ভিডিও EN
  1. Home/
  2. খেলাধুলা

পাপনও মানছেন, খুব দ্রুত একজন কোচ প্রয়োজন

ক্রীড়া প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৯:৫২ পিএম, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

চন্ডিকা হাথুরুসিংহে চলে গেছেন মাত্র দু’মাস হলো। এই দু’মাসে এমন কী হলো যে মোটামুটি সাচ্ছন্দে খেলতে থাকা একটি দল একেবারে টুপ করে মাটিতে পড়ে গেলো! একেবারে তলানীতে চলে গেলো! ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে হারলো, টেস্টে ভরাডুবি ঘটলো, শেষ পর্যন্ত টি-টোয়েন্টিতেও যাচ্ছেতাই অবস্থা। অনেকেই মনে করছেন, একজন ভালোমানের কোচ না থাকার কারণেই এমন অবস্থা হয়েছে। আবার কেউ কেউ মনে করছেন, দলের খেলোয়াড়দের মানসিক অবস্থাই তলানীতে নেমে গেছে, এ কারণে এমন পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে।

যত যাই হোক, বাংলাদেশ ক্রিকেট দলে যে একজন প্রধান কোচ নেই সেটাই প্রমাণ হলো এই সিরিজে। সহকারী কোচ রিচার্ড হ্যালসল এবং ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ সুজনকে হেড কোচের দায়িত্ব দিয়ে, সাকিব আল হাসান এবং মাশরাফিকে কোচের দায়িত্ব দিয়ে যে কোনোই লাভ হয়নি, সেটাই প্রমাণ হয়েছে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন, সেটাই জানিয়ে দিলেন।

আজ বিসিবিতে ক্রিকেটার, দলীয় কর্মকর্তাদের নিয়ে এক বৈঠক শেষে সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে পাপন জানিয়ে দেন, ক্রিকেটাররা এবং বর্তমান কোচিং স্টাফরা সুযোগ চেয়েছেন। সেই সুযোগ দিয়ে দেখা হয়েছে; কিন্তু এখানেই প্রমাণ হয়ে গেছে, আসলে কিছুই না। একজন কড়া ধরনের প্রধান কোচ প্রয়োজন। তাহলেই সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে।

অধিনায়ক সাকিব আল হাসান, টিম ম্যানেজমেন্ট এবং কোচদের সঙ্গে বৈঠকে বসার বিষয় নিয়ে নাজমুল হাসান পাপন বলেন, ‘পরশু খেলা শেষ হয়েছে। আমরা ওই সিরিজটা শুরুর আগে টিম ম্যানেজমেন্ট ও তিন অধিনায়ক নিয়ে বসেছিলাম। ওরা তখন রিকুয়েস্ট করেছিল যে, এই সিরিজে কোনো কোচের দরকার নেই। ওরা নিজেরাই নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। যারা আছে তারাই সামলাতে করতে পারবে। ওরা আত্মবিশ্বাসী ছিল যে, ওরা আরও ভালো করবে। সকলের কথা শুনে আমি একমত হয়েছিলাম যে, এবার ওরাই খেলবে।’

আগের ওই পরিস্থিতি অতীত হয়ে গেছে জানিয়ে, ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে চান পাপন। তিনি বলেন, ‘এখন ওই পিরিয়ড শেষ। এখন তো আগের মতো আসতেই হবে। স্বাভাবিকভাবে আমি বিদেশ থেকে এসে কালকে অনেকের সাথেই বসতে চেয়েছিলাম...; কিন্তু অনেকেই নেই। শুনলাম অনেকেই দেশে নেই। যারা ছিল তাদের মধ্যে সাইমন হেলমটকে ডেকেছিলাম, ওয়ালশ ছিল, পরিচালক সুজন ও দুই নির্বাচককে ডেকেছি। সামনেই যেহেতু আমাদের নিদাহাস কাপ আছে। সেটা নিয়ে আলাপ আলোচনার জন্য সাকিবকেও ডাকা হয়।’

কেন এই বৈঠক? সে ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে পাপন বলেন, ‘বসার কারণ হচ্ছে, শেষ সিরিজে কি হয়েছে সেটা ওদের থেকে জানতে চেয়েছিলাম। ওয়ানডে ফাইনালটা দেখেছি। ফাইনাল থেকে মনটা খারাপ হয়ে গিয়েছিল। কারণ, আমাদের দেশে আমরা শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২২০ রান করতে পারব না, এটা মানা কষ্ট হচ্ছিল। ওদের কাছ থেকে শুনতে চেষ্টা করেছিলাম সমস্যাটা কোথায়। তথ্য কিছু পেয়েছি এবং বেশিরভাগই আমার জানা। খবর তো ঠিকই নিতাম। এতোদিন ধরে বোর্ডে আছি। তারপরও ওদের কাছ থেকে শুনলাম। সামনেই আমাদের বিশাল চ্যালেঞ্জিং একটা সফর। সময় খুব কম। সে জন্য কি করণীয় ওদের কি মতামত এবং আমাদের কি করণীয় সেটা তো আমরা করবোই। এসব ব্যাপারে আলাপ করেছিলাম।’

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এমন ভরাডুবির কী কারণ? এমন প্রশ্নের জবাবে নাজমুল হাসান পাপন কোচের বিষয়টাই গুরুত্ব দিয়ে জানালেন। তিনি বলেন, ‘অনেকেই অনেক কারণ বলবে। তাদের একেক জনের একেক ব্যাখ্যা থাকবে। একটা জিনিস খেয়াল করবেন, কোচের ব্যাপারে আমি সব সময় গুরুত্ব দিয়ে থাকি। হকিতে আমি কী বলেছি ওদের, বিদেশি কোচ আনো। যত টাকা লাগে আমি দিব। কাবাডিতেও একই কথা বলেছি। আমি সব সময় কোচের উপর জোর দেই। টাকায় না। কোচ ছাড়া হবে না। পেশাদার কোচ দরকার। অনেকেই মনে করেন যে কোচের দরকার নেই। কিংবা অন্য কিছু। আমাকে এমন কথাও বলেছে যে, কোচেরই দরকার নেই। এটা যে ঠিক না, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।’

ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালের আগেই পাপন বুঝতে পেরেছিলেন, খারাপ কিছুই ঘটতে যাচ্ছে বাংলাদেশ দলে। সে কথাই তিনি জানালেন আবার, ‘ওডিআই ফাইনালের আগের দিন আমি আপনাদেরকে হিন্টস দিয়েছিলাম যে, আমি ওদের কথায় সন্তুষ্ট না। একটা পরিকল্পনা গত চার বছরে দেখে এসেছি। এটা ওদের থেকে পাইনি। স্বাভাবিকভাবে ওদেরটা ওরা বলেছে। তবে ব্যাসিক্যালি সমস্যাটা যেটা হয়েছে, আগে যে পরিকল্পনা হতো, স্ট্র্যাটেজি এবং মানসিক যে শক্তি ছিল... আমরা জিততে পারি কিংবা জিতব..., এ ধরনের টিমওয়ার্ক। এগুলোর মধ্যে যথেষ্ট ল্যাকিংস ছিল এবার। এটা আমার ধারণা। আমি খেলা দেখে এটা বুঝেছি। আমাদের ভালোমানের একজন কোচ ইমিডিডেটলি দরকার।’

লঙ্কানদের বিপক্ষে ভরাডুবির পর একজন কোচের দারুণ প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছেন হাথুরুসিংহে। তিনি এ সম্পর্কে বলেন, ‘ওরা ওদের মতো করেছে; কিন্তু ওদের উপরেও একজনকে দরকার। এটা ইজ নট এনাফ। যদি এনাফ হতো..., একটা টিম হঠাৎ করে বদলে যেতে পারে না। এটা বাংলাদেশ দল আমার কাছে মনেও হয়নি। ইনফ্যাক্ট ফাইনাল খেলার দিন আমার মনটা একেবারে ভেঙেই গেছে। ২২০ শ্রীলঙ্কার সাথে করতে পারবো না! হতে পারে হাথরুসিংহে নেই। এটার জন্য ২২০ করতে পারব না! ৩২০তো আর না। আমাদের মাঠে ২২০ করতে পারব না। এটা হতে পারে না।’

হাথুরুর মতে ত্রিদেশীয় ফাইনালের পর বাংলাদেশ দলের মনোবল অনেকটাই ভেঙে গেছে। সেখান থেকে দল আর বের হতে পারেনি। তিনি বলেন, ‘আমি বলতে চাচ্ছি যে জিনিসটা হয়েছে। ওই ম্যাচের পর মনোবল অনেকটা ভেঙে গেছে। মনোবল তো কাউকে বিল্ডআপ করতে হবে। স্কিল যে জিনিসটা..., অমাদের এখানে কি হয়েছে মেজর প্লেয়ার তো হাতে গোনা। তামিম-সাকিব-মুশফিক-রিয়াদ আর এদিকে যদি নিয়ে আসেন মুস্তাফিজ আর মাশরাফি। এরা তো মূল খেলোয়াড়। এর বাইরে কে আসবে সেটা নিয়ে একটা ব্যাপার ছিল। একটা জিনিস ছিল সাকিবের অনুপস্থিতি টিমকে ভুগিয়েছে। আমরা কিন্তু সাকিবকে ছাড়া খারাপ খেলিনি। যখন খেলেছি তখন খারাপ করেনি। তামিম প্রথম টি-টোয়েন্টি খেলেনি তারপরও কিন্তু রান খারাপ করিনি। ওদের ছাড়া যে খেলা যাবে না কিংবা এতে যে মোরাল ভেঙে যাবে সেটা হতে পারে না। টিম কে কখনোই মনে হয়নি ওরা জিততে চাচ্ছে। কখনোই মনে হয়নি ওরা জিতবে। বডি ল্যাঙ্গুয়েজ শ্রীলঙ্কার দেখেছেন! ওদের সাথে কিছুদিন আগে খেলে এসেছি। ওদের এক বছর খেলা দেখছি। এক বছরে ওদের পরিবর্তন হয়ে গেল আর আমাদের উল্টোটা হয়ে গেল! আমাদের তো অন্তত সমান সমান থাকবে। উন্নতি না, যেটা ছিল সেটা থাকলেও তো...। সব মিলিয়ে এখানটা স্কিলের থেকেও আমি বেশি করি মাইন্ড সেট এবং স্ট্যাটেজি এবং প্লানিংয়ের বিশাল অভাব ছিল।’

তাহলে বাংলাদেশ দল কবে কোচ পাচ্ছে? জবাবে পাপন বলেন, ‘আমরা এখনো চেষ্টা করছি। কালকেও আমরা যোগাযোগ করেছি দুজনের সঙ্গে। এখন আইপিএল ছেড়ে কেউ আসতে চায় না। কোচ পাওয়া কঠিন। তবে যাদের সঙ্গে কথা হচ্ছে। চেষ্টা করছি নিদাহাস কাপের আগে হেডকোচ নিয়ে আসতে। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। এমনও হয়েছে কি, একটা কোচ আমরা চূড়ান্ত করে ফেলেছিলাম। কাল ফ্লাই করার কথা। শেষ মুহুর্তে মনে হয়েছে কি সে আসলে আমাদের সঙ্গে মিলবে না। পরে আমাদের পক্ষ থেকে থামানো হয়েছে। সামনা-সামনি কথা না বলে কিছু ফাইনাল করাটা কঠিন। আমরা ফাইনাল স্টেজে আছি। নিদাহাস কাপের আছেই তো কদিন । ৮/১০ দিন এরমধ্যেই করতে হবে। সেটা পারব কিনা শিওর না, চেষ্টা করছি।’

আইএইচএস/পিআর

আরও পড়ুন