প্রাথমিক দলে অভিজ্ঞ রাজ্জাকের সঙ্গে তরুণ শান্ত!
প্রধান নির্বাচক আগের দিন জানিয়েছিলেন, আজকের কথা; কিন্তু সকালেই জানিয়ে দিলেন আজ নয়, কাল বিকেলের আগে দল ঘোষণা নয়। শনিবার দুপুর গড়িয়ে বিকেল নামতেই জানা গেল আরেক তথ্য, কাল রোববারও নয়। সোমবারও হবে না। শেষ অবধি হয়তো মঙ্গল কিংবা বুধবারের আগে আফগানিস্তানের সাথে বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের প্রাথমিক দল ঘোষণা হবে না। কেন?
হোক তা প্রাথমিক স্কোয়াড কিংবা চূড়ান্ত দল- ক্রিকেটার বাছাইয়ের পর দুটি ধাপ অতিক্রম করায় তা মিডিয়ার কাছে পৌঁছায়। প্রথম ধাপ বিসিবির ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটি চেয়ারম্যান আকরাম খানের সাক্ষর। এরপর বোর্ড সভাপতির অনুমোদন। ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটি চেয়ারম্যান আকরাম খান কক্সবাজারে সাবেক ক্রিকেটারদের মিলন মেলা ও টুর্নামেন্ট ‘মাস্টার্স ক্রিকেট কার্নিভালে’ ব্যস্ত। আজ বিকেলে যার ফাইনাল।
খেলা শেষে রাতের, না হয় আগামীকাল সকালের ফ্লাইটে ঢাকা ফিরবেন তিনি। তাই আজ আর দল ঘোষণা হবে না। আর কাল আকরাম খান রাজধানীতে ফিরে এলেও প্রাথমিক দল ঘোষণার সম্ভাবনা কম। কারণ, বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন দেশের বাইরে সিঙ্গাপুর। ফিরতে ফিরতে সোম-মঙ্গলবার লেগে যাবে। তাই দল ঘোষণায় আরও অন্তত দিন দুয়েক বিলম্ব হতে পারে। শনিবার বিকেলে এ তথ্য নিশ্চিত করে প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু জাগো নিউজকে জানালেন, ‘আমরা খেলোয়াড় তালিকা চুড়ান্ত করে বোর্ডে জমা দিয়েছি। এখন যেহেতু পাপন ভাই (বোর্ড প্রধান) দেশের বাইরে, তিনি ফিরে আসার পরে ঘোষণা। তাই দু’একদিন বিলম্ব হতে পারে।’
ঘোষণা যেদিনই হোক, আসল খবর হলো আফগানদের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট, ওয়ানডে আর টি টোয়েন্টি সিরিজকে সামনে রেখে ৩০ জনকে প্রাথমিক ক্যাম্পে ডাকা হচ্ছে। সেই ক্রিকেটারদের তালিকা বোর্ডে জমা হয়ে গেছে।
কারা ওই ৩০ জন? একদম আনকোরা নতুন কতজন? কিংবা অভিজ্ঞ ও পরিণত ক্রিকেটারদের মধ্যে যারা ঘরোয়া ক্রিকেটে ভাল খেলেছেন, সদ্য সমাপ্ত বিসিএলে রান করেছেন সেই তুষার ইমরান, নাঈম ইসলাম ও শাহরিয়ার নাফীসরা কি সেই তালিকায় আছেন?
কৌতুহলি প্রশ্ন অনেকের মনে। যেহেতু প্রাথমিক খেলোয়াড় তালিকা এখনো বোর্ড সভাপতির হাতেই পৌঁছায়নি, তাই প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু দল নিয়ে কোনরকম আগাম মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে তার কথায় কিছু ইঙ্গিত মিলেছে বৈকি। তাহলো, তুষার ইমরান , শাহরিয়ার নাফীস ও নাঈম ইসলামসহ যারা বেশ কিছুদিন জাতীয় দলের বাইরে, তাদের সরাসরি দলে নেয়ার সম্ভাবনা খুব কম। প্রায় শূন্যের কোঠায়। এই সিনিয়র ক্রিকেটাররা সবাই ঘরোয়া ক্রিকেটে ভাল খেলছেন। রানে আছেন। তারপরও নির্বাচকরা তাদের সরাসরি জাতীয় দলে বিবেচনায় আনতে চান না।
প্রশ্ন জাগতে পারে, তবে কি জাতীয় দলের বাইরে ছিটকে পড়া অভিজ্ঞ ও পরিণত ব্যাটসম্যানদের রান করাই কি দলে ফেরার মুল মানদণ্ড নয়? ভাল খেলে আর রান করেও যদি আবার জাতীয় দলে না ফেরা যায়, তাহলে মূল দলে ফেরার পথ কি?
মিনহাজুল আবেদিন নান্নুর কথা শুনে মনে হলো, গত এক বছর যারা ঘুরে-ফিরে জাতীয় দলের হয়ে খেলেছেন- তারাই অগ্রাধিকার পাবেন। তাদেরকেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের প্রাথমিক ক্যাম্পে ডাকা হবে। আর তুষার, নাঈম ও শাহরিয়ার নাফীসদের আগে ‘এ’ দলে সুযোগ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাদের ম্যাচ টেম্পারামেন্ট ও পারফরমেন্স খুঁটিয়ে দেখার কথা ভাবা হচ্ছে। তার মানে তাদের জায়গা হবে এইচপি এবং ‘এ’ দলে। তাই এই তিনজনের কারোরই জাতীয় দলের ৩০ জনের প্রাথমিক স্কোয়াডে জায়গা হবার সম্ভাবনা নেই।
এই তিন ইনফর্ম সিনিয়র ও পরিণত উইলোবাজ ৩০ জনের তালিকায় জায়গা না পেলেও অভিজ্ঞ বাঁ-হাতি স্পিনার আব্দুর রাজ্জাক রাজ আছেন বিশেষ বিবেচনায়। প্রধান নির্বাচকের ঘনিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের প্রাথমিক ক্যাম্পে ডাক পাচ্ছেন বাঁ-হাতি স্পিনার রাজ্জাক।
বলার অপেক্ষা রাখে না, সেই ২০১৪ সালে শেষ টেস্ট খেলা রাজ্জাক এ বছর ফেব্রুয়ারিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ঢাকায় শেষ টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন। ওই ম্যাচে ১২৩ রানে ৫ উইকেট (৪/৬৩+১/৬০) দখল করেছেন এ বাঁ-হাতি স্পিনার। চার বছর পর দলে ফিরে বল হাতে নজরকাড়া রাজ্জাককে তাই বিবেচনায় আনা হচ্ছে। নির্বাচকরা ধরে নিয়েছেন, শুধু ঘরোয়া ক্রিকেটে নয়, এখনো টেস্টের মত ক্রিকেটের সবচেয়ে কুলিন ও অভিজাত মঞ্চেও বল ঘোরানোর এবং প্রতিপক্ষর সমীহ জাগানোর পর্যাপ্ত সামর্থ আছে রাজ্জাকের। তাই তাকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের প্রাথমিক দলেও রাখা হচ্ছে।
বলার অপেক্ষা রাখে না, তুষার ইমরান যেমন প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ব্যাট হাতে একের পর এক সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে রেকর্ড গড়ে যাচ্ছেন, বল হাতে রাজ্জাকও একই ভাবে নিজের মেধা, প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছেন। সদ্য শেষ হওয়া বিসিএলের শেষ তিন ম্যাচে তিন তিনবার পাঁচ বা তার বেশি উইকেট শিকারী রাজ্জাক।
শতভাগ ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে যেখানে ব্যাটসম্যানরা রান উৎসবে মেতেছেন, সেখানে বোলারদের মধ্যে রাজ্জাকই একমাত্র মাথা তুলে দাঁড়িয়েছেন। প্রতি ম্যাচে মাপা লাইন ও লেন্থে বল করার পাশাপশি টার্ন আদায় করা এ বাঁ-হাতি স্পিনার (৫/৫৩+৬/৪৮+৬/১০৬+৩/৭৩+৩/৬৮+০/৭৪) ২৩ উইকেট শিকারী। তাই তাকে স্পিন বিকল্প হিসেবে আমলে আনা হচ্ছে। এ অভিজ্ঞ স্পিনার প্রাথমিক অনুশীলন ক্যাম্পের ফিটনেস টেস্টে উত্তীর্ন হতে পারলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে দলে থাকলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
এদিকে অভিজ্ঞ রাজ্জাকের সাথে ৩০ জনের তালিকায় তরুণ নাজমুল হোসেন শান্তর জায়গা পাওয়াও একরকম নিশ্চিত বলে জানা গেছে। এবারের প্রিমিয়ার লিগে আবাহনীর হয়ে চারটি সেঞ্চুরি সহ ৭৪৯ রান করে সর্বাধিক স্কোরার শান্ত বিসিএলেও নজর কেড়েছেন। এই প্রথম শ্রেণির আসরে তার শেষ পাঁচ ইনিংস হলো ৫০+৪+৭৩+৪৫+৮৯।
ধারাবাহিকভাবে সব ফরম্যাটে রানে থাকা শান্তর দিকে নির্বাচকদের নজর রয়েছে। হাব-ভাবে বোঝা যাাছে এ তরুণ বাঁহাতি টপ অর্ডারের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে যাবার সম্ভাবনাও প্রচুর।
এআরবি/আইএইচএস/আরআইপি