জাতীয় দলে জায়গা পাকা করাই মূল লক্ষ্য : আরিফুল
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলে পেস বোলিং অলরাউন্ডারের হাহাকার বেশ পুরনো। কখনো আবুল হাসান রাজু, কখনো জিয়াউর রহমান আবার কখনো সৌম্য সরকারের মাঝে খোঁজা হয়েছে পরম আরাধ্য পেস বোলিং অলরাউন্ডারের জায়গাটি। তবে টাইগারদের এই অভাব মেটাতে চলতি বছরেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছে পেস বোলিং অলরাউন্ডার আরিফুল হকের।
বছরের শুরুতে শ্রীলংকার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে অভিষেক হয় আরিফুলের। সিরিজের ২ ম্যাচে মোটে ৪টি বল খেলার সুযোগ পান তিনি। বোলিং করতে পারেননি ১ ওভারও। ফলে জাতীয় দলের হয়ে নিজের অলরাউন্ড স্বত্ত্বার পুরোপুরি প্রদর্শন করতে পারেননি আরিফুল। তাই পুনরায় প্রাথমিক স্কোয়াডে ডাক পেয়ে জাতীয় দলে নিজের জায়গা পাকা করাই মূল লক্ষ্য হিসেবে নিয়েছেন ডানহাতি এই অলরাউন্ডার।
আসন্ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের জন্য ঘোষিত ৩১ সদস্যের স্কোয়াডে ডাক পেয়ে বর্তমানে ফিটনেস ক্যাম্পে জাতীয় দলের সাথে অনুশীলন করছেন আরিফুল। সোমবার অনুশীলনের ফাঁকে সংবাদ মাধ্যমের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘আমার মূল লক্ষ্যই হলো, জাতীয় দলে থিতু হওয়া। কারণ আমি এখনো দলে থিতু নই। দলে থিতু হওয়ার পরে ভাববো, আমার ভূমিকা নিয়ে। হয়তো পরিস্থিতিই ঠিক করে দেবে আমি কোথায় ব্যাট করবো, কীভাবে ব্যাট করবো। এগুলো সব ঠিকঠাক করতে আমাকে আগে জাতীয় দলের পাকাপোক্ত অলরাউন্ডার হিসেবে তৈরি করে নিতে হবে।’
ঘরোয়া ক্রিকেটে ছয়-সাত নম্বরে নেমে ঝড়ো ইনিংস খেলতে জুড়ি নেই আরিফুলের। বাংলাদেশের কোন খেলোয়াড় এত বড় বড় ছক্কা মারতে পারেন তা দেখিয়েছেন আরিফুলই। ঝড়ো ইনিংস খেলতে নিজের মানসিক প্রস্তুতির কথা বলতে গিয়ে আরিফুল জানান, ‘আমি যখন ব্যাট করতে নামি তখন চিন্তা করি এক মনোযোগে ধরে খেলার চেষ্টা করবো। বাজে বল পেলে মারবো। ডট বল খেলবো না, নিয়মিত স্ট্রাইক রোটেট করে যাবে। বড় শট খেলার চিন্তা করি শেষের দিকে। ইনিংস শেষ করার চিন্তা থেকেই এমনটা করি আমি। ইনিংস শেষের দিকে নিয়ে গেলে শেষের কয়েক ওভার মেরে খেলতে পারবো। এভাবেই মাইন্ডসেট থাকে আমার।’
প্রতিনিয়তই নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে অনুশীলন করছেন ২৫ বছর বয়সী এই পেস বোলিং অলরাউন্ডার। প্রতিপক্ষের পরিকল্পনা আন্দাজ করে সেই অনুযায়ী প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি। আরিফুল বলেন, ‘ক্রিকেটে উন্নতির কোন শেষ নেই। আন্তর্জাতিক ম্যাচে প্রতিপক্ষ অনেক পরিকল্পনা করে মাঠে নামে। আমাদের খেলার ভিডিও অ্যানালাইসিস করে। আমাদের বাংলাদেশি বোলারদের পেস বোলার দিয়ে বেশি অ্যাটাক করে। লোয়ার অর্ডারে শর্ট বল বেশি করে। আমার মনে হয়, এসব পরিকল্পনা অকার্যকর করে দেয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে।’
ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে যাওয়ার আগে আফগানিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ। এই সিরিজে টাইগারদের প্রধান সমস্যার কারণ হতে পারেন আফগানদের দুই স্পিনার মুজিব উর রহমান এবং রশিদ খান। এই দুই স্পিনারকে সামলানোর জন্য তাদের খেলা দেখে, বোলিংয়ের ভিডিও দেখে প্রস্তুতি নিচ্ছেন আরিফুল।
আইপিএলে খেলার ফলে আফগানদের এই দুই স্পিনার অভিজ্ঞতায় এগিয়ে থাকবেন বলে মনে করেন আরিফুল। তিনি বলেন, ‘আমাদের বিপক্ষে যারা বোলিং করবে তাদের (রশিদ-মুজিব) আইপিএলে খেলা দেখছি। আফগানিস্তানের মুজিব আছে, ওকে আমরা ওইভাবে দেখিনি। রশিদ খানকে বিপিএলে দেখেছি। সবমিলিয়ে ওদের কীভাবে খেলা যায় তা নিয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
আফগানদের বিপক্ষে সিরিজে বাংলাদেশ দলের সম্ভাবনা নিয়ে আরিফুল বলেন, ‘ছোট ফরম্যাটের জন্য আফগানিস্তান সবসময়ই ভালো দল। ওদের বোলিং বেশ শক্তিশালী, ব্যাটিং মনে হয় অতোটা না। সিরিজটা জমজমাট হবে। মনে হচ্ছে আমরা তিনটাতেই জিতবো।’
আফগানিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজটি অনুষ্ঠিত হবে ভারতের দেরাদুনে। নতুন এই স্টেডিয়ামে মানিয়ে নিতে খুব একটা সমস্যা হবে না বলে মনে করেন আরিফুল, ‘এর আগে আমি একবার দেরাদুনে খেলতে গিয়েছিলাম। ওখানে প্রচুর গরম থাকে। আবার মাঝে মাঝে বৃষ্টি হলেও প্রচুর গরম পড়ে। গরম নিয়ে আসলে মাথা ঘামানোর কিছু নেই। আমাদের এখানেও গরম পড়ে। ওখানের কন্ডিশন নিয়ে চিন্তা মূলতঃ শুধু নতুন জায়গা বলেই। অন্যথায় কোন সমস্যা নেই।’
এসএএস/আইএইচএস/পিআর