অস্বস্তি নিয়েই দিন শেষ করলো বাংলাদেশ
শ্রীলঙ্কাকে ২২২ রানে বেধে রাখার পর সবাই ভেবেছিল বাংলাদেশ বুঝি প্রথমদিনই অনেক এগিয়ে গেলো; কিন্তু যে অস্ত্র দিয়ে লঙ্কানদের ঘায়েল করেছে বাংলাদেশ, সেই অস্ত্র তো লঙ্কানদের হাতেও রয়েছে। যদিও তুন থেকে আসল তির বের করার আগেই অহেতুক উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ। একমাত্র স্পিনার দিলরুয়ান পেরেরা একটি উইকেট পেলেও, প্রথম দিন শেষে বাংলাদেশ হারিয়েছে ৪টি উইকেট। রান তুলতে পেরেছে মাত্র ৫৬টি। এখনও লঙ্কানদের চেয়ে ১৬৬ রান পিছিয়ে বাংলাদেশ।
শ্রীলঙ্কাকে ২২২ রানে অলআউট করার পর বাংলাদেশ যে খুব বেশি দুর যেতে পারবে না সেটা শুরুতেই বুঝিয়ে দিয়েছিলেন ওপেনার তামিম ইকবাল, মুমিনুল হক আর মুশফিকুর রহীম। অভিজ্ঞ এই তিন ব্যাটসম্যান যেভাবে আউট হলেন, তাতে চালকের আসনে বাংলাদেশ নয়, উল্টো শ্রীলঙ্কাই বসে গেছে।
ওপেনার তামিম ইকবাল ইনিংসের প্রথম ওভারের তৃতীয় বলেই রিটার্ন ক্যাচ দিয়ে বসলেন পেসার সুরঙ্গা লাকমালের হাতে। দুর্ভাগ্য তামিমের, দুর্ভাগ্য বাংলাদেশেরও। দলীয় মাত্র ৪ রানের মাথায় পতন ঘটলো বাংলাদেশের প্রথম উইকেটের।
তামিমেরটা না হয় দুর্ভাগ্য হিসেবে মেনে নেয়া গেলো; কিন্তু মুমিনুলেরটা কিভাবে মেনে নেয়া যায়! অতি আত্মবিশ্বাস কোথায় নিয়ে যেতে পারে, সেটাই দেখালেন মুমিনুল। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই খামখেয়ালিপনা করতে গিয়েই বলতে গেলে রানআউট হয়ে গেলেন চট্টগ্রাম টেস্টের নায়ক এবং টেস্টে বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যান মুমিনুল হক।
কুশল পেরেরাকে মিড-অফে খেলেই এক রান নিতে গেলেন ইমরুল কায়েস। দৌড়ে আসলেন মুমিনুলও; কিন্তু ক্রিজে পৌঁছে গেছেন মনে করে কিংবা কাছাকাছি হওয়ার পর রানআউট থেকে বেঁচে গেছেন মনে করে তিনি কিছুটা স্লো হয়ে যান। এরই মধ্যে বল চলে আসল। মুমিনুল ব্যাট ক্রিজে ছোঁয়ানোর আগেই উইকেট ভেঙে দিলেন উইকেটরক্ষক ডিকভেলা। ৪ রানে পড়লো দ্বিতীয় উইকেট।
তামিম-মুমিনুলের পরপর বিদায় মানে বাংলাদেশের দারুণ ব্যাটিং বিপর্যয়। এই বিপর্যয় সামাল দিতে খুব সতর্কভাবে এগিয়ে চলা প্রয়োজন ছিল ইমরুল কায়েস আর মুশফিকুর রহীমকে। এ দু’জনকে সে চেষ্টা করেননি তা নয়। বিশেষ করে মুশফিকুর রহীম; কিন্তু অতি সতর্কতা এবং বোকামির দণ্ড দিতে হলো তাকে। সুরঙ্গা লাকমালের বল ছেড়ে দিতে গিয়ে বোল্ড হয়ে গেলেন মুশফিক। দলকে আরও বেশি বিপর্যয়ে ফেলে আউট হয়ে গেলেন তিনি।
খেলা চলছিল তখন ৯ম ওভারের। ওভারের শেষ বলটি অফ স্ট্যাম্পের অনক বাইরে মনে করে ছেড়ে দেন মুশফিক। যদিও তিনি দাঁড়িয়েছিলেন লেগ স্ট্যাম্পের ওপর। কিন্তু বল হালকা ইনসুইং করে ভেতরে ঢুকে যায় এবং উড়িয়ে দিয়ে যায় তার উইকেট। ১২ রানে পড়লো ৩য় উইকেট। মুশফিক বিদায় নিলেন মাত্র ১ রান করে।
মুশফিকের বিদায়ের পর ধরে খেলার চেষ্টা করেন ইমরুল কায়েস এবং লিটন কুমার দাস। এ দু’জনের ব্যাটে ৩৩ রানের জুটি গড়ে ওঠে। কিন্তু লঙ্কান স্পিনারদের চাপের মুখে টিকে থাকাই যেন কঠিন হয়ে পড়ে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের জন্য। সে কারণে, টিকতে পারলেন না ইমরুল কায়েসও। তিনিও আউট হয়ে গেলেন ঘূর্ণি তোপে পড়ে।
দিলরুয়ান পেরেরার বলে এলবিডব্লিউ হয়ে যান ইমরুল। যদিও রিভিউ নিয়েছিলেন তিনি; কিন্তু লাভ হলো না। উইকেট হারান তিনি। এ সময় তার ব্যক্তিগত রান ছিল ১৯। ৫৫ বলে খেলা ইনিংসটি সাজানো ছিল ৩ বাউন্ডারিতে। ইমরুল আউট হওয়ার পর আর দুই ওভার খেলা হলো। এরপরই শেষ হলো প্রথম দিনের খেলা।
এর আগে টস জিতে প্রথমেই ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় শ্রীলঙ্কা। ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশের দুই স্পিনার আবদুর রাজ্জাক আর তাইজুল ইসলামের ঘূর্ণিতে ২২২ রানে অলআউট হয়ে যায় শ্রীলঙ্কা। রাজ্জাক এবং তাইজুল দু’জনই নেন ৪টি করে উইকেট। বাকি ২টি নেন মোস্তাফিজুর রহমান। কিুশল মেন্ডিস করেন সর্বোচ্চ ৬৮ রান এবং ৫৬ রান করেন রোশেন সিলভা।
আইএইচএস/আইআই