চার পেসারের একাদশে কোনো বাঁ-হাতি স্পিনার নেই?
সেই এনামুল হক মনি-মোহাম্মদ রফিক দিয়ে শুরু। তারপর এনামুল হক জুনিয়র, রাজ্জাক, মানজারুল রানা, সাকিব আল হাসান, ইলিয়াস সানি, আরাফাত সানি ও সানজামুল- বাঁহাতি স্পিনারে ছড়াছড়ি। হোক তা টেস্ট, ওয়ানডে কিংবা টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট। বাংলাদেশ দল আর বাঁ-হাতি স্পিন ও বাঁ-স্পিনার যেন এক হয়ে গেছে। লাল সবুজ জার্সি গায়ে ১১ জনের দল মানেই অন্তত দুজন বাঁ-হাতি স্পিনার। বাঁ-হাতি ছাড়া বাংলাদেশ দল ভাবাই যায় না।
পণ্ডিত, বোদ্ধা ও বিশেষজ্ঞ হবার দরকার নেই, পাড়ার-গলির কিশোরও জানেন বাংলাদেশ দল মানেই স্পিন নির্ভরতা। বাঁ-হাতি স্পিনার কেন্দ্রিক স্পিন আক্রমণ।
২০০০ সালে টেস্ট খেলিয়ে দেশ হবার পর গত প্রায় দেড় যুগে বাংলাদেশ বাঁ-হাতি স্পিনার ছাড়া মাঠে নামেনি একবারও। এবার কি সেই বিরল ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে? আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি শেরে বাংলায় শ্রীলঙ্কার সঙ্গে প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে কি কোন বাঁ-হাতি স্পিনার ছাড়াই মাঠে নামতে যাচ্ছে বাংলাদেশ?
সাকিব আল হাসান খেলতে পারলে আর একথা উঠতো না। কিন্তু এখন উঠছে জোরেশোরে। কারণ সাকিব সিরিজের বাইরে চলে যাওয়ায় স্কোয়াড বাঁ-হাতি স্পিনার শূন্য হয়ে পড়েছে। ১৫ জনের দলে অফস্পিনার আছেন দুজন, মেহেদি হাসান ও আফিফ হোসেন ধ্রুব।
এছাড়া মাহমুদউল্লাহও সীমিত ওভারের ফরম্যাটে প্রায় নিয়মিতই বল করেন। কিন্তু বোলিং লাইন আপে আর কোনো বাঁ-হাতি স্পিনার নেই। বরং পেসার আছেন এক ঝাঁক- মোস্তাফিজুর রহমান, রুবেল হোসেন, আবু হায়দার রনি, সাইফউদ্দিন ও আবু জায়েদ রাহি।
এদের সঙ্গে জেন্টল মিডিয়াম পেস বোলার হিসেব আরিফুল হকও আছে। ঘরোয়া ক্রিকেটে প্রায় নিয়মিত বল করেন আরিফুল। কাজেই সাকিবের বদলে একজন বাঁ-হাতি স্পিনারকে নতুন করে না নিলে লঙ্কানদের সঙ্গে দুই ম্যাচের সিরিজে বাংলাদেশ যে বাঁ-হাতি স্পিনার ছাড়াই খেলবে।
‘শ্রীলঙ্কার সঙ্গে দুই ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে বাঁ-হাতি স্পিনার শূন্যই থাকবে বাংলাদেশের বোলিং লাইন আপ? দুই ম্যাচে শুধু পেসার আর অফস্পিনার নিয়েই মাঠে নামবে টাইগাররা?’
জাগো নিউজের এ প্রশ্নের জবাবে, প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু আজ (সোমবার) জানালেন, ‘আমরা তো সাকিবকে একাদশে ধরেই স্কোয়াড সাজিয়েছিলাম। টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে আগেই জানানো হয়েছে, দলে যেন পেসারদের আধিক্য থাকে। তা মেনেই আমরা পেস বোলার বেশি রেখেছি। সাকিব ছাড়া বাঁ-হাতি স্পিনারের কথা বলা হয়নি। তাই আমরাও বিকল্প বাঁ-হাতি স্পিনার হিসেবে কাউকে নেইনি। এখন যেহেতু জানা হয়েছে যে, সাকিব খেলতে পারবে না তাই টিম ম্যানেজমেন্ট চাইলে একজন বিকল্প বাঁ-হাতি স্পিনার নেয়া হতে পারে।’
সে সম্ভাবনা কি আছে? প্রধান নির্বাচকের জবাব, আজ টিম ম্যানেজমেন্ট ও বোর্ড কর্তাদের সঙ্গে আমরাও বসবো। সেখানে টিম ম্যানেজমেন্ট বাঁ-হাতি স্পিনার চাইলে আমরা নিবো। আর না চাইলে নাই।’
তবে আপাত দৃষ্টিতে দলে বাঁ-হাতি স্পিনারের অন্তর্ভুুক্তির সম্ভাবনা খুব কম। কারণ, সাকিব দলের বাইরে চলে যাওয়ায় টিম কম্বিনেশনটা নতুন করে সাজানো ছাড়া উপায় নেই। এখন সাকিবের বিকল্প হিসেবে বাঁ-হাতি না হলেও একজন জেনুইন ব্যাটসম্যান কাম স্পিনারের (স্পিনিং অলরাউন্ডার) দলে থাকা খুব জরুরি। স্পেশালিস্ট স্পিনার হিসেবে ফাস্ট চয়েজ ভাবা হচ্ছে মেহেদী হাসানকে (মেহেদী মিরাজ নন)। বিপিএলে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে বড় ম্যাচগুলোয় বল হাতে ওপেন করে ক্রিস গেইল ও ব্রেন্ডন ম্যাককালামের মতো ভয়ঙ্কর ও বিশ্বমানের ব্যাটসম্যানদের বিপক্ষে বোলিং সূচনা করা অফব্রেক মেহেদি হাসান হয়তো অফস্পিনারের কোটা পূরণ করবেন।
কিন্তু একাদশে এজ জেনুইন স্পিনিং অলরাউন্ডার হিসেবে সাকিবের অনুপস্থিতিতে সম্ভবত আফিফ হোসেন ধ্রুবকে খেলানোর কথা ভাবা হচ্ছে। কারণ ব্যাট ও বল হাতে আফিফ বিশ্ব যুব ক্রিকেটে ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলেছেন। বিশেষ করে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো বড় দলের বিপক্ষে ব্যাট ও বল হাতে নজর কাড়া নৈপুণ্যও দেখিয়েছেন। ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি তার অফস্পিন বোলিংটা কার্যকর বলেই ১৫ ফেব্রুয়ারি আফিফের অভিষেক হবার সম্ভাবনার কথা শোনা যাচ্ছে।
মেহেদি ও আফিফের সঙ্গে চার পেসার খেলানোর চিন্তা ভাবনাও নাকি চূড়ান্ত। ভেতরের খবর, তিন জাতি ক্রিকেট আর টেস্টে পেসারদের চেয়ে স্পিনারদের কার্যকরিতা বেশি ছিল। বাংলাদেশের একাদশেও ছিল বাড়তি স্পিনারের ছড়াছড়ি। কিন্তু টি-টোয়েন্টি সিরিজে পেসারদের আধিক্য চোখে পড়ার সম্ভাবনাই বেশি। কারণ শেরে বাংলা ও সিলেটের যে উইকেট দুটিকে টি-টোয়েন্টি সিরিজের ভেন্যু হিসেবে বেছে নেয়া হয়েছে, তা নাকি ‘স্পোর্টিং উইকেট।’ যেখানে ব্যাটসম্যান ও বোলার দুইই সুবিধা পাবে। আর খেলা যেহেতু পড়ন্ত বিকেলে (পাঁচটায় শুরু) তাই এক সেশনে শিশির পড়ার সম্ভাবনাও অনেক বেশি। শিশিরে স্পিনারদের বল গ্রিপ করায় সমস্যা হয়, তা ভেবেই জেনুইন স্পিনার কমিয়ে বাড়তি পেসার অন্তর্ভুক্তির চিন্তা। শেষ মুহূর্তে একজন বাঁ-হাতি স্পিনারের দলভুক্তি ঘটুক আর নাই ঘটুক আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি সাইফউদ্দিনসহ বাংলাদেশ যে চার পেসার নিয়ে খেলতে নামছে তা মোটামুটি নিশ্চিত।
এআরবি/এমআর/এমএস