টাইগারদের ‘বাংলাদেশ দল’ মনে হচ্ছে না পাপনের
মাত্রই টেস্ট মর্যাদা পেল আফগানিস্তান। এখনও টেস্ট খেলার জন্য মাঠেও নামেনি। কিন্তু এই দলটিই কি না, চোখ রাঙিয়ে কথা বলছে বাংলাদেশের সামনে। টি-টোয়েন্টিতে বলে-কয়ে হারিয়ে দিচ্ছে। এক রশিদ খানের সামনেই কাঁপছে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপ। তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচেই হেরে গেছে বাংলাদেশ। সিরিজ তো খুইয়েছে, এখন হোয়াইটওয়াশের শঙ্কায় রয়েছে টাইগাররা। দেরাদুনে তাদের যে মানসিক অবস্থা এবং যে শরীরি ভাষা, তাতে সিরিজের শেষ ম্যাচটাও যে বাঁচাতে পারবে, সে সম্ভাবনা একেবারেই ক্ষীণ। এমন পরিস্থিতিতে, এই বাংলাদেশ দলকে ঠিক ‘বাংলাদেশ দল’ বলেই মনে হচ্ছে না বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের।
আজ মিরপুরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বিসিবি সভাপতি বলেছেন নানা কথা। সেখানেই তার কাছে জানতে চাওয়া হয়, দলের এই অধঃপতন। এ কারণে মন খারাপ কি না। তিনি জানান, মন খারাপ কার না হবে?
পাপন বলেন, ‘সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে ১২০-৩০ রান করে টি-টোয়েন্টিতে জেতার আশা করে কেউ, আমার মনে হয় এটা ঠিক হবে না। এটা খুবই কম স্কোর। আফগানিস্তানের বোলিং হতে পারে খুব ভালো। রশিদ খান বিশ্বমানের, কেউ অস্বীকার করে না। তারপরও ১৫০-৬০ হবে না এটা কখনো মনে হয়নি। যখনই মনে হচ্ছে আমরা সেট হচ্ছি, বড় স্কোরের দিকে যাচ্ছে তখনই উইকেট থ্রো করে দিয়ে আসছি। আমাদের সিনিয়র প্লেয়াররা যেভাবে আউট হয়েছে (সেটা অবাকর করার মতো)। রশিদ খানকে আমরা মনে করছি (কঠিন), ওরাও মনে করছে...। (এ কারণেই) তাকে ছয় মারতে গিয়ে আউট হয়েছে। মানে এইগুলা কোনোভাবে মেলে না। মনে হচ্ছে তাদের কোনো সমস্যা নিশ্চয়ই হচ্ছে। আমরা যে দল চিনি সেই দলের মতো না। নিশ্চয়ই সমস্যা আছে। আমি আর কী বলব।’
বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটারদের শরীরি ভাষা ছিল পুরোপুরি অনুজ্জ্বল। পুরোপুরি ব্যতিক্রম। এই ভাষা দিয়ে অন্তত ম্যাচ জেতা যায় না। সে সম্পর্কে জানতে চাইলে নাজমুল হাসান পাপন বলেন, ‘আসলে এটা খুব হতাশাজনক। নিদাহাস ট্রফির আগে বাংলাদেশে যে সিরিজটা হলো। একেবারে তার পুনরাবৃত্তি দেখেছি। একটা জিনিস হতে পারে, যেহেতু ওদের একদম কঠোর নিয়মকানুন মেনে চলা, রাগী, সিদ্ধান্ত একা নিজে নিত আগে (হাথুরু), এইরকম একটা পরিবেশ থেকে হুট করে তারা ফ্রি একটা পরিবেশ পেলে যা হয় তাতে করে হয়তো (সমস্যা) হতেও পারে। কারণ আমি জানি না। শ্রীলঙ্কাতে তো আমি নিদাহাস কাপে ওদের সঙ্গে ছিলাম এবং ওরা ভালোই খেলেছে। আমি বলছি যে খুব ভালো খেলেছে। সেখানে (নিদাহাস ট্রফির ফাইনালে) হারাতে কিন্তু কেউ তাদের কিছু বলেনি। কিন্তু এখানে কেমন যেন লাগছে। বাংলাদেশ দল মনেই হচ্ছে না, আমার কাছে মনেই হচ্ছে না।’
পাপন জানান, দলের ক্রিকেটারদের সঙ্গে এখনও কথা বলেননি। তবে তিনিও মিডিয়ায় আসা কথাবার্তা শুনছেন। সে সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমি ওদের সঙ্গে কথা বলিনি। ওরা সবাই বোলিংকে দোষারোপ করছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, ১২০-২৫-৩০ রান করে এখন কারো সঙ্গে জেতা অস্বাভাবিক। ১৬০ মিনিমাম হতে হয়। ১৮০র আগে তো জেতাই যায় না এবং খুব বাজে শট খেলেছে। রিস্ক নিতে গিয়ে আউট হয়েছে সিনিয়র প্লেয়াররা। এটাই আমার কাছে খারাপ লাগছে।’
নতুন করে কিছু ভাবছেন কি না? এ প্রশ্ন করা হলে নাজমুল হাসান পাপন বলেন, ‘নতুন করে ভাবার কিছু নাই। ওদের ভালো বোলার আছে। ভালো বোলার থাকলেই টিম জেতে না। উদাহরণ দেই, সানরাইজার্স হায়দরাবাদে রশিদ খান ছিল, সাকিবের মতো এক নম্বর অলরাউন্ডারও ছিল। (ফাইনাল) জিততে পারেনি। ভালো বোলার থাকবে। একটা দলে একটা/দুটো ভালো বোলার থাকবে। এই জন্য হেরে যাবে? একজন প্লেয়ারের খেলা না তো এটা। দুর্বল জায়গা ছিল। টি-টোয়েন্টিতে তো আমরা এমনিতেই পেছনে। খেলার প্ল্যানিংটাই বুঝতে পারছি না আমি। সো ফার ব্যাটিং কনসার্ন। বোলিং ঠিক আছে। ওরা যদি দুইশো করত বুঝতাম বোলিংয়ে সমস্যা আছে। ১৮০ও তো করতে পারেনি।’
শেষ ম্যাচ হেরে গেল তো হোয়াইটওয়াশ হয়ে যাবে বাংলাদেশ। এ নিয়ে চিন্তিত কি না পাপন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার কাছে এটা কোনো কনসার্ন না। আমার কাছে একটা হারই কনসার্ন। একটা হারা, তিনটা হারা সমান। সিরিজ হেরে গেছে, হেরেছে; কিন্তু হারা উচিত না। হারলে তো আমরা কিছু বলি না; কিন্তু এই হারার ধরণ আমার ভালো লাগেনি।’
আইএইচএস/বিএ