টি-টোয়েন্টিতে সাকিববিহীন বাংলাদেশ যেন তবলা ছাড়া গান!
‘আচ্ছা, বাংলাদেশ দলে কি ব্যক্তি নির্ভরতা কমেছে ?’ তা নিয়ে একটা ছোট খাটো বিতর্ক হতেই পারে। যাই হোক না কেন , কঠিন সত্য হলো একজন মাশরাফির বিকল্প নেই। দল পরিচালনা আর পেস বোলিং- দুই জায়গায় মাশরাফি অনন্য, তুলনাহীন, আলাদা।
সব্যসাচি সাকিব আল হাসানের জায়গা নেয়ারও কেউ নেই। বল ও ব্যাট হাতে সাকিবই দলের প্রধান চালিকাশক্তি। এখনও ইনিংসের শুরুতে তামিম ইকবালই সবচেয়ে বড় নির্ভরতা। তামিম অল্প সময়ে আউট হয়ে গেলেই ড্রেসিং রুমে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
মিডল অর্ডারে দল এবং সমর্থকদের আস্থার প্রতীক মুশফিকুর রহীম। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকেও সাথে ‘পঞ্চ পান্ডবের’ একজন ভাবা হয়। বিশ্বকাপ আর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মত বিশ্ব আসরে তিন সেঞ্চুরি করে মাহমুদউল্লাহ অবশ্য সামর্থ্যর প্রমাণও দিয়েছেন।
যদি বলা হয় এই ‘পঞ্চ পান্ডব’ তথা ওপরের পাঁচজনের মধ্যে তিন ফরম্যাটে সমান কার্যকর ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পারফরমার কে? যে কেউ বলে দেবেন সাকিব আল হাসান। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, এবার ঘরের মাঠে সবচেয়ে কার্যকর আর প্রমাণিত ও প্রতিষ্ঠিত সেরা অলরাউন্ডারের ব্যাটিং ও বোলিংয়ের সার্ভিসটাই পায়নি বাংলাদেশ।
তিন জাতি আসরের ফাইনালের খুব গুরুত্বপূর্ণ সময় আঙুলে ব্যথা পেয়ে মাঠের বাইরে ছিটকে পড়েন সাকিব। ফাইনালে ৫ ওভারের বেশি বল করতে পারেননি। ব্যাট হাতে আর নামাই সম্ভব হয়নি।
তারপর দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজেও খেলতে পারেননি সাকিব। এখন টি-টোয়েন্টি সিরিজেও সেরা পারফরমার ছাড়া মাঠে নামার অপেক্ষোয় টাইগাররা।
এসব কথা অনেকবার বলা হয়েছে। তারপরও নতুন করে বলা, ইতিহাস-পরিসংখ্যানও সে সাক্ষীই দিচ্ছে, তিন ফরম্যাটেই সাকিব সাকিব সেরা অলরাউন্ডার। অতি সম্প্রতি টেস্টে মুশফিকুর রহীম তাকে টপকে তামিম ইকবালের পর রান তোলায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসলেও ওয়ানডেতে তামিমের পর বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সাকিবই রান তোলায় দ্বিতীয়। আর টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের সর্বাধিক উইকেট শিকারীর নামও সাকিব (৫১ ম্যাচে ১৮৮ উইকেট)।
আর একদিনের খেলায় মাশরাফির (১৮৫ ম্যাচে ২৩৭ উইকেট) পর উইকেট শিকারে সাকিব দুই নম্বরে। উইকেট ১৮৫ ম্যাচে ২৩৫টি।
কিন্তু টি-টোয়েন্টি হলো এমন এক ফরম্যাট, যাতে রান করা (৬১ ম্যাচে ১২২৩ রান) ও উইকেট শিকারে (৬১ ম্যাচে ৭৩ উইকেট) সাকিব সবার ওপরে।
শুধু রান আর উইকেট বেশি বলেই নয়, ক্রিকেটের সবচেয়ে ছোট ফরম্যাটে বাংলাদেশের একমাত্র স্পেশালিস্ট পারফরমার এবং ম্যাচ উইনারও সাকিব।
বেশি পেছন ফিরে তাকানোর দরকার নেই, বাংলাদেশ যে শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ জিতেছে, তার জয়ের রূপকার এবং ম্যাচ সেরাও ছিলেন সাকিব।
গত বছর ৬ এপ্রিল কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কাকে ৪৫ রানে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। ওই ম্যাচে প্রথমে ব্যাট হাতে ১২২.৫৮ স্ট্রাইকরেটে ৩১ বলে ৩৮ রানের আক্রমনাত্মক ইনিংস উপহারের পাশাপাশি ২৪ রানে ৩ উইকেট দখল করে সাকিব হন ম্যাচ সেরা।
টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ দলের হারের পাল্লা ভারি, জেতে কালেভদ্রে। ৬৯ ম্যাচে জয় মাত্র ২১টিতে। আর হার ৪৬টিতে। গত দুই বছরে ২৩ ম্যাচে টাইগাররা জিতেছে মোটে ৮ বার।
গত বছর সাত ম্যাচে জয় ছিল মাত্র একটি। সেটা শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। আর তার আগের বছর ২০১৬ সালে ১৬ খেলায় ৭ বার জয়ের স্বাদ পেলেও ৪টি ছিল আইসিসির সহযোগি সদস্য- আরব আমিরাত, ওমান ও নেদারল্যান্ডসের সাথে। আর বাকি ৩টির ২টি জিম্বাবুয়ের সাথে। অন্যটি পাকিস্তানের বিপক্ষে। ওই জয়গুলোতেও সাকিবের অবদান ছিল যথেষ্ট।
কিন্তু কঠিন সত্য, আগামীকাল শেরে বাংলায় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুই ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথমটিতে সেই অতি নির্ভরযোগ্য পারফরমার সাকিবকে ছাড়াই খেলতে হবে বাংলাদেশকে।
বলার অপেক্ষা রাখে না, দু'দলে যে ২২ জন ক্রিকেটার আছেন, তার মধ্যে হাতে গোনা মাত্র ক'জন পারফরমার ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দিতে পারেন একা; সেই হাতে গোনা পারফরমারের এক নম্বর নামটি সাকিবের। যিনি একাই পারেন ম্যাচ জেতাতে।
সাকিব ছাড়া বাংলাদেশ সব ফরম্যাটেই দুর্বল, কমজোরি। কিন্তু টি-টোয়েন্টিতে আরও বেশি ভগ্ন। সাকিব বিহীন টাইগাররা যেন তবলা ছাড়া গান!
তাই কাল এ বাঁহাতির ব্যাটিং-বোলিং দুইই মিস করবে বাংলাদেশ। তার অভাববোধ হবে। কাল মাঠে নামার আগে সাকিবের সেই অলরাউন্ডিং পারফরমেন্সের কথা নিশ্চয়ই বারবার মনে হবে ক্রিকেটারদের।
এআরবি/এমএমআর/আইআই