টেস্টেই বিবেচনায় আছেন শাহরিয়ার নাফীস-নাঈম
মোহাম্মদ আশরাফুলের মত পাতানো ম্যাচ খেলে ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিষিদ্ধ হননি। তাই তাদের ঘরোয়া ক্রিকেট খেলায় কোন রকম নিষেধাজ্ঞাও ছিল না। তাদের গায়ে নিন্দার কাটা লাগেনি। তারা নিয়মিত ঘরোয়া ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। নিয়মিত পারফরম করেছেন। তাদের ব্যাটে বইছে রানের ফলগুধারা। গত দুই-তিন বছরে ঢাকার ক্লাব ক্রিকেট, জাতীয় লিগ ও বিসিএলে রান সংগ্রহকারিদের তালিকায় ওপরের দিকেই আছে শাহরিয়ার নাফীস আর নাঈম ইসলামের নাম। কিন্তু তারপরও তারা উপেক্ষিত। জাতীয় দলের বাইরে।
২৪ টেস্টে ৪৮ ইনিংসে এক সেঞ্চুরি আর সাত হাফ সেঞ্চুরিতে ১২৬৭ রান করা এ বাঁ-হাতি ওপেনার কাম টপ অর্ডার পাঁচ বছর টেস্ট দলের বাইরে। ২০১৩ সালের এপ্রিলে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে শেষ টেস্ট খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন বন্দর নগরি চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে। তারপর আর টেস্ট খেলা হয়নি। অথচ এই চার-পাঁচ মৌসুমের প্রায় বছর ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো খেলেছেন। নিয়মিত রানও করেছেন। কিন্তু আর টেস্ট খেলা হয়নি শাহরিয়ার নাফীসের।
অথচ তার চেয়ে দুর্বল ও জীর্ণ পরিসংখ্যান নিয়েও সৌম্য সরকার টেস্ট খেলেছেন। টেস্ট পারফরমারের চেয়ে ওয়ানডে ব্যাটসম্যান শাহরিয়ার নাফীস নিজেকে দূর্ভাগা ভাবতেই পারেন। পরিসংখ্যানকে মানদণ্ড ধরলে শাহরিয়ার নাফীস বাংলাদেশের সব সময়ের অন্যতম সফল টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান, পরিসংখ্যানও সে সাক্ষীই দিচ্ছে। ৭৫ ওয়ানডেতে চার সেঞ্চুরি আর ১৩ হাফ সেঞ্চুরি। ৩১.৪৪ গড়ে রান ২২০১। অথচ সেই ২০১৫ সালের ২১ জুন নটিংহ্যামে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলার পর গত তিন বছরে অবহেলিত শাহরিয়ার নাফীস। এমন নয়, ব্যাটে রান নেই। দেশীয় ক্রিকেটে ৫০ ওভারের একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক আসর প্রিমিয়ার লিগের এবারের আসরেও সমান দুটি করে সেঞ্চুরি ও হাফ সেঞ্চুরি সহ ৫৫০ রান করে রান তোলায় ১১ নম্বরে আছেন শাহরিয়ার নাফীস। অথচ এই তো শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ঘরের মাঠে জাকির, আফিফ হোসেনের মত আনকোরা তরুণরা সুযোগ পেলেও জাতীয় দলে অবহেলিত শাহরিয়ার নাফীস।
একই অবস্থা নাঈম ইসলামের। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে না হোক, টেস্ট আর ওয়ানডেতে নাঈম এক সময় ছিলেন অপরিহার্য সদস্য। কিন্তু ২০১২ সালের নভেম্বর থেকে ভাগ্য বিপর্যয়। ঐ বছর ঘরের মাঠে ওয়েষ্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দুই টেস্ট সিরিজই শেষ। তারপর আর গত ছয় বছরে টেস্ট খেলা হয়নি নাঈমের। অথচ ঐ সিরিজের প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে ঢাকার শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে অনবদ্য সেঞ্চুরি ( ৩৫৩ মিনিটে ২৫৫ বলে ১৭ বাউন্ডারিতে ১০৮) হাকান নাঈম।
শেষ সিরিজে শতরান করে বাদ পড়া! বিশ্ব ক্রিকেটে যে নেই তা নয়, আছে তবে খুব কম। কিন্তু বাংলাদেশে অমন দূর্ভাগা ক্রিকেটার মাত্র একজন। তিনি নাঈম। ২০১৪ সালের ১ মার্চ ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামে আফগানিস্তানের সঙ্গে শেষ ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরি হাঁকাতে না পারলেও ৫১ বলে ৩৫ রানের মাঝারি ইনিংস উপহার দেয়ার পরও বাদ। তারপর লাল সবুজ জার্সি গায়ে আর মাঠে নামা হয়নি এ মিডল অর্ডার কাম অফস্পিনারের বদলে বার বার নাসির, মোসাদ্দেক ও মিরাজ বিবেচনায় আসলেও নাঈম উপেক্ষিতই থেকে গেছেন।
এমন নয় যে, ঘরের ক্রিকেটে ভালো খেলতে পারেননি, ব্যাটে রান নেই, তাই বিবেচনায় আসেননি। বাস্তবে তার উল্টো। জাতীয় লিগ, বিসিএল আর প্রিমিয়ার লিগে নাঈমের ব্যাটে রান আছে। এবারো দুই তুর্কি তরুণ নাজমুল হোসেন শান্ত (৭৪৯) আর এনামুল হক বিজয়ের (৭৪৪) সঙ্গে সমানতালে পাল্লা দিয়ে প্রিমিয়ার লিগে ৭২০ রান করে রান তোলায় তিন নম্বরে জায়গা করে নিয়েছেন নাঈম।
এই যে ভালো খেলেও বার বার উপেক্ষিত হওয়া। নির্বাচক ও টিম ম্যানেজমেন্টের মন জয় করতে না পারা। বিবেচনায় না আসা। তা জন্ম দিয়েছে অনেক প্রশ্নের। ক্রিকেট অনুরাগীদের কৌতূহলী জিজ্ঞাসা বাঁ-হাতি টপ অর্ডার শাহরিয়ার নাফীস আর নাঈম ইসলাম আর কতকাল উপেক্ষিত থাকবেন? প্রতিবার ঘরের ক্রিকেটে রান করেও কেন বিবেচনায় আসছেন না তারা? তবে কি তাদের বিষয়ে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছেন নির্বাচকরা? শাহরিয়ার নাফিস আর নাঈম ইসলামের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার কি তবে শেষ?
তাদের বিষয়ে আসলে টিম ম্যানেজমেন্ট আর নির্বাচকদের চিন্তা ভাবনাই আসলে কি? তা জানতে রাজ্যের কৌতূহলী, আগ্রহ সবার। প্রধান নির্বাচক নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নুর কথা শুনে অবশ্য মনে হয় না তাদের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শেষ। বরং কথা শুনে মনে হচ্ছে শাহরিয়ার নাফীস আর নাঈম ইসলামকে নিয়ে নেতিবাচক নয় ইতিবাচক চিন্তা ভাবনাই আছে।
জাগো নিউজের সঙ্গে এ ইস্যুতে একান্তে আলাপে তাই তো মিনহাজুল আবেদিনের এমন সংলাপ, ‘শাহরিয়ার নাফীস আর নাঈম ইসলামের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে; এমন কথা বলিনি আমরা। বরং তাদের দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেটে খেলানো যায় কি না? সে চিন্তা আছে আমাদেরও। আমরা তাদের দুজনকেই টেস্ট খেলানোর কথা ভাবছি। তাদের আবারো টেস্ট দলে ফিরিয়ে আনা যায় কি না?’
প্রধান নির্বাচকের ওপরের মন্তব্যে একটি বার্তা পরিষ্কার শাহরিয়ার নাফীস আর নাঈম ইসলামকে ওয়ানডে কিংবা টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে নয়, টেস্ট খেলানো যায় কি না, এমন চিন্তা আছে।’
ভাববেন না, শাহরিয়ার নাফীস আর নাঈম ইসলামের ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে বিবেচনায় না আসার কথাটি বুঝি উহ্য আছে। আসলে তা নয়। জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপে সে বিষয়ে সরাসরি মন্তব্যও করেছেন মিনহাজুল আবেদিন।
তাই তো মুখে এমন কথা, আমরা দু'জনকেই খুঁটিয়ে দেখেছি। তা দেখে মনে হয়েছে শাহরিয়ার নাফীসের ব্যাটিং চলনসই হলেও ফিল্ডিং দূর্বলতা পরিষ্কার। তাই তাকে একদিনের সীমিত ওভারের ক্রিকেটে বিবেচনায় আনতে চাচ্ছি না। আর নাঈমের ব্যাটিং অ্যাপ্রোচ পারফরমেন্সটাও দীর্ঘ পরিসর উপযোগী। তাই তাকেও টেস্ট ম্যাটিরিয়েল হিসেবেই ভাবতে চাই আমরা।’
প্রধান নির্বাচকের কথায় আর কিছু বিষয় উঠে এসেছে। তার কথায় পরিষ্কার শাহরিয়ার নাফীস আর নাঈম ইসলামের বিসিএল ও জাতীয় লিগের পারফরমেন্সও পাখির চোখে পরখ করা হবে। আজ থেকে শুরু হওয়া বিসিএলে ভালো খেলতে পারলে তাদের অবশ্যই বিবেচনায় আনা হবে। তবে তাই বলে তারা যে খুব শীঘ্রই জাতীয় দলে ফিরবেন এমন নিশ্চয়তাও নেই।
শাহরিয়ার নাফীস আর নাঈম ইসলামকে আগে ‘এ’ দলে খেলানোর চিন্তা ভাবনা চলছে। আর মাত্র দেড় মাস পর আগামী জুনে শ্রীলঙ্কার ‘এ’ দল আসছে বাংলাদেশ সফরে। সেখানে একদিনের সীমিত ওভারের ম্যাচের পাশাপাশি তিনটি চার দিনের ম্যাচ খেলবে লঙ্কান ‘এ’ দল। ঐ তিন ম্যাচের অন্তত একটিতে শাহরিয়ার নাফীস ও নাঈমকে খেলানোর কথা ভাবা হচ্ছে।
নান্নুর শেষ কথা, আমরা আগামীতে এইচপি আর এ দলের কার্যক্রম একসঙ্গে চালাবো। শ্রীলঙ্কা ‘এ’ দলের সঙ্গে তিনটি চার দিনের ম্যাচে শাহরিয়ার নাফীস ও নাঈমকে সুযোগ দিয়ে তাদের সর্বশেষ অবস্থা খুঁটিয়ে দেখার চিন্তা আছে।’
তার মানে শাহরিয়ার নাফীস ও নাঈমকে আগে ‘এ’ দলের বৈতরণী পাড়ি দিতে হবে। দেশের মাটিতে শ্রীলঙ্কা ‘এ’ দলের বিপক্ষে চার দিনের ম্যাচে সুযোগ পেয়ে ভালো করতে পারলেই কেবল আবার টেস্ট দলে ডাক আসতে পারে। তার আগে নয়।
এআরবি/এমআর/পিআর