ভিডিও EN
  1. Home/
  2. খেলাধুলা

বিশ্বকাপের কাছে ‘ব্র্যাকেটবন্দী’ বাংলাদেশ-উইন্ডিজ সিরিজ

আরিফুর রহমান বাবু | প্রকাশিত: ০৩:১৪ পিএম, ০৪ জুলাই ২০১৮

নতুন করে বলার ও ব্যাখ্যা দেয়ার প্রয়োজন নেই; এখন সময়টা বিশ্বকাপ ফুটবলের। চার বছর পরপর আসে মর্ত্যের এ সর্ববৃহৎ ক্রীড়া যজ্ঞ। সারা পৃথিবীকে নাড়িয়ে দিয়ে যায়। এই এক মাস বা তার বেশি সময় বিশ্বে আর যে কোন খেলাই হোক না কেন বিশ্বকাপের বিশালতা, তার আকর্ষণ, উন্মাদনা আর উৎসাহ-উদ্দীপনার কাছে সব ঢাকা পড়ে যায়।

বিশ্বকাপ ফুটবলের সময় অন্য খেলাগুলো এক কথায় ‘ব্র্যাকেটবন্দী’ হয়ে পড়ে। এইযে এখন টেনিসের বিশ্বকাপখ্যাত ‘উইম্বলডন’ হচ্ছে। অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তান, জিম্বাবুয়ে- এই তিন দলকে নিয়ে তিন জাতি টি-টোয়েন্টি আসর বসেছে হারারেতে। মঙ্গলবার শুরু হয়েছে ভারত ও ইংল্যান্ডের টি টোয়েন্টি সিরিজ।

অন্য সময় হলে ওয়ার্ল্ড স্পোর্টস মিডিয়া মেতে থাকতো ওসব নিয়েই; কিন্তু কই তেমন কোন সাড়া শব্দতো নেই। একইভাবে আজ (বুধবার) বাংলাদেশ সময় রাত আটটা থেকে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের অ্যান্টিগায় শুরু হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যকার দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ।

বলার অপেক্ষা রাখে না, এই সিরিজ তথা এ টেস্ট ম্যাচ দিয়ে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হচ্ছে টিম বাংলাদেশের নতুন কোচ স্টিভ রোডসের। অন্য যে কোন সময় হলে, এখন বাংলাদেশ মিডিয়া মেতে থাকতো এই সিরিজ নিয়েই। খেলা পাগল বাংলাদেশের মানুষের দৃষ্টি আবদ্ধ থাকতো, অ্যান্টিগায়। জল্পনা-কল্পনা আর গুঞ্জনের ফানুস উড়াতো আকাশে বাতাসে। অথচ, তার ছিটেফোটা পর্যন্ত এবার নেই। সবাই মেতে আছেন এক ফুটবল বিশ্বকাপ নিয়ে। সবার দৃষ্টি মস্কো, কাজান, সেন্টপিটার্সবার্গ থেকে শুরু করে রাশিয়া বিশ্বকাপের ভেন্যুগুলোতে।

কেউ কেউ ফোড়ন কাটতে পারেন জার্মানি, আর্জেন্টিনা স্পেন ও পর্তুগালের মত ফেবারিট দল আর মাঠে নজরকাড়া সুইজারল্যান্ড ও জাপান বিদায় নেয়ায় আকর্ষণ খানিক কমেছে বিশ্বকাপের। তাই বলে বিশ্বকাপ নিয়ে কথা-বার্তা, হইচই সোরগোল আর আলোচনা-পর্যালোচনা কিন্তু মোটেও কমেনি।

বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন জার্মানির বিদায়, সময়ের সেরা দুই ফুটবলার লিওনেল মেসি-ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর কোয়ার্টারফাইনালে না থাকা নিয়েও রাজ্যের কথা-বার্তা চলছে। আর্জেন্টিনা কেন ১৯৮৬ সালের পর ৩৬ বছরের মাথায় এসেও আর বিশ্বকাপ জিততে পারলো না, সাজানো গোছানো আর ছবির মত ফুটবল খেলেও কেন ইনিয়েস্তার দল স্পেন সেরা আটে নেই, রোনালদোর একার নৈপুণ্যই শেষ কথা নয়। পর্তুগালকে ওপরে উঠতে হলে দল হিসেবে আরও সুগঠিত হতে হবে। মেক্সিকো কেন বারবার (এবার নিয়ে টানা সাতবার) রাউন্ড অফ সিক্সটিনে গিয়ে বাদ পড়ে, স্বাগতিক রাশিয়াই বা কতদুর যাবে? ফ্রান্স, বেলজিয়াম আর উরুগুয়ের কেউ কি যেতে পারবে ফাইনালে?

ছোট্র-মাঝারী ফাউলের শিকার হয়েও নেইমারের মাঠে একটু বেশি আবেগতাড়িৎ হয়ে ছটফট করা, কাতরানো, আহাজারি- তা নিয়ে সাধারণ দর্শক ফুটবল অনুরাগীর একাংশ- বিশেষ করে সমালোচকদের তীর্য্যক কথা-বার্তায় সয়লাব চারিদিক। বিশেষ করে বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাঙ্গ-বিদ্রুপ আর টিকা টিপ্পনির শেষ নেই।

তার বাইরে ব্রাজিলকে নিয়েও কত কথা! হলুদ জার্সিধারিরা এখনো কক্ষপথে। তবে সেরা আটে বেলজিয়ামের বাধার প্রাচীর টপকাতে পারবে নেইমার-কৌতিনহোরা? অভিষ্ট লক্ষ্যের পথে অনেক সংকল্পবদ্ধ ও সাজানো-গোছানো পেলের দেশ কি ষষ্ঠবারের মত শেষ হাসি হাসতে পারবে? এসব নিয়েও কিন্তু কথা বার্তার শেষ নেই।

আসল কথা হলো ফুটবল গণমানুষের খেলা। যার সাথে মানুষের আবেগ-ভালবাসা জড়িত। ৯০ মিনিটের খেলা ফুটবলের টান-আকর্ষণ আসলে ভিন্ন। যার সাথে বিশ্বের কোন খেলার তুলনা চলে না। রাগবি, ক্রিকেট, টেনিস, হকি, বাস্কেটবল, বেসবল, টেবিল টেনিস, ব্যাডমিন্টন আর হ্যান্ডবলও জপ্রিয়। তবে ফুটবলের তুলনায় তা নেহায়েত কম। একটা নির্দিষ্ট সংখ্যক মানুষের প্রিয়; কিন্তু ফুটবল হলো গণমানুষের খেলা। অন্য যে কোনো খেলার চেয়ে আবেগতাড়িৎ করে বেশি। সে কারণেই খেলা দেখতে বসে মানুষ আবেগতাড়িতও হয় বেশি।

তাই বিশ্বকাপের সময় আসলে অন্য খেলার প্রতি উৎসাহ-আগ্রহ যায় কমে। যে বাংলাদেশের বর্তমান প্রজন্ম ক্রিকেট অন্তঃপ্রাণ- তাদেরও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রিয় দলের সিরিজ নিয়ে উৎসাহ-আগ্রহ বেশ কম। অন্য সময় কোনো টেস্ট সিরিজ শুরুর আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাড়া পড়ে যেত, প্রিয় দলের শক্তি-সামর্থ্য আর সম্ভাবনা নিয়ে রাজ্যের লেখালেখিও হতো।

দল কেমন হলো? কে বাদ গেলো, কার অন্তর্ভূক্তি প্রশ্নবিদ্ধ। কাকে নেয়া উচিৎ ছিল- এসব নিয়ে শত শত স্ট্যাটাস আর কমেন্টসে ভরে যেত ফেসবুক; কিন্তু এখন তার কিছুই নেই। থাকলেও আনুপাতিক হারে বেশ কম।

আগামী ১৬ জুলাই শেষ হবে টেস্ট সিরিজ। আর ১৫ জুলাই বিশ্বকাপ ফাইনাল। ধারনা করা হচ্ছে, বিশ্বকাপ শেষে ওয়ানডে সিরিজেই হয়ত বাংলাদেশের খেলা অনুরাগীদের চোখ ওয়েস্ট ইন্ডিজের ওপর পড়বে।

এআরবি/আইএইচএস/জেআইএম

আরও পড়ুন