‘টিম বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছেন কারস্টেন’
জাগো নিউজের পাঠকরা আজ দুপুরেই জেনে গেছেন, দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক অধিনায়ক ও কোচ গ্যারি কারস্টেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের ব্যবস্থাপক পরামর্শক হয়ে এসেছেন। আগের রাতে রাজধানী ঢাকাতে এসে আজ কাজও শুরু করে দিয়েছেন। সোমবার সারা দিন কাজে ব্যস্ত ছিলেন তিনি।
কিন্তু তিনি আসলে কেন এসেছেন, তার পদবি কি হবে, তার কাজের পরিধিই বা কতটা? এসব কিন্তু খানিক ধোঁয়াটেই ছিল। অবশেষে আজ বিকেলে হোটেল সোনারগাঁ প্যান প্যাসিফিক হোটেলে উপস্থিত সাংবাদিকদের সাথে আলাপে বিসিবি প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দীন চৌধুরী সুজন পুরো বিষয়টি পরিষ্কার করে দিয়েছেন।
বিসিবি সিইও জানিয়ে দিয়েছেন, গ্যারি কারস্টেন পরামর্শক হিসেবে কাজ করছেন। তবে বিসিবি সিইও অনেক কথার ভীড়ে শুরুতেই জানিয়ে দিয়েছেন, তা হলো দীর্ঘ মেয়াদের চুক্তিতে না আসলেও গ্যারি কারস্টেন এসেছেন টিম বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরামর্শক হিসেবে।
বিসিবি সিইও বলেন, ‘ইতোমধ্যেই তিনি কাজ শুরু করে দিয়েছেন। আজ সোমবার থেকে শুরু হয়ে গেছে নতুন টিম ব্যবস্থাপনা পরামর্শকের কাজ। তিনি শুরুতেই বাংলাদেশ দলের ভেতরের বা অভ্যন্তরীণ অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছেন। তারই অংশ হিসেবে জাতীয় দলের কোচিং স্টাফ, তিন ফরম্যাটের অধিনায়ক, সিনিয়র প্লেয়ার তামিম-মুশফিক, নির্বাচক, ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটি চেয়ারম্যান এবং গেম ডেভেলপমেন্ট কমিটি প্রধান খালেদ মাহমুদ সুজনের সাথে একান্তে কথা বলে বিসিবি তথা বোর্ড প্রধান নাজমুল হাসান পাপনের কাছে একটি পূর্নাঙ্গ প্রতিবেদন পেশ করবেন।’
তবে বিসিবি সিইও একটি নতুন তথ্য দিয়েছেন। তা হলো, প্রথমে কথা ছিল গ্যারি কারস্টেন আগামী বিশ্বকাপ পর্যন্ত জাতীয় দলের ব্যবস্থাপনা পরামর্শক হিসেবে কাজ করবেন। কিন্তু পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত পাল্টেছে। এখন কারস্টেন মূলতঃ কোচ নিয়োগ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করার সময় পর্যন্ত থাকবেন এবং কাজ করবেন।
বিসিবি সিইও বলেন, ‘আমাদের পরিকল্পনা ছিলো উনি (কারস্টেন) দীর্ঘ মেয়াদে আমাদের সাথে কাজ করবেন, বিশ্বকাপ পর্যন্ত থাকবেন। প্রাথমিকভাবে তিনি সম্মতিও দিয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে উনার অন্যান্য কাজের ব্যস্ততার কারণে তিনি জানিয়েছেন যে, আপাতত কোচ নিয়োগ প্রক্রিয়া পর্যন্ত তিনি আমাদের সাথে কাজ করবেন।’
প্রশ্ন করা হলো, গ্যারি কারস্টেনের সঙ্গে বিসিবির চুক্তি কিভাবে, তিনি কোন ভূমিকায় কতদিন কাজ করবেন? বিসিবি সিইওর জবাব, ‘আসলে গ্যারি কারস্টেন আপাতত বাংলাদেশ দলের একটি ‘ইন্টার্নাল অডিট’ করছেন। সামনে আইসিসির যে সব কম্পিটিশন আছে-আইসিসি বিশ্বকাপ, ওয়ার্ল্ড টি-টোয়েন্টি; এগুলো সামনে রেখে কিভাবে বাংলাদেশ দলকে উন্নত করা যায়, কোন কোন জায়গায় কাজ করতে হবে, এই বিষয়গুলো পর্যালোচনা করছেন। তিনি বোর্ডকে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দিবেন। একই সাথে কোচ নিয়োগ নিয়েও তিনি কাজ করছেন। আমরা ইতোমধ্যে কয়েকজন কোচের নাম দিয়ে সংক্ষিপ্ত তালিকা করেছি, গ্যারি কারস্টেনের কাছেও কিছু নাম আছে। আপাতত দলের পরিস্থিতি পর্যালোচনার পর তিনি হয়তো তার পরামর্শ আমাদের দিবেন যে কোন জায়গায় আমাদের বেশি কাজ করতে হবে এবং এরপর তিনি বলবেন কোন কোচ আমাদের জন্য বেশি কার্যকর হবেন।’
দল পর্যালোচনা, নাকি কোচ নিয়োগ? এখন কারস্টেন কোন কাজকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে নিজামউদ্দীন চৌধুরী সুজন বলেন, ‘টিম পর্যালোচনাটা আমাদের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। উনি ইন্টারনাল অডিট করছেন, এতে আলাদা প্রত্যেক খেলোয়াড়ের সঙ্গে উনি বসার চেষ্টা করছেন। এ ছাড়া জাতীয় দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গেও উনি বসবেন। বিশেষ করে দল নির্বাচক, বোর্ড পরিচালকদের সঙ্গে আলাদা আলাদাভাবে বসার পরিকল্পনাও তার রয়েছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি আপনাদের জানাতে চাচ্ছি যে, উনি খুব স্বাধীনভাবে কাজ করতে চাচ্ছেন এবং সেভাবেই তিনি কাজ করছেন। উনাকে শুধুমাত্র আমরা লজিস্টিক সাপোর্ট দিচ্ছি। উনার যার সাথে প্রয়োজন, তার সাথে যোগাযোগ করে তিনি নিজেই মিটিং টাইম ঠিক করে নিচ্ছেন।’
কোচ নিয়োগ প্রক্রিয়া কতদিনের মধ্যে সম্পন্ন হতে পারে? জানতে চাইলে বিসিবি সিইও বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হলো, ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের আগে এই প্রক্রিয়া শেষ করা। এরপর কাজের প্রক্রিয়া বা পরিস্থিতি অনুসারে আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিবো।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিসিবির কোচের শর্টলিস্টে যারা আছে, তাদের নাম কারস্টেনের কাছে পাঠানো হয়েছে। তিনি বাংলাদেশে এসে কাজ করছেন, এ জন্য হয়তো মনে হচ্ছে উনি এখন কাজ করছেন। কিন্তু ভারতে থাকতেও তিনি কাজ করেছেন। আমরা যে সব নাম তার কাছে পাঠিয়েছি, তাদের সঙ্গে উনি যোগাযোগ করছেন। উনার নিজের তালিকায় থাকা কোচদের সঙ্গেও তিনি আলোচনা করছেন।’
সম্ভাব্য কোচের সংক্ষিপ্ত তালিকায় যাদের নাম আছে, তারা কি বাংলাদেশে আসবেন? নিজামউদ্দীন চৌধুরী সুজনের জবাব , ‘এটা এখনই নয়, দল পর্যালোচনা শেষে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এরপর আমরা নিয়োগ সংক্রান্ত চূড়ান্ত কাজে হাত দিবো।’
এআরবি/এমএমআর/আরআইপি