। পুরোপুরি সত্য। তার প্রমাণ মিললো গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায়। খোদ বিসিবি সভাপকি নাজমুল হাসান পাপনের বোমা ফাটানো সংলাপ, সাকিব-মোস্তাফিজ-রুবেলসহ দেশের কজন সিনিয়র ক্রিকেটার টেষ্ট ক্রিকেট খেলতে নিরুৎসাহী।
সারা বিশ্বেই এখন ফ্র্যাঞ্চাইজি টি টোয়েন্টি ক্রিকেটের জয় জয়কার। সবাই এই ফরম্যাটের ক্রিকেট পছন্দ করেন। অল্প সময়ে অনেক বিনোদন। একটা পূর্নাঙ্গ প্যাকেজ। এই ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট গুলো দিনকে দিন টেস্ট ক্রিকেটের জন্য বড় বাঁধা হয়ে দাড়িয়েছে।
অনেক বেশী অর্থ ও আনুসাঙ্গিক সুযোগ সুবিধা মেলে। অথচ পরিশ্রম অনেক কম। পাঁচদিনের টেস্টের একটি সেশনের সমান প্রায় আয়ুষ্কাল। পরিশ্রম খুব কম। কিন্তু বিনিময় মূল্য অনেক অনেক বেশী। এক মাসের আইপিএল খেলে যে পরিমান অর্থ উপার্জন করা সম্ভব, তা পাঁচ বছর টেস্ট খেলেও তা অর্জন করা কঠিন।
এ কারনেই অনেক নামী ক্রিকেটারও এখন ভারতের সাড়া জাগানো ফ্র্যাঞ্চাইজি আসর আইপিএলে মজেছেন। কম পরিশ্রম, সীমিত মেধা ও স্কিল নিয়েও টেস্টের চেয়ে বহু বেশী অর্থ আয়ের সুযোগ আছে বলেই তারা পারলে টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি ভিত্তিক টি-টোয়েন্টি আসর খেলেন সারা বছর।
গুঞ্জন ছিল বাংলাদেশেরও কিছু ক্রিকেটার ঐ দলে নাম লেখাতে আগ্রহী। তারাও সম্ভব হলে টেস্ট ক্রিকেট বাদ দিয়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট খেলতে বেশী উৎসাহী। অবশেষে মিললো তাদের নাম। কোন গুঞ্জন নয়। খোদ বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন জানিয়ে দিলেন তাদের নাম ধাম।
বিসিবি প্রধান জানিয়েছেন দেশেল শীর্ষ তারকা সাকিব আল হাসান, কাটার মাস্টার মোস্তাফিজুর রহমান ও পেসার রুবেল হোসেন নাকি টেস্ট ক্রিকেট খেলতে অনুৎসাহী।
শুক্রবার সাংবাদিকদের সাথে আলাপে বিসিবি সভাপতি বলেন, এখন আমি লক্ষ্য করছি আমাদের কজন সিনিয়র প্লেয়ার টেস্ট খেলতে আগ্রহী না। তাদের মধ্যে সাকিবও আছে। সাকিবের মত জনপ্রিয় ও অন্যতম শীর্ষ ক্রিকেটারও টেস্ট খেলতে চায়না।
টেস্ট খেলতে না চাওয়া দলের সদস্য কারা কারা? তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বিসিবি প্রধান বলেন, ‘মোস্তাফিজুর রহমানও টেস্ট খেলতে চায়না। ‘আমি টেস্ট খেলতে চাইনা।' সরাসরি এমন কথা না বললেও মোস্তাফিজের হাব-ভাবে তাই মনে হয় এবং সে টেস্ট ক্রিকেটকে এড়িয়ে চলতে চায়।’
কেন কাটার মাস্টার টেস্ট ক্রিকেটকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করছেন ? এমন প্রশ্নের জবাবে নাজমুল হাসান পাপন বলেন, 'মেস্তাাফিজ প্রায়ই আহত হয়। তাই তার ধারণা জন্মেছে, টেস্ট ক্রিকেট না খেললে হয়ত তার ইনজুুরি কম হবে। তাই সে টেষ্ট খেলা থেকে বিরত থাকতে চায়।’
পাপন আরও যোগ করেন, 'এখন আমাদের বেশ কজন ক্রিকেটার টেস্ট খেলতে চায়না। কারন টেস্ট খেলা সহজ কাজ নয়। সব কিছুই বেশী দিতে হয়। বেশী প্রয়োজন। খেলাটা পাঁচদিনের বলেই শুধু নয়। পরিশ্রম অনেক বেশী। ঘাম ঝড়াতে হয়। ফ্র্যাঞ্চাইজি আসরে তার অনেক কম কষ্ট। কিন্তু অর্থ লাভ হয় অনেক গুণ বেশী। আমাদের অন্যতম অভিজ্ঞ বোলার রুবেল হোসেনও টেস্ট খেলতে আগ্রহী নয়। অথচ এই ফরম্যাটে রুবেল বেশ অনেকদিন খেলে আসছে। দল তার সার্ভিস পেয়েছে বেশ অনেক দিন। এখন যদি রুবেলের মত প্লেয়ার টেষ্ট খেলতে না চায়, তাহলে আমাদেরও বিকল্প পথে হাটা ছাড়া উপায় নেই। বিসিবি সভাপতির কথায় পরিষ্কার, তারা আগমুহূর্তে টেস্টে নতুন মুখ খুঁজে পেতে চাচ্ছেন। তাইতো তার মুখে এমন কথা, আমাদের তরুণ প্রজন্ম থেকে আগামীতে টেস্ট পারফরমার খুঁজে বেড় করতে হবে।’
বিসিবি সভাপতি আবারো নাম উল্লেখ করেন বলেন, 'আমাদের সাকিব, রুবেল ও মোস্তাফিজ দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেট খেলা থেকে বিরত থাকতে চায়।’
নাজমুল হাসান পাপনের ধারণা, 'অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডই ক্রিকেটের সনাতন ফরম্যাটকে আগলে রেখেছে। আমার ধারণা ও অনুভব, ঐ দুই দেশের ক্রিকেটাররা ছাড়া আর অন্য কোন দেশের ক্রিকেটাররা টেস্ট ক্রিকেট খেলার উৎসাহ কম পায়।’
পাপনের শেষ কথা, 'অস্ট্রেলিয়া আর ইংল্যান্ড ছাড়া আর কোন বোর্ডও সে অর্থে টেস্টে উৎসাহী নয়। আমাদের টিভি সম্প্রচারের দায়িত্বে যারা আছেন, তারাও টেষ্ট প্রচারে কম উৎসাহী।’
এআরবি/এসএএস/এমএস