ভিডিও EN
  1. Home/
  2. খেলাধুলা

অতীতের সুখ স্মৃতিই হতে পারে ধ্বংসস্তূপ থেকে উঠে দাঁড়ানোর প্রেরণা

আরিফুর রহমান বাবু | প্রকাশিত: ০৫:০২ পিএম, ০৫ জুলাই ২০১৮

তামিম, মুমিনুল, মুশফিক, সাকিব ও মাহমুদউল্লাহদের ব্যাটিংয়ের হতশ্রী, কুৎসিত-কদাকার চেহারা দেখার পরও মনকে প্রবোধ দেয়া যেত, যদি দেখা যেত ক্যারিবীয়রাও ধুঁকছে। তাদেরও রান করতে কষ্ট হচ্ছে। জ্যাসন হোল্ডারের দলও পাল্টা ব্যাটিংয়ে নেমে বিপাকে। প্রথম দিন শেষে দেড়শো কিংবা তার কম রানে ৪-৫ বা ৫-৬ উইকেট খুইয়ে বসেছে। তাহলেও একটা সান্তনা খুঁজে পাওয়া যেত।

কিন্তু আসলে উইকেট তো আর অত কঠিন নয়। ক্রিকেটীয় পরিভাষায় ‘আনপ্লেয়েবল’ও নয়। ক্যারিবীয়দের ব্যাটিং দেখে মনে হলো, ‘কই নাতো কোনই সমস্যা নেই। উইকেট তো ঠিকই আছে।’ আর তাই বাংলাদেশকে প্রথমবার ৪৩ রানে থামিয়ে হোল্ডারের দল রান পাহাড় গড়ার পথে। প্রথমদিন শেষে ক্যারিবীয়দের স্কোর ২ উইকেটে তাই ২০২।

মোটকথা, ক্রিকেটীয় পরিভাষায় যাকে বলে ‘ডেডলি উইকেট’, অ্যান্টিগার পিচ কিন্তু তেমন না। আবার ‘আনপ্লেয়েবল’ও না। হ্যাঁ, আবারো বলা, স্বাভাবিকের চেয়ে কিছু জায়গায় বল পড়ে একটু বেশিই সুইং করেছে। সেটাও একটা বিশেষ কারণে- গুড লেন্থের আশপাশে প্রচুর সবুজ কচি ঘাস। সেই ঘাসে পড়ে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ম্যুভ করছে বল। ঘাসের মুখ বা মাথায় বলের সিম পড়েও বাড়তি ম্যুভমেন্ট হচ্ছে।

তা হতেই পারে। বিশ্বের অনেক উইকেটই এমন। মানছি, কেমার রোচ একটানা অনেক্ষণ হয়ত খুব ভাল জায়গায় বল ফেলে কখনো এদিক আবার কখনো ওদিকে বল ম্যুভ করিয়েছেন; কিন্তু তাই বলে ৪৩ রানে অলআউট হওয়া কেন? কেন ব্যাটিংয়ের এ হতশ্রী অবস্থা? তবে কি ব্যাটসম্যানদের সামর্থ্য কম? টেকনিকে ঘাটতি?

নাকি সারা বছর ঘরের মাঠে প্রাণহীন, নির্জীব, নিস্তেজ মরা ‘তক্তা’ উইকেট- যেখানে বল আসে ঠেলাগাড়ির গতিতে, বাউন্সও গড়পড়তা পেট-বুক সমান। আর সুইং ও বলে ম্যুভমেন্টের বালাই থাকে না। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েও খেলা যায়- সেখানে খেলেই একটু কঠিন কন্ডিশনে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলা?

অনেক প্রশ্ন সবার মনে। আবার পাল্টা প্রশ্নও আছে- এতোদিন মানে, ১৮ বছর টেস্ট খেলার পর একটু ফার্স্ট ও ম্যুভিং উইকেটে এত করুন অবস্থা হবে কেন? যে কন্ডিশনেই হোক না কেন, সারা বছর নামি-দামি হাই প্রোফাইল সব স্পেশালিস্ট কোচদের অধীনে প্র্যাকটিস তো হয়। সব সময় হয়ত শতভাগ ফাস্ট বোলিং উপযোগি কন্ডিশন বা পিচে খেলা হয় না। তারপরও এখানে-সেখানে খেলাতো হয়।

ধরে নেয়া গেল, বেশিরভাগ উইকেট স্লো, লো। ম্যুভমেন্ট-ট্যুভমেন্টের বালাই নেই; কিন্তু তারপর একটু প্রতিকূল ও অনভ্যস্ত কন্ডিশনে গিয়ে এতটা খারাপ অবস্থা হবে কেন? কেমারা রোচ, কামিন্স ও হোল্ডারের বোলিংয়ের সামনে তামিম, লিটন মুমিনুল, সাকিব, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ, সোহান ও মিরাজদের রীতিমত স্কুল ছাত্রদের মত অদক্ষ, অপরিপক্ক ও আনাড়ি মনে হবারই বা কারণ কি?

কেন এত নাজুক অবস্থা? বোলিংয়ের ধার তো আগেই কমেছে। এখন কি তবে ব্যাটিংটাও রসাতলে যাবার পথে! তাহলে এত কোটি কোটি টাকা খরচ করে বিদেশি কোচিং স্টাফ পোষা কেন? রাজ্যের প্রশ্ন এসে ভিড় করছে। এর উত্তর খুঁজতে গেলে সিরিজ শেষ হয়ে যাবে। তবে জ্ঞানীরা বলেন, কিছু সমস্যার সমাধান নাকি সময়ের ওপর ছেড়ে দেয়া উত্তম।

ধরে নেয়া যাক , বুধবার অ্যান্টিগায় প্রথম দিন ব্যাটিং, বোলিং আর ফিল্ডিংয়ে চরম খারাপ দিন গেছে টাইগারদের। খুব বাজে ব্যাটিংয়ের পর বোলাররা জায়গামত বল ফেলতে চরম ব্যর্থ। যেখানে ক্যারিবীয় ফাস্ট বোলাররা সহজাত বাউন্সারে ঠোকা ও বডি লাইন বোলিং বাদ দিয়ে ক্রমাগত অফ স্ট্যাম্প ও তার আশপাশে গুডলেন্থ স্পটে টানা বল করে বাড়তি সুইং পেলেন।

তা খেলতে গিয়ে নাভিঃশ্বাস উঠলো ব্যাটসম্যানদের। তা নিজ চোখে দেখেও ভুল পথে হাঁটা দিলেন রুবেল, রাব্বি ও রাহি। এলোমেলো আর বল্গাহীন বোলিং করলেন। গুডলেন্থ স্পট কোথায়? তাই যেন ভুলে গেলেন। তার বদলে কখনো শর্ট অফলেন্থ, লেগ স্ট্যাম্পের বাইরে আবার অফ স্ট্যাম্পের বেশি বাইরে বল ফেলে ওয়াইডও দিলেন।

উইকেটের সবুজ কচি ঘাসের যে অংশে বল পড়লে বাড়তি সুইং হবে- সেখানে বল পড়লো হাতে গোনা অল্প কটি। তাইতো রান খরার পর উইকেট খরাও চললো। খারাপ দিনে সাধারণতঃ যা হয়, তাই হলো।

BD-CRICKET-2

যাকে ভাবা হয় দেশসেরা উইকেটরক্ষক, যার চপলতা-ক্ষিপ্রতা ও রিফ্লেকসনের প্রশংসা সবার মুখে মুখে- সেই নুরুল হাসান সোহানও লোপ্পা ক্যাচ ফেলে দিলেন উইকেটের পিছনে। সারা বছর ক্লাব ক্রিকেট ও জাতীয় লিগ- বিসিএলে কিপিং করার পরও থার্ড স্লিপে দাঁড়ানো লিটন দাস ব্যাটসম্যানের ব্যাটের বাইরের কোনায় লেগে আসা বলের গতি-প্রকৃতি ঠাউরে উঠতেই ব্যর্থ। তিনি কিছু বুঝে ওঠার আগেই বল চলে গেল। এগুলো খারাপ দিনেরই নির্দেশক।

ক্রিকেটে সব দলেরই খারাপ দিন যায়। তাইতো নিউজিল্যান্ডের ২৬, দক্ষিণ আফ্রিকার ৩০, অস্ট্রেলিয়ার ৩৬, আর ভারতের ৪২ রানে অলআউট হবার নজির আছে। ওই দলগুলো কিন্তু সেই খাদের কিনরায় পড়ে থাকেনি। আবার মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আজ বিশ্ব ক্রিকেটে রীতিমত রাজত্ব করছে। তাই ধরে নেয়া যাক, সাকিব বাহিনীরও কাল তেমনি এক ‘বাজে দিন ’ গেছে।

তবে সেখান থেকে বেরিয়ে বড় শক্তিগুলোর মত বিশ্ব জয় করতে না পারলেও সামর্থ্যকে অতিক্রম করতে হবে। কঠিন পরিস্থিতির মোকাবিলা করে দেখাতে হবে। অতীতে টাইগাররা যে কখনো প্রতিকুলতা ও অনভ্যস্ততাকে জয় করতে পারেননি এমন নয়। করেছেন।

যত তীর্যক ভাষায় সমালোচনাই করা হোক না কেন, শক্তি-সামর্থ্য আর মেধা-প্রজ্ঞা নিয়ে যেমন প্রশ্নই উঠুক না কেন, এটাও সত্য যে, এই তামিম, মুশফিক, সাকিবদের কিন্তু বিশ্বের সব বাঘা বাঘা বোলারের বিপক্ষে টেস্ট সেঞ্চুরি ও ডাবল সেঞ্চুরির রেকর্ড আছে।

এইতো এক বছর আগে ওয়েলিংটনে প্রচন্ড ঠান্ডা, কনকনে বাতাস আর সীমিং কন্ডিশনে ট্রেন্ট বোল্ট আর টীম সাউদীর বিপক্ষে প্রাণপন লড়ে ডাবল সেঞ্চুরি করে দেখিয়েছেন সাকিব। মুশফিকের ব্যাট থেকে বেরিয়ে এসেছিল ১৫৯ রানের সংগ্রামী ইনিংস। ঘরের মাঠে খুলনায় তিন বছর আগে পাকিস্তানের বিপক্ষে নিশ্চিত হারা ম্যাচে ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে তামিম ম্যাচ ড্র করে দিয়েছিলেন।

তারও আগে শ্রীলঙ্কায় গিয়ে দারুণ ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন মুশফিক। বেশি দুর যাবার দরকার নেই। খাদের কিনারায় পড়ে আবার মাথা তুলে দাঁড়াবার নজির আছে টাইগারাদের। গত বছর মার্চে গলে লঙ্কানদের কাছে প্রথম টেস্টে ২৫৯ রানের বিরাট ব্যবধানে হারের ধাক্কা সামলে মাত্র কয়েক দিনের মধ্যে কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কাকে ৪ উইকেটে হারিয়ে নিজেদের শততম টেস্টকে স্মরণীয় করে রেখেছেন এই মুশফিক, তামিম ও সাকিবরা।

কাজেই তারা কিছুই পারেন না। তাদের দিয়ে হবে না- মার্কা কথা বলার চেয়ে টাইগারদের সামর্থ্যের প্রতি বিশ্বাস ও আস্থা রাখাই যুক্তিযুক্ত, উত্তম। এখন অ্যান্টিগায় সাকিবের দলের ভাগ্যাকাশে কালো মেঘের ঘনঘটা। তা কেটে আবার লাল সূর্য্য বেরিয়ে আসে কি না? সেটাই দেখার। সেটাতো আর এমনি এমনি আসবে না। ব্যর্থতা আর না পারার গ্লানি মুক্তির জন্য সাকিব, তামিম, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহদেরই ভাগ্য বদলে সচেষ্ট হতে হবে।

‘বুধবার (৪ জুলাই) নেহায়েত খারাপ দিন গেছে। সেটা এখন অতীত। আমরা আসলে তত খারাপ দল নই। আমাদেরও সামর্থ্য আছে ভাল খেলার। মাথা তুলে দাঁড়াবার। আমরা অতীতেও ধ্বংস্তুপ থেকে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছি। এবার আবার খাদের কিনারা থেকে উঠে দাঁড়াবো।’

এই প্রত্যয়টাই এখন খুব বেশি প্রয়োজন। তা দেখাতে পারলে এ ভগ্নস্তুপ থেকে বেরিয়ে আসাও অসম্ভব নয়!

এআরবি/আইএইচএস/জেআইএম

আরও পড়ুন