‘প্রতিদিন ভালো খেললে চাওয়া-পাওয়ার শক্তি কমে যায়’
অতিবড় সমালোচকও বলেন, না, সৌম্য খারাপ ব্যাটসম্যান না। বরং সৌম্য বিরোধীদেরও মুখেও একটি কথা সব সময়, শোনা যায়-‘সৌম্য সাহসী। হাতে মার আছে। উইকেটের সামনে ও দুদিকে সমানভাবে আক্রমণাত্মক শটস খেলতে পারেন। বিগ হিট নিতেও বেশ দক্ষ।’ সেটা তার স্ট্রাইকরেটই বলে দেয়। ওয়ানডেতে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠিত ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সেরা (৯৬.৬০) স্ট্রাইকরেট এ বাঁহাতি টপ অর্ডারের।
কিন্তু বছর খানেক ধরেই সময়টা ভাল যাচ্ছে না সৌম্যর। ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি দুই ফরম্যাটেই রান খরা যাচ্ছে। এ বছর একদিনের ম্যাচ খেলা হয়নি। ২০১৭ সালে যে ক'টি ওয়ানডে খেলেছেন, তাতে রান নেই। ২৫ মার্চ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ডাম্বুলায় শুরু আর ২২ অক্টোবর ইস্ট লন্ডনে দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে সর্বশেষ। ১১ ওয়ানডে ইনিংসে দুটি ফিফটি (১০+৩৮+৫+৬১+৮৭+০+২৮+৩+৩+০+৮)।
টি -টোয়েন্টিতেও সর্বশেষ অবস্থা খারাপ। অথচ গত বছর অক্টোবরে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে প্রোটিয়াদের সাথে তার ব্যাট ছিল স্বচ্ছন্দ্য, সাবলীল। দুই ম্যাচেই চল্লিশের ঘর পর্যন্ত যাওয়া, ৩১ বলে ৪৭ আর ২৭ বলে ৪৪। এ বছর ২৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার শেরে বাংলায় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৩২ বলে ৫১ রানের ঝড়ো ইনিংসও আছে। কিন্তু তার ঠিক পরেই ছন্দপতন।
সিলেটে গিয়ে (শূন্য রানে আউট) নিজেকে হারিয়ে ফেলা সৌম্য পরে নিদাহাস ট্রফিতে গিয়ে তো চরম ব্যর্থ । পাঁচ ম্যাচে (১৪+২৪+১+১০+১) একটি বড় ইনিংসও নেই। একবারের জন্য তিরিশের ঘরেও পৌঁছুতে পারেননি। পাঁচ খেলায় রান মোটে ৫০।
মেধা ও সামর্থ্য যেমনই থাকুক না কেন, এরকম খারাপ যার অবস্থা, তাকে নিয়ে তো কিছু কথা হবেই। এবারো আফগানিস্তানের সাথে টি-টোয়েন্টি সিরিজে সৌম্যর দলভুক্তি নিয়ে তাই কথা উঠেছে।
সৌম্য নিজেও জানেন, সমালোচনা হচ্ছে। তাই তো এমন অকপট স্বীকারোক্তি, ‘শেষ কয়েক ম্যাচ তো ভালো করিনি। নিজের কাছে তাগিদ থাকে ভালো করার। তারপর মানুষের কথা শুনলে মনে হয়, আসলেই খারাপ খেলছি। যত কথা শুনি তত মনে পড়ে। চেষ্টা করি এসব না শুনে অনুশীলনে জোর দিতে।’
তার ব্যাটে ধারাবাহিকতা কম। তবে এই ধারাবাহিকতা বাড়ানোর জন্য ভিতরে যেমন তাগিদ থাকার কথা, সৌম্যর কথা বার্তা শুনে কিন্তু তা মনে হলো না। কিছুটা আত্মতুষ্টি নিয়েই যেমন বললেন, ‘প্রতিদিনই তো ভালো করা যায় না। প্রত্যেকদিন ভালো করলে চাওয়া-পাওয়ার শক্তিটা কমে যায়। যেহেতু খারাপ সময় দিয়ে যাচ্ছি, ওখান থেকে কে কতটা কঠোর পরিশ্রম করে আগাতে পারি, ওটাই চিন্তা করি। আমি চেষ্টা করি আমার জায়গায় আমার খেলার। ভালো খেলারই চেষ্টা করি, তার মধ্যে খারাপ ভালো মিলিয়ে হয়ে যায়।’
নিদাহাস ট্রফিতে ব্যাটিং অর্ডার একটু নিচে ছিল। তা নিয়ে অবশ্য আক্ষেপ নেই সৌম্যর। বলছিলেন, ‘খেললে তো সব জায়গায় খেলতে হবে। দল যদি মনে করে, পাঁচ নম্বরে ব্যাট করতে হবে, তা হলে সেখানেই করতে হবে। এখানে পারফর্ম করতে হবে, রান করতে হবে। রান করলে আমার কাছে মনে হয়, নিজের কাছেও ভালো লাগবে। যেটা চলে গেছে, তা নিয়ে চিন্তা করলে নিজের কাছেই পিছিয়ে যাব। সামনে যে সিরিজ আছে ওইগুলা নিয়ে চিন্তা করতে হবে।’
সম্প্রতি বাংলাদেশ দলের ব্যবস্থাপনা পরামর্শক হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকান কোচ গ্যারি কারস্টেন। বাংলাদেশে এসে সৌম্যর সঙ্গেও আলাদা করে কথা বলেছেন তিনি। কি কথা হলো বিখ্যাত এই কোচের সঙ্গে? সৌম্যর জবাব, ‘আমার ক্রিকেট নিয়েই কথা। আমার মতামত কি। আমি কিভাবে খেলতে পছন্দ করি। কেমন জায়গায় খেলি এসব।’
দেখা যাক, কারস্টেনের মতো একজনের সংস্পর্শে আসার পর ব্যর্থতার বৃত্ত ভেঙে আলোর পথ খুঁজে পান কি না দেশের অন্যতম সেরা এই ওপেনার।
এআরবি/এমএমআর/পিআর