এক জয়েই হতাশার মেঘ কেটে উঠলো নতুন সূর্য
ক্রিকেট খেলাটাই এমন। খারাপ সময়ে প্রত্যাশার বেলুন ফুটো হয়ে চুপসে যায়। স্বপ্ন-সাধের মৃত্যু ঘটে। তার বদলে হতাশার নীল চাদর ঢেকে দেয় চারিদিক। তখন প্রিয় দলকে নিয়ে প্রত্যাশার বদলে তৈরি হয় সংশয়-সন্দেহ।
খুব বেশি দিন আগের কথা নয়, গত ১২ মার্চ কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয়ের আগেও মাহমুদউল্লাহর দলকে নিয়ে চরম উদ্বিগ্ন ছিলেন ভক্তরা। রাজ্যের শঙ্কা এসে বাসা বেঁধেছিল, ‘কি জানি কি হয়’ অবস্থা ছিল।
কিন্তু মুশফিকুর রহিমের অবিশ্বাস্য ব্যাটিংয়ে অবিস্মরণীয় জয় ধরা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে কেটে গেছে সেই হতাশার মেঘ। আবার টাইগারদের ভাগ্যাকাশে লাল সূর্য উঁকি দিচ্ছে। সমর্থকদের মনেও স্বপ্ন এসে ভর করেছে।
এ স্বপ্ন ব্যর্থতার দেয়াল ভেঙ্গে বেরিয়ে আসার। এ প্রত্যাশা আবারো জয়রথ সচলের। এ জয়রথ সচল রাখা মানেই নিদাহাস ট্রফির ফাইনালে পৌঁছে যাওয়া।
ওই একটি জয়েই সম্ভাবনার প্রদীপ আবার জ্বলতে শুরু করেছে। এখন সামনে দুটি ম্যাচ আছে। দুটিতে জিতলে তো কথাই নেই। বিনা বাধায় ফাইনাল। অন্তত একটিতে জিততে পারলেও সম্ভাবনা থাকবে ফাইনালের।
অর্থাৎ, মোটা দাগে বলতে গেলে বলতে হয়, মাঝের কয়েক মাস বেশ খারাপ কাটার পর মাহমুদউল্লাহ, তামিম, লিটন, সৌম্য, মোস্তাফিজ আর মিরাজদের সামনে আবার আলোয় ফেরার হাতছানি ।
সেই গত বছরের শেষ দিকে দক্ষিণ আফ্রিকা গিয়ে শনির দশা শুরু। টেস্ট, ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি সিরিজে চরম ভাবে পর্যুদস্ত হওয়া। তারপর ঘরের মাঠে তিন জাতি ক্রিকেটে উড়ন্ত সূচনার পরও ফাইনালে শ্রীলঙ্কার কাছে খাবি খাওয়া। এরপর একদম প্রায় জিততে ভুলে যাওয়া। রীতিমত হারের বৃত্তে আটকে পড়া।
নিদাহাস ট্রফি খেলতে নেমে অধিনায়ক বিরাট কোহলি, অভিজ্ঞ মহেন্দ্র সিং ধোনি, এক নম্বর পেস বোলিং অলরাউন্ডার হার্দিক পান্ডিয়া আর পেসার জাসপ্রিত বুমরাহবিহীন রোহিত শর্মার ভারতের বিপক্ষে ছন্নছাড়া ও অনুজ্জ্বল পারফরম্যান্স করে মাত্র ১৩৯ রানে অলআউট, ৬ উইকেটের হার দিয়ে যাত্রা শুরু।
লক্ষ্য-পরিকল্পনা ও সংকল্পহীন শরীরি অভিব্যক্তি ও চরম অনুজ্জ্বল পারফরম্যান্স দেখে অতি বড় সমর্থকও আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু ১২ মার্চ যেন মরা গাঙে বাণ ডেকেছে। হারের বৃত্তে আটকা থাকা বাংলাদেশ রীতিমত অসাধ্য সাধন করে বসলো।
যে দল আগের ৭২ ম্যাচে কখনো ১৬৬ ‘র বেশি রান তাড়া করে জেতেনি, যারা আগের টানা তিন ম্যাচ ছিল হারের খাঁচায় বন্দী। সর্বশেষ ম্যাচে যাদের সাকুল্যে স্কোর ছিল ১৩৯, সেই দলটিই ২১৪ রানের হিমালয় সমান স্কোর টপকে গেলো বিপুল বিক্রমে।
দুই ওপেনার লিটন দাস (১৯ বলে ৪৩) আর তামিম ইকবাল (২৯ বলে ৪৭) প্রথম উইকেটে মাত্র ৫.৫ ওভারে ৭৪ রানের শক্ত ভীত গড়ে দেন। আর বাকি কাজটুকু সারেন মুশফিকুর রহীম। চার নম্বরে নামা মুশফিক বলতে গেলে একাই সব দায় দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে শেষ পর্যন্ত ৩৫ বলে ৭২ রানের ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেললে ৫ উইকেটের অবিস্মরণীয় জয়ের আনন্দে মেতে ওঠে বাংলাদেশ।
ওই এক জয়েই বদলে গেছে দৃশ্যপট। আবারো টাইগারদের নিয়ে স্বপ্নের জাল বুনছেন ভক্তরা। এ কারণেই আগামীকাল ভারতের সাথে ফিরতি ম্যাচটি পেয়েছে ভিন্ন মাত্রা। ৪৮ ঘন্টা আগে পাওয়া উদ্দীপক জয় ভালো করার রসদে পরিণত হয়েছে।
হিসেব নিকেশও মোটামুটি পরিষ্কার। বুধবার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল জিতলে বাংলাদেশ আর ভারতের পয়েন্ট সমান (তিন খেলায় দুটি করে জয়) হয়ে যাবে। তখন বরং স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা খানিক পিছিয়ে যাবে। ১৬ মার্চ টাইগারদের সাথে ম্যাচটি লঙ্কানদের বাঁচা-মরার লড়াই হয়ে যাবে।
এদিকে কাল ভারতের কাছে হারলেও বাংলাদেশের সম্ভাবনা শেষ হয়ে যাবে না। তখন ভারত চার খেলায় তিন জয় নিয়ে সবার আগে চলে যাবে ফাইনালে। আর ১৬ মার্চ বাংলাদেশ আর শ্রীলঙ্কার রবিন লিগের ফিরতি ম্যাচটি অঘোষিত সেমিফাইনালে রূপ নেবে। যে জিতবে সেই হবে দ্বিতীয় ফাইনালিস্ট।
কাজেই টাইগারদের এক জয়ে নিদাহাস ট্রফি গেছে জমে। ত্রিদেশীয় আসরে সত্যি সত্যিই ত্রিমুখী লড়াই এখন।
এআরবি/এমএমআর/এমএস