বিপিএলে পারলে লঙ্কানদের বিপক্ষে কেন পারবেন না মাহমুদউল্লাহ
টিম গেম অবশ্যই। তবে আকারে ছোট হবার কারণে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে ব্যক্তির প্রভাব অনেক বেশি। টেস্টের তুলনায় তো বটেই, ৫০ ওভারের ওয়ানডের চেয়েও ২০ ওভারের খেলায় দলগত পারফরমেন্সের চেয়ে ব্যত্তিগত পারফরমেন্সটা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ।
এই ফরম্যাটে কেউ একজন ১৫ ওভার ক্রিজে থেকে দেড়শো স্ট্রাইক রেটে ৬০/৬৫ বলে শতরান করে ফেললে কিংবা চার ওভারের স্পেলে ২৫/৩০ রান দিয়ে চার উইকেট দখল করলেই ব্যাস- সেদিন আর তার দলকে ঠেকায় কে? বাংলাদেশে সেই মানের পারফরমারই বা কে?
বোদ্ধা-বিশ্লেষক হবার প্রয়োজন নেই। অবুঝ কিশোরও বলে দেবে, ‘কেন, সাকিব আল হাসান!’ সত্যিই তাই। সাকিবই হলেন একমাত্র পারফরমার, যার ৩০/৪০ বলে ১৩০-১৪০ স্ট্রাইকরেটে রান তোলার পাশাপাশি চার ওভারের কোটায় ২৫/৩০ রান দিয়ে তিন উইকেট দখলের ক্ষমতা আছে।
শ্রীলঙ্কার সাথে তো সাকিব নেই। তাহলে কাল বৃহস্পতিবার সাকিবের ভূমিকা নেবেন কে? তা নিয়ে রাজ্যের জল্পনা-কল্পনা। দলে সাকিবের মত ব্যাটসম্যান কাম জেনুইন স্পিনার বা ওই ক্যাটাগরির পারফরমার আছেন মাত্র দু’জন। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ আর আফিফ হোসেন ধ্রুব।
এখন আফিফ হোসেন ধ্রুব বয়সে নবীন। বয়স মাত্র ১৮। এই সেদিন যুব দলের হয়ে বিশ্ব যুব ক্রিকেট খেলে এসেছেন। এমন আনকোরা যুবা সাকিবের বিকল্প হতে পারেন- এ যে অলিক চিন্তা-ভাবনা। তাহলে সাকিবের ভুমিকায় অবতীর্ণ হবেন কে? কে বল ও ব্যাট হাতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেবেন? অনেকের মত মাহমুদউল্লাহ রিয়াদই হতে পারেন সেরা বিকল্প। যিনি সামর্থ্যের সেরাটা উপহার দিতে পারলে সাকিবের অভাব পুরোপুরি না হলেও অনেকটা পুরণ করতে পারবেন।
এক্ষেত্রে ঢাকার ক্লাব ক্রিকেট ও বিপিএলকে উপমা হিসেবে ধরা যায়। ইতিহাস ও পরিসংখ্যান জানাচ্ছে বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে রিয়াদের অলরাউন্ড পারফরমেন্স তো বেশ ভাল। বিপিএলের প্রায় সব আসরেই রিয়াদের ব্যাট ও বল হাতে জ্বলে ওঠার রেকর্ড আছে। তার অধিনায়কত্বে আবাহনীর প্রিমিয়ার লিগে চ্যাম্পিয়ন হবার রেকর্ডও আছে।
বেশি দুর পিছনে তাকানোর দরকার নেই, এবারের বিপিএলেও মাহমুদউল্লাহ ব্যাট হাতে ১৩০.০০ স্ট্রাইকরেটে ৩১২ রান করে রান তোলায় নবম । আর তার আগেরবার ১১৮.০০ স্ট্রাইকরেটে ৩৯৬ রান করে রান সংগ্রহকারীর মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন। এছাড়া বল হাতেও বেশ নজর কেড়েছিলেন। ওভার পিছু ৭.৪১ রান দিয়ে ১০ উইকেট দখল করেছিলেন। শুধু তাই নয়। ৪ ওভারে ৬ রান দিয়ে তিন উইকেট দখল করে ম্যাচ সেরা হবার কৃতিত্বও আছে। তার দল খুলনা টাইটান্স গত দুই বারের সেরা চারে ছিল।
এটাতো বিপিএল নয়, বাংলাদেশ আর শ্রীলঙ্কা সিরিজ। সেখানে বিপিএলের পারফরমেন্স কি ধর্তব্য? কেউ কেউ হয়ত এমন প্রশ্ন করবেন। তাদের জন্য বলা , একবার চোখ বন্ধ করে স্মৃতির ঝাঁপি খুলে দেখুন, মাহমুদউল্লাহ খুলনা টাইটান্সের হয়ে গত দুবার বিপিএলে কি দারুণ পারফর্ম করেছেন।
তিনি যে দলগুলোর বিপক্ষে পারফর্ম করেছেন, সেই ঢাকা ডায়নামাইটস, রংপুর রাইডার্স আর কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের লাইনআপ কি শ্রীলঙ্কার এবারের টি-টোয়েন্টি স্কোয়াডের চেয়ে দূর্বল? ওই তিন দলের বোলিং কি লঙ্কান বোলিংয়ের চেয়ে কমজোরি? নিশ্চয়ই না।
আসুন এক নজরে ঢাকা ডায়নামাইটস, রংপুর রাইডার্স ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বোলিং লাইনআপটা দেখে নিই। ঢাকার বোলিং লাইনআপে বিশ্বের অন্যতম সেরা ফাস্ট বোলার মোহাম্মদ আমিরের সাথে তিন সুপার-ডুপার স্পিনার- সুনিল নারিন, সাকিব আর শহিদ আফ্রিদি। সাথে বাংলাদেশের বাঁ-হাতি পেসার আবু হায়দার রনি।
কুমিল্লায় ছিলেন হাসান আলির মত সময়ের অন্যতম সেরা পেসার। বর্তমান সময়ের এক নম্বর লেগ স্পিনার রশিদ খান আর তিন অফ স্পিনার মোহাম্মদ নবি, শোয়েব মালিক ও মেহেদি হাসান আর বাংলাদেশের পেসার আল আমিন হোসেন। রংপুর রাইডার্সে মাশরাফির মত বুদ্ধিমান, অভিজ্ঞ অধিনায়ক ও স্লো পিচে পরিক্ষীত পেসার রুবেল, রবি বোপারা, থিসারা পেরেরা, লাসিথ মালিঙ্গা আর স্পিনার নাজমুল অপু ও সোহাগ গাজী।
এখন বলুন দেখি ওই তিন দলের চেয়ে কাল লঙ্কান বোলিং লাইনআপ কি বেশি সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী? কাল যে দলটি খেলবে, তাতে থিসারা পেরেরা আর আকিলা ধনাঞ্জয়াই মূল বোলার। তাদের নাম-ডাক আর মেধা নিশ্চয়ই বিপিএলের মোহাম্মদ আমির, হাসান আলি, রশিদ খান, সুনিল নারিন আর আফ্রিদির চেয়ে বেশি নয়?
লঙ্কান লাইনআপে এমন কোন বোলার নেই যাকে খেলা কঠিন। কেউ কেউ হয়ত টেস্টের উপমা টানতে চাইবেন। বলবেন, ঢাকা টেস্টে শেষ ইনিংসে যে আকিলা ধনঞ্জয়া বাংলাদেশের ৫ উইকেট দখল করেছিলেন, সেই স্পিনার কিন্তু আছেন। তা আছেন। তবে এটাতো আর টেস্ট নয় যে ক্লোজইন ফিল্ডাররা ব্যাটসম্যানকে ঘিরে থাকবেন। একটু উনিশ-বিশ হলেই বিপদ ঘটবে। আর উইকেটও নিশ্চয়ই অমন টার্নিং ও কঠিন থাকবে না!
কাজেই এটা ভাবার কোনই কারণ নেই যে, লঙ্কান বোলিং শক্তি আহামরি শক্তিশালী। যা টাইগারদের জন্য বিশেষ করে মাহমুদউল্লাহকে অধিনায়কোচিত ব্যাটিং করায় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। আসল কথা হলো, মাহমুদউল্লাহর সামর্থ্য আছে পুরোপুরি। কখনো ট্রফি জয়ের স্বাদ না পেলেও বিপিএলে অলরাউন্ডার রিয়াদের পারফরমেন্স সব সময় নজরকাড়া। যদিও এটা বিপিএল নয়। বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার সিরিজ; কিন্তু ফরমেটে এক। কাজেই জায়গামত সামর্থ্যের প্রয়োগ ঘটাতে পারলে মাহমুদউল্লাহর পক্ষে অবশ্যই সামনে থেকে নেতৃত দেয়া সম্ভব।
এআরবি/আইএইচএস/জেআইএম