পূর্বাচলে ক্রিকেট স্টেডিয়ামের জমি নিয়ে টানাটানি
* ৩৭.৫ একর জমির পুরোটাই চায় বিসিবি
* ক্রীড়া মন্ত্রণালয় দিতে চায় ১৭ একর
* নতুন করে সারসংক্ষেপ প্রেরণের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের
* শেখ হাসিনার নামে হবে দেশের সবচেয়ে বড় এ ক্রিকেট স্টেডিয়াম
* পাঁচতারকা হোটেলসহ কমপ্লেক্সে থাকবে অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা
পূর্বাচলে অত্যাধুনিক ক্রীড়া কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) কাছ থেকে যে ৩৭.৫০ একর জমি বরাদ্দ নিয়েছে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় তার পুরোটাই চাচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। দেশের সবচেয়ে ধনাঢ্য এ ক্রীড়া সংস্থা নিজেদের মতো করেই সেখানে ক্রিকেট স্টেডিয়াম ও কমপ্লেক্স তৈরি করার পরিকল্পনা নিয়েছে। যদিও যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় বিসিবিকে দিতে চেয়েছিল ১৭ একর জমি। বাকি ২০.৫ একর জমিতে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের মাধ্যমে একটি কমপ্লেক্স তৈরি করার পরিকল্পনা ছিল।
ক্রিকেট বোর্ডকে স্টেডিয়াম নির্মাণের জন্য ১৭ একর জমি দিয়ে বাকি জায়গায় জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের মাধ্যমে কমপ্লেক্স নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। গত বছর ৩০ অক্টোবর আন্তঃমন্ত্রণালয়ের একটি সভায় দেয়া অর্থমন্ত্রীর ওই প্রস্তাবনার ওপর ভিত্তি করেই যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় স্টেডিয়াম নির্মাণের সারসংক্ষেপ পাঠিয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। অন্যদিকে বিসিবি নিজেদের উদ্যোগে স্টেডিয়াম নির্মাণের ইচ্ছের কথাও জানায় সরকারকে।
জমি নিয়ে দুই পক্ষের টানাটানির কারণে প্রধানমন্ত্রী ক্রীড়া মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রেরিত সারসংক্ষেপ অনুমোদন করেননি। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের মতামত নিয়ে নতুন করে সারসংক্ষেপ পাঠাতে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। পূর্বাচলে স্টেডিয়াম কীভাবে হবে, কারা করবে তা নির্ভর করছে মন্ত্রণালয় ও বিসিবির দ্বি-পাক্ষিক সভার উপর। এ মাসেই দুই পক্ষের এ আলোচনা হতে পারে বলে জানিয়েছেন বিসিবির এক পরিচালক।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিসিবির ওই পরিচালক জাগো নিউজকে বলেছেন, ‘আমরা পুরো জমিটাই চাই। দেশের সবচেয়ে বড় ক্রিকেট স্টেডিয়াম হবে পূর্বাচলে। ৬৫ থেকে ৭০ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতাসম্পন্ন এ স্টেডিয়াম হবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে। কমপ্লেক্সে থাকবে অত্যাধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা। পাশপাশি সেখানে পাঁচ তারা হোটেলও নির্মাণ করা হবে।’
রাজউকের এ জায়গা পেতে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়কে গুণতে হবে আনুমানিক ৩৩০ কোটি টাকা। তবে ক্রিকেট বোর্ড এ জায়গা পুরোটা নিলে দিতে হতে পারে এর ৫ গুণ। তার মানে সাড়ে ১৬’শ কোটি টাকার মতো। সে সঙ্গে স্টেডিয়াম ও কমপ্লেক্স নির্মানের বিশাল ব্যয় তো আছেই। অবশ্য জায়গা বরাদ্দ পাওয়ার ক্ষেত্রে অনেক ছাড় পাবে বলে বিসিবির প্রত্যশা। কারণ, এখানে স্টেডিয়াম হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণামতে। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের উন্নয়ন শাখার এক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী যেভাবে চাইবেন সেভাবেই পূর্বাচলে স্টেডিয়াম হবে।’
জাতীয় সংসদের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির ৩৫তম সভায় পূর্বাচলে ক্রিকেট স্টেডিয়াম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। কমিটির সভাপতি গাজীপুর-২ আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য মো. জাহিদ আহসান রাসেলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশ অনুযায়ী দ্রুত বিসিবির সঙ্গে আলোচনা করে নতুন সারসংক্ষেপ প্রেরণের উপর জোর দেয়া হয়েছে। আগামী জুনের মধ্যে পূর্বাচল শেখ হাসিনা ক্রিকেট কমপ্লেক্স নির্মাণ কার্যক্রম শুরুর প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের পরামর্শও দেয়া হয়েছে মন্ত্রণালয়কে।
সভায় কমিটির সদস্য যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী ও নেত্রকোনা-২ আসনের সংসদ সদস্য আরিফ খান জয়, পাবনা-৫ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক খন্দকার প্রিন্স, মানিকগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য নাঈমুর রহমান দুর্জয়, বগুড়া-২ আসনের সংসদ সদস্য মো. নুরুল ইসলাম তালুদকার এবং মহিলা-২৮ আসনের সদস্য আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
এ সভায় মানিকগঞ্জে শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম এবং শেখ রাসেল উপজেলা মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণকাজ দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করার জন্য প্রয়োজনী পদক্ষেপ গ্রহণের পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
আরআই/আইএইচএস/জেআইএম