ভিডিও EN
  1. Home/
  2. খেলাধুলা

স্পিনিং উইকেটেও টাইগারদের বড় হুমকি পেসার লাকমাল!

আরিফুর রহমান বাবু | প্রকাশিত: ০৯:১৪ এএম, ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

টেস্ট খেলেছেন খুব কম। মোটে ১৩ টি। তাতে কি? আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিজ্ঞতা তো আর কিছু কম নয়। বরং যে দলটি শ্রীলঙ্কার সঙ্গে টেস্ট খেলছে, বয়সে তাদের সবার বয়স ও অভিজ্ঞতায় ঢের বড় রাজ্জাক। জাতীয় দলের হয়ে খেলছেন ১৪ বছর। ওয়ানডে অভিষেক হয়েছে ২০০৪ সালের ১৬ জুলাই এশিয়া কাপে হংকংয়ের বিপক্ষে কলম্বোর সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাব মাঠে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলছেন অন্তত তারও দুই বছর আগে থেকে। তার মানে ক্যারিয়ারের বয়সই প্রায় ১৬/১৭ বছর। মাহমুদউল্লাহ, তামিম ও মুশফিকদের চেয়ে বেশ সিনিয়র রাজ্জাক। সেই মধ্য তিরিশে পা রাখা ( ৩৫ বছর ২৩৮ দিন) অভিজ্ঞ স্পিনার যখন বলেন, এমন টার্নিং উইকেটে আমি আগে কখনো খেলিনি, তখন বুঝতে বাকি থাকে না শেরে বাংলার পিচ কতটা স্পিনিং!

যেখানে ২২২ রানে প্রথম ইনিংস শেষ করা আট লঙ্কান আউট হয়েছেন বাংলাদেশের দুই বাঁহাতি স্পিনার রাজ্জাক ও তাইজুলের বলে। আর দুটি উইকেট পেয়েছেন একমাত্র পেসার হিসেবে খেলা মোস্তাফিজুর রহমান। শুধু দুই স্পিনারের ঝুলিতে আট উইকেট জমা পড়াই শেষ নয়। বাংলাদেশের বোলিংই শুরু করেছেন অফস্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজ ও আব্দুর রাজ্জাক।

তারা এই কাজ করতে গিয়ে একটি বিশ্ব রেকর্ডেরও জন্ম দিয়েছেন। এখন তাদের নাম থাকবে ভারতের দুই প্রসিদ্ধ ও নামী ক্রিকেটার এমএল জয়সীমা আর সেলিম দুরানির সঙ্গে। টেস্ট ক্রিকেটের ১৪০ বছরের বেশি সময়ের সুদীর্ঘ ইতিহাসে দু'প্রান্ত দিয়ে স্পিনারদের বোলিং আক্রমণের রেকর্ড আছে অনেক। কিন্তু টেস্টের প্রথম দিন সকালে একদম প্রথম ও দ্বিতীয় ওভারে দুই প্রান্তে দুই স্পিনারের নতুন বল ভাগাভাগি করার রেকর্ড ছিল এতকাল একটি। সেটা ১৯৬৪ সালের কানপুরে। ভারতের হয়ে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এমএল জয়সীমা আর সেলিম দুরানি করেছিলেন বোলিং শুরু। অবশ্য ভারতীয় ক্রিকেট ইতিহাস ঘাটলে স্পিনারদের তালিকায় তাদের নাম খুঁজে পাওয়া কঠিন। কারণ একজনও প্রথাগত স্পিনার ছিলেন না। দুজনই ছিলেন মূলত ব্যাটসম্যান। দলে কোন পেসার ছিল না। তাই স্পিনার হিসেবে জয়সীমা আর সেলিম দুরানিকে দিয়ে বোলিং শুরু করেছিল ভারত।

৫৪ বছর পর কাল (বৃহস্পতিবার) ঢাকায় বাংলাদেশ অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহও তাই করলেন। অফস্পিনার মিরাজ আর বাঁহাতি রাজ্জাক দুই দিকে বোলিং শুরু করলেন। তাতে সাফল্যও আসলো। রাজ্জাক ম্যাচের ছয় আর তার নিজের তৃতীয় ওভারে লঙ্কান বাঁহাতি ওপেনার করুনারত্নেকে ফিরিয়েও দিলেন।

তারপর বাকি সময় লড়াই হলো মূলত বাংলাদেশের দুই বাঁহাতি স্পিনার রাজ্জাক ও তাইজুলের সঙ্গে লঙ্কানদের। শেষ দিকে কাটার মাস্টার মোস্তাফিজ এসে দুটি উইকেটের পতপন ঘটালেন।

কিন্তু হায়! বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের সময় বদলে গেল দৃশ্যপট। লঙ্কানরা বোলিং শুরু করলো প্রথা মেনে, পেসারদের দিয়েই। প্রথম ওভার বল করলেন ডান হাতি ফাস্ট মিডিয়াম সুরেঙ্গা লাকমাল। শুধু বোলিং শুরু করাই নয়। বাংলাদেশের উদ্বোধনী জুটি ভাঙার কাজটিও করলেন দ্রুত গতির বোলার লাকমাল। তার বলে অফড্রাইভ করতে গিয়ে রিটার্ন ক্যাচ দিলেন তামিম ইকবাল। সেটাই শেষ নয়। লাকমালের ইনসুইংকে আউটসুইং ভেবে ছেড়ে দিয়ে বোল্ড দলের অন্যতম ব্যাটিং নির্ভরতা মুশফিকুর রহীম। চট্টগ্রামে উভয় ইনিংসে শতরান করা মুমিনুল অবশ্য স্লথ রানিং বি টুইন দ্যা উইকেটের কারনে রান আউট হয়ে ফিরে গেছেন।

গতকাল প্রথম দিন যে বাংলাদেশের চার উইকেটের পতন ঘটেছে, তার একটি মাত্র উইকেট নিয়েছেন লঙ্কান স্পিনাররা। অফস্পিনার দিলরুয়ান পেরেরার বলে এলবিডব্লিউ উইকেটের ফাঁদে জড়িয়েছেন ইমরুল কায়েস।

কোথায় পথের কাটা হবেন রঙ্গনা হেরাথ আর সান্দাকান। তা না গতকাল প্রথমদিন শেষ সেশনে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের সঙ্গে মূল লড়াই হলো লঙ্কান পেসার সুরেঙ্গা লাকমালের। টার্নিং উইকেট পেয়ে রাজ্জাক আর তাইজুল বল ঘুরিয়েছেন ইচ্ছেমত। স্পিনে অভ্যস্ত ও ভালো খেলার পর্যাপ্ত টেকনিকের অধিকারি লঙ্কান ব্যাটসম্যানদের ব্যতিব্যস্তও রেখেছেন। সর্বাধিক সমীহ আদায়ের পাশাপাশি দুজনে মিলে আট উইকেটের পতনও ঘটিয়েছেন।

সে একই পিচে বাঁহাতি রঙ্গনা হেরাথ আর চায়নাম্যান সান্দাকান না জানি কি করবেন? তাদের বলতো এমনিই ঘোরে। শেরে বাংলার টার্নিং পিচে না জানি কত টার্ন করবে! বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের বুঝি নাভিশ্বাষ উঠে যাবে। তারা খেলতে গিয়ে চরম বিপাকে পড়বেন। বাংলাদেশ ভক্ত ও সমর্থকরা কিন্তু এমন ভেবে একটু কম্পিত বুকেই টিভির সামনে বসেছিলেন। কিন্তু তারা সবাই অবাক! একি স্পিনারদের উইকেটে দেখি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন লঙ্কান পেসার লাকমাল।

তবে কি পিচ শুধুই স্পিন বান্ধব নয়? পেস সহায়ও? লাকমালের বোলিং দেখে অনেকটাই তাই মনে হয়েছে। কারণ তিনি ইচ্ছেমত সুইং করিয়েছেন। তার যে ডেলিভারিতে বাংলাদেশের অন্যতম ব্যাটসম্যান ছেড়ে দিয়ে বোল্ড হয়েছেন, তা অফ-ষ্টাম্পের অন্তত ছয় থেকে আট ইঞ্চি বাইরে থেকে ভেতরে ঢুকে উইকেটে গিয়ে আঘাত হেনেছে। মুশফিক আউট সুইং ভেবে ছেড়ে দিয়ে দেখেন বল ভিতরে এসে স্টাম্প উপরে দিল!

ঐ বলে আউট হবার আগে অফ-ষ্টাম্পের আশপাশে আরও বেশ কবার মুশফিককে ব্যতিব্যস্ত রেখেছেন লাকমাল। অফ-স্টাম্পের বাইরে তার থ্রি কোয়ার্টার লেন্থের ডেলিভাররি ছুড়ে ব্যাটসম্যানের কঠিন পরীক্ষায় ফেলার চেষ্টা করেন। যাতে ড্রাইভ খেলতে গিয়ে ব্যাটসম্যানরা উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন। মূলত এটাই ছিল লাকমাল ও লঙ্কান অধিনায়ক চান্দিমালের পরিকল্পনা। মুশফিক সেই বল না খেলে ছেড়ে দিয়ে সময় ক্ষেপনের চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু লাকমাল যে ক্রমাগত আউটসুইং ছোড়ার পাশাপাশি ইনসুইং করিয়ে বল অপস্টাম্পের বাইরে থেকে ভেতরে ঢোকাতে পারেন, হয়তো এতটা ভাবেননি মুশফিক।

সেটাকে অজ্ঞতা ভাবার কোনই কারণ নেই। হয়ত মুশফিকও ভেবেছিলেন, উইকেটে টার্ন আছে, সুইং নেই তেমন। আসলে তা নয়। শেরে বাংলার যে পিচে খেলা হচ্ছে, সেটা আসলে শুধুই টার্নিং উইকেট নয়। বোলিং ফ্রেন্ডলি উইকেট। যেখানে ন্যাচারাল ম্যুভমেন্ট হচ্ছে। অর্থাৎ স্পিনারদের বল টার্ন করছে। আর পেসারদের বল ম্যুভ করছে। কখনো সিমে পড়ে সিম ম্যুভমেন্ট, না হয় বাতাস ও হাতের টানে সুইং করছে।

কাজেই কালকের মত আজ শিশির ও খানিক কুয়াশা ভেজা সকালে লাকমালকেই বল হাতে শুরু করতে দেখা যাবে। তার সুইং থেকেই শুরুতে নিজেদের বাঁচতে হবে লিটন দাস ও মেহেদি হাসান মিরাজকে। বৃহস্পতিবার পড়ন্ত বিকেলে লিটন বেশ ভালোই সামলেছেন লাকমালকে। চট্টগ্রামে প্রথম ইনিংসে এই লাকমালের ইনকামিং ডেলিভারি আউটসুইং ভেবে ছেড়ে দিয়ে প্রথম বলে বোল্ড হওয়া লিটন এখন অনেক সতর্ক ও সাবধানি। এ টেস্টেও ড্রেসিং রুমে বসে দেখেছেন, লাকমাল কিন্তু দুই দিকেই বল সুইং করাতে পারেন। লাকমালের হাতের দিকে দেখা আর শেষ মুহূর্ত অবধী বলের ম্যুভমেন্ট লক্ষ্য করে খেলা ছাড়া পথ নেই।

এরপর আছেন মাহমুদউল্লাহ আর সাব্বির। দুইজনই পেস বোলিংয়ের বিপক্ষে ভালো খেলার সুনাম আছে। ধরে নিতে হবে, প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের পথের কাটা লাকমাল। তাকে দেখে ও সাবলীল ঢংয়ে না খেলতে পারলে লিড নেয়া বহুদূরে, পিছিয়ে থাকতে হবে। এমন শতভাগ স্পোর্টিং পিচে ৫০ থেকে ৬০/৭০ রানের লিড অনেক কিছু।

গতকাল বিকেলে লাকমালের বিষাক্ত সুইংয়ে খানিক চাপে পড়া বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা শুক্রবার দ্বিতীয় দিন সকালে লাকমালকে সাফল্যের সাথে খেলে ফেললে বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে। আর আজ সকালে লাকমালকে সামলাতে না পারলে সমূহ বিপদ!

এআরবি/এমআর/এমএস

আরও পড়ুন