ওয়ালশের ক্লাসে সুইং-ইয়র্কার শিখছেন পেসাররা!
দক্ষিণ আফ্রিকা সফর থেকে ব্যর্থতাটা শুরু। এরপর বিপিএলে বাংলাদেশের কোনো পেসার খুব বেশি নজর কাড়তে পারেননি। যার ফলটা মারাত্মকভাবে পড়েছে সদ্য সমাপ্ত ত্রিদেশীয় সিরিজ ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজে। বাংলাদেশের পেসাররা ছিলেন যেন নখ-দন্তহীন বাঘ। বলে কোনো ধার নেই। ইয়র্কার, সুইং আর বাউন্স- কী জিনিস সে সবের কোনো কিছুই ছিল না লঙ্কানদের বিপক্ষে বাংলাদেশের পেসারদের বোলিংয়ে।
যে কারণে, শ্রীলঙ্কা সিরিজ শেষ হওয়ার পরই পেস বোলিং কোচ, কিংবদন্তী ক্যারিবীয় পেসার কোর্টনি ওয়ালশকে বিসিবি সভাপতি নির্দেশ দিয়েছিলেন বাংলাদেশের পেসারদের নিয়ে আলাদা প্রশিক্ষণ শিবির করার জন্য। সে মতেই শুক্রবার থেকে মিরপুর একাডেমি মাঠে শুরু হয়েছে পেসারদের স্পেশাল অনুশীলন। ১৪জন পেসার নিয়ে এই প্রশিক্ষণ শিবিরের আয়োজন করেছেন কোর্টনি ওয়ালশ।
১৪ জনের নাম ঘোষণা করলেও, এই প্রশিক্ষণ শিবিরে নেই মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি এখন রয়েছেন পিএসএল খেলতে, আরব আমিরাতে। পিএসএলে তিনি খেলছেন লাহোর কালান্দার্সে। বাকি ১৩ পেসার এবং ৫ ব্যাটসম্যান নিয়ে চলছে বিশেষ অনুশীলন। সেখানেই আজ অনুশীলন শেষে মিডিয়ার মুখোমুখি হয়ে কোন বিষয়টা শিখছেন ওয়ালশের ক্লাস থেকে- তা বর্ণনা করলেন উঠতি পেসার আবু হায়দার রনি।
সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে রনি জানালেন, কোর্টনি ওয়ালশের বিশেষ এই প্রশিক্ষণ থেকে তারা নতুন বলে কিভাবে বল করতে হয়, ডেথ ওভারে কিভাবে বোলিং করতে হয় এবং সুইং ও ইয়র্কার শিখছেন তারা।
শুরুতেই আবু হায়দার রনির কাছে জানতে চাওয়া হয়, প্রশিক্ষণ কেমন চলছে? জবাবে রনি বলেন, ‘ভালোই হচ্ছে। এখানে নতুন বলে কাজ করছি। ডেথ ওভারের কাজ হচ্ছে। ইয়র্কার নিয়ে কাজ করছি। এই কাজগুলো যদি সঠিকভাবে করতে পারি, তাহলে টি-টোয়েন্টি আর ওয়ানডেতে আমরা আরও ভাল করব।’
আপনাদের বোলিংয়ে মূলতঃ সমস্যাটা কী। যে সমস্যার কারণে বিশেষ এই প্রশিক্ষণ শিবির পরিচালনা করতে হচ্ছে! রনি বলেন, ‘আসলে সমস্যাটা ওইরকম না। কোর্টনি সুইং নিয়ে কাজ করছেন, নতুন বলে কীভাবে সুইং করানো যায়। পুরাতন বলে ইয়র্কার নিয়ে কাজ হচ্ছে। টি-টোয়েন্টিতে ব্লক হোলের প্রয়োগটা ভাল থাকলে টিকে থাকা সহজ।’ অর্থ্যাৎ নতুন বলে সুইং, পুরাতন বলে ইয়র্কার এবং ব্লক হোলে কিভাবে বল করে যাওয়া যায়- সে বিষয়েই পেসারদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন কোর্টনি ওয়ালশ।
ওয়ালশের এই প্রশিক্ষণ থেকে নিজেদের কতটা ঝালাই করে নিতে পারছেন আপনারা? এমন প্রশ্নের জবাবে আবু হায়দার রনি বলেন, ‘একেকজন একেক রকম। কেউ কেউ হয়ত ক্যাম্পে বাড়তি অনুশীলন করে। ক্যাম্পের পরে আমাদের যখন খেলা হয় প্রিমিয়ার লিগের, তখন অনুশীলনটা হয় না। তবু খেলার ফাঁকে কেউ কেউ করে। আমাদের পেসারদের উচিৎ ইয়র্কারটা দুই-তিন ওভার হলেও নিয়মিয় অনুশীলন করা।’
কোর্টনি ওয়ালশ তো নতুন বলে কিভাবে ভাল করতে হবে সে ব্যাপারে বিশেষ নজর দিয়েছেন। তো খেলোয়াড় হিসেবে আপনাদের এ ক্ষেত্রে কি করতে হবে বলে মনে করেন? এমন প্রশ্নের জবাবে রনি খুব সংক্ষিপ্ত উত্তর দিলেন, ‘এক্যুরেসিটা ভাল থাকতে হবে। জায়গায় (বল) থাকতে হবে।’
পেসারদের তাহলে স্কিলে সমস্যা বেশি? জবাবে আবু হায়দার রনি পুরোপুরি একমত হলেন না। তিনি বলেন, ‘আসলে সব জায়গায় সবাই পারফেক্ট হয় না। ঘাটতি থাকে, ওই ঘাটতি নিয়েই কাজ করতে করতে ভালো হবে।’
আবু হায়দার রনির সামনে এবার ব্যক্তিগত প্রশ্ন উঠলো। জানতে চাওয়া হলো, আপনার নিজের ঘাটতি কি? জবাবে তিনি বলেন, ‘সমস্যা কিছু বলেনি (ওয়ালশ)। শুধু স্যুইং নিয়ে কাজ করতে বলেছে। নতুন বলে সুইং নিয়ে কাজ করছে। ডেথ ওভারেও। আর দলে সুযোগ পাওয়া হচ্ছে ম্যানেজমেন্টের কাছে। উনারাই ভাল জানেন। আমি আমার কাজ করে যাব।’
বাংলাদেশে মাশরাফির পর এখনও পর্যন্ত ভালো পেসার নাই- এটা শুনতে হতাশ লাগে কি না? জানতে চাইলে কুটনৈতিক উত্তর দিলেন আবু হায়দার রনি। তিনি বলেন, ‘মাশরাফি ভাই তো অনেকদিন খেলতেছেন। আমাদের সবার আইডল তিনি। অনেক অভিজ্ঞ। আর মাশরাফি ভাই তো একদিনে হন নাই, অনেকদিন খেলার পর হইছে। আমরা ডে বাই ডে ভালো খেলতে খেলতে ফিউচারে ভালো করব।’
আবু হায়দার রনি এখনও শ্রীলঙ্কা যাননি কখনও। এ কারণে সেখানকার পরিস্থিতি কী হবে কিংবা কেমন করতে পারে বাংলাদেশ- এসব তিনি এখনও জানেন না। এ কারণে যখন তার কাছে জানতে চাওয়া হয়, শ্রীলঙ্কায় গিয়ে আমাদের পেসাররা কেমন করবে? তখন উত্তরটাও তার ছিল তেমনই। রনি বলেন, ‘শ্রীলঙ্কায় আসলে যাইনি কখনো। তবে মনে হয় আমরা আমাদের স্কিলগুলো কাজে লাগতে পারলে ভালোই হবে।’
আইএইচএস/আরআইপি