লঙ্কানদের সাথে ম্যাচ হবে আরও কঠিন
অতিবড় ভারত সমর্থকও মানছেন, রোহিত শর্মার নেতৃত্বে ভারতের যে দলটি নিদাহাস ট্রফি খেলছে, তার চেয়ে দিনেশ চান্দিমালের দলটি অনেক বেশি শক্তিশালি। লঙ্কানরা তুলনামূলক উজ্জীবিত, অনুপ্রাণিত ও আত্মবিশ্বাসী।
এই সেদিন বাংলাদেশকে তিন ফরম্যাটে পর্যুদস্ত করে আসায় নিজেদের সামর্থ্যের প্রতি লঙ্কানদের আস্থাও নিশ্চয়ই অনেক বেশি। তারওপর প্রথম দিন ভারতীয়দের উড়িয়ে দিয়ে স্বাগতিকরা আকাশে উড়ছে। আগামীকাল সেই দলের বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচ তাই আরও শক্ত, আরও কঠিন টাইগারদের।
এটা শুধুই অনুমান নির্ভর কথা নয়। বাংলাদেশ অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহও তাই মনে করছেন। তার ধারণা, ভারতের চেয়েও শ্রীলঙ্কার সাথে ম্যাচ হবে আরও কঠিন।
স্বাগতিকরা ফর্মে আছে। এই কদিন আগে বাংলাদেশের মাটিতে টাইগারদের হারিয়ে আসার কারণে মনস্তাত্ত্বিক দিক থেকেও লঙ্কানরা চাঙ্গা ও উজ্জীবিত। টাইগার দলের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক তাই মনে করেন, ‘ভারতীয়দের চেয়ে লঙ্কানরা ব্যাটিং ও বোলিংয়ে আরও শক্ত প্রতিপক্ষ।’
অত ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের দরকার নেই। খালি চোখেই দেখা যাচ্ছে, নিদাহাস কাপে ভারত পুরো শক্তিতে নেই। দলে নেই চার চারজন অতি নির্ভরযোগ্য এবং অপরিহার্য্য সদস্য-অধিনায়ক বিরাট কোহলি, অভিজ্ঞ ম্যাচ উইনার মহেন্দ্র সিং ধোনি, সময়ের অন্যতম সেরা পেস বোলিং অলরাউন্ডার হার্দিক পান্ডিয়া আর পেসার জাসপ্রিত বুমরা।
অধিনায়ক বিরাট কোহলি একাই একশো। ভারতীয় ব্যাটিংয়ের প্রায় অর্ধেক তার একার ওপর নির্ভরশীল। যে কোনো বোলিং শক্তিকে নিস্তেজ ও অকার্যকর করে দেয়ার অসাধারণ ক্ষমতার অধিকারি কোহলির রান ক্ষুধা অস্বাভাবিক। অনুকুল ও প্রতিকূল দুই অবস্থায় তার ব্যাট সমান সাবলীল। বড় ইনিংস খেলা যেন তার প্রতিদিনকার ব্যাপার। ব্যাট হাতে নামলে খুব খারাপ খেললেও ফিফটি। আর ষাটের ঘর পেড়িয়ে গেলেই তিন অংকে পা রাখাকে রীতিমত অভ্যাসে পরিণত করে ফেলেছেন।
নিশ্ছিদ্র ব্যাটিং শৈলির অধিকারি বিরাটের ধৈর্য্য, মনোযোগ ও মনোসংযোগ বিস্ময়কর! তাই তাকে কম রানে আউট করা ও উইকেটে আটকে রাখা খুব কঠিন। আর মিডল ও লোয়ার অর্ডারে মহেন্দ্র সি ধোনি এখনো অনেক বড় নির্ভরতা। সংকটে, বিপদে, বিপর্যয়ে ধোনির জুরি মেলা ভার। ইস্পাত কঠিন মনোবলে শত প্রতিকূলতা অতিক্রম করার সহজাত ক্ষমতা আছে তার। সেই সাথে ম্যাচ শেষ করার কাজটিও খুব ভালো পারেন।
আর পান্ডিয়া এখন সময়ের অন্যতম সেরা ও টাফ হার্ডহিটার। যে কোন উইকেটে এবং পরিবেশ-পরিস্থিতিতে শেষ দিকে প্রতিপক্ষ বোলারদের তুলোধুনো করতে পারেন পান্ডিয়া। আর কিছুটা অভিনব বোলিং অ্যাকশনের বুমরা ভাইটাল ব্রেক থ্রু দিতে পারেন খুব ভালো। মোদ্দা কথা, ভারতীয় দলের ব্যাটিং আর পেস বোলিং ডিপার্টমেন্টের প্রায় ৩০ থেকে ৪০ ভাগ নেই।
নিদাহাস কাপের ভারতীয় ব্যাটিং মানেই দুই ওপেনার রোহিত শর্মা- শিখর ধাওয়ান এবং সুরেশ রায়না আর মনিশ পান্ডে। আর বোলিং ডিপার্টমেন্টে বেশ কজন ফ্রন্টলাইন বোলার নেই। এখানে এক ঝাঁক নতুন ও নবীনদের আনাগোনা। বাঁহাতি পেসার জয়দেব উনাদকাত, দুই ডানহাতি মিডিয়াম পেসার শার্দুল ঠাকুর, বিজয় শঙ্কর এবং লেগস্পিনার যুজবেন্দ্র চাহালের গড়া বোলিং। ৮ মার্চ এই বোলিং সামলাতেই অস্থির টাইগার ব্যাটসম্যানরা। আগামীকাল শনিবার তাদের মুখোমুখি হতে হবে আরও ধারালো ও বৈচিত্র্যময় বোলিংয়ের।
যেখানে দুই দ্রুতগতির বোলার দুষ্মন্ত চামিরা আর নুয়ান প্রদীপের মিডিয়াম পেসার থিসারা পেরেরা এবং অফস্পিনার আকিলা ধনাঞ্জয়া আর দানুষ্কা গুনাথিলাকা এবং লেগস্পিনার জীবন মেন্ডিসের গড়া বোলিং আরও শানিত, ধারালো ও বৈচিত্র্যপূর্ণ।
বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের শর্ট বলে দুর্বলতা এখন ওপেন সিক্রেট। লঙ্কান ফাস্টবোলাররা নিশ্চয়ই বাড়তি গতিতে খাটো লেন্থে বল ফেলে তামিম, সৌম্য, লিটন , মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ ও সাব্বিরদের পুল শট খেলাতে চাইবেন। শেরে বাংলা ও সিলেটেও তা করে সফল হয়েছেন লঙ্কান ফাস্টবোলাররা।
এছাড়া স্পিনারদের প্রত্যেকের বলে কম বেশি টার্ন আছে। তাদের লাইন ও লেন্থও তুলনামূলক ভালো। ধনাঞ্জয়া আর গুনাথিলাকার বৈচিত্র্যপূর্ণ স্পিনের বিপক্ষে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের আরও হিসেবি এবং বুদ্ধিদীপ্ত ব্যাটিং করা ছাড়া উপায় নেই।
আর কুশল মেন্ডিস, দানুষ্কা গুনাথিলাকা, কুশল পেরেরা, উপুল থারাঙ্গা, দিনেশ চান্দিমাল আর জীবন মেন্ডিসের সাথে দুই ক্লিন বিগ হিটার থিসারা পেরেরা আর শানাকার সম্মিলনে সাজানো ব্যাটিং দৈর্ঘ্য-গভীরতা যথেষ্ট।
বাংলাদেশের সাথে দুই ম্যাচের সিরিজ মিস করা টপ অর্ডার কুশল পেরেরাই বাংলাদেশের বোলারদের জন্য সবচেয়ে চিন্তার কারণ। ভারতের সাথে যেখানে বাংলাদেশের একজন ব্যাটসম্যান ১১৫ ‘র বেশি স্ট্রাইকরেটে ব্যাট করতে পারেননি, সেখানে কুশল পেরেরা ব্যাট করেছেন ১৭৮.৩৭ স্ট্রাইকরেটে। তার (৩৭ বলে ৬ বাউন্ডারি ও ৪ ছক্কায় ৬৬) উত্তাল বাজির মুখেই ভারতের বোলিং হয়ে পড়ে এলোমেলো ।
আর শেষ দিকে শানাকা ও থিসারা পেরেরা লঙ্কানদের অনেক বড় শক্তি। যে কোনো বোলিংয়ের বিপক্ষে ডেড ওভারে হাত খুলে চার ও ছক্কা হাঁকানোর পর্যাপ্ত ক্ষমতা ও সামর্থ্য আছে দুজনার। এর মধ্যে থিসারা পেরোর সামর্থ্য প্রমাণিত। অনেক ম্যাচে শেষ দিকে তার ব্যাট জ্বলে ওঠায় জিতেছে শ্রীলঙ্কা।
নিদাহাস ট্রফিতে ভারত ও শ্রীলঙ্কার ম্যাচটি এক সময় পেন্ডুলামের মত দুলছিল। যে কেউ জিততে পারে, এমন সমীকরণে শেষ দিকে থিসারা পেরেরা ভারতীয় বোলারদের অবলীলায় ছক্কা ও দুই বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ম্যাচ শেষ করে দেন।
কাজেই ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহর অনুমান অমূলক নয়, প্রথম দিনের তুলনায় শনিবার আরও কঠিন পরীক্ষার মুখে পড়তে হবে তার দলকে। সে কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারবে টাইগাররা?
এআরবি/এমএমআর/পিআর