স্পিনিং ট্র্যাকে সাকিবের অভাব পূরণ করবে কে?
বোঝাই যাচ্ছে, গত দেড় বছরে ইংল্যান্ড আর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দু'দুটি স্মরণীয় জয়ই ‘স্পিন ফ্রেন্ডলি’ পিচে খেলার বড় অনুপ্রেরণা। বাংলাদেশ অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ধারণা, ঢাকা টেস্টের উইকেট বেশ শুষ্ক আর ‘স্পিন ফ্রেন্ডলি’।
ইতিহাস জানাচ্ছে, ঠিক এমন উইকেটেই ইংল্যান্ড আর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জয়কাব্য রচনা করেছিল বাংলাদেশ। ইংলিশদের বিপক্ষে জয়ের নায়ক ছিলেন মেহেদি হাসান মিরাজ আর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সাকিব আল হাসান।
সঙ্গে তামিম ইকবালও রেখেছিলেন দারুণ ভূমিকা। ইংলিশদের সাথে ১০৮ রানের জয়ে অবদান রেখেছিলেন মুমিনুল হকও। ওপরের চারজনের তিনজন আছেন এ টেস্টেও। নেই শুধু সাকিব আল হাসান।
চট্টগ্রামেও তাকে মিস করেছে বাংলাদেশ। তবে ঢাকায় সাকিবের অভাব অনুভূত হবে আরও। কারণ, বাংলাদেশ গত ১৭ মাসে শেরে বাংলায় যে দুটি টেস্ট জিতেছে, তার শেষটিতে মানে অস্ট্রেলিয়ার সাথে ২০ রানের জয়ের রুপকার ছিলেন সাকিব। দুই ইনিংসে পাঁচজন করে মোট ১০ অজি ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে দলকে ওই অবিস্মরণীয় জয় এনে দিয়েছিলেন তিনি।
শুধু বল হাতেই নয় । গত বছর আগস্টে এই শেরে বাংলায় অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সাকিবের ব্যাট থেকে বেরিয়ে এসেছিল ৮৪ রানের মহামূল্যবান ইনিংস। তার মানে একই ম্যাচে (৫/৬৮ ও ৫/৮৫) ১০ উইকেট এবং এক ইনিংসে বিগ ফিফটি উপহার দিয়েছিলেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার।
বলার অপেক্ষা রাখেনা, শেরে বাংলায় সেটাই ছিল সর্বশেষ টেস্ট। ওই ম্যাচের পর কাল আবার এখানে খেলতে নামবে টাইগাররা। অথচ ওই সুখস্মৃতি থাকলেও এই ম্যাচে থাকবেন না ছয় মাস আগে অজিদের সাথে দুর্দান্ত অলরাউন্ডিং নৈপুন্য দেখানো সাকিব।
প্রশ্ন উঠতে পারে, সাকিব তো বাংলাদেশ দলের প্রাণশক্তি। চালিকাশক্তিও। তার অভাব বোধ হয় যে কোনো ম্যাচেই। তাহলে এ টেস্টে এত বেশী করে সাকিবের কখা বলা হচ্ছে কেন? বলা হচ্ছে এই কারণে যে, সাকিবই এই মাঠে শেষ টেস্ট জিতিয়েছিলেন। তাই তার কথা আসাটা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার।
এখন দেখার বিষয়, সাকিব অস্ট্রেলিয়ার সাথে ব্যাট ও বল হাতে যেমন দ্যুতি ছড়িয়েছিলেন, এবার সেই শেরে বাংলায় তার ভূমিকায় কে অবতীর্ণ হন। নির্মম সত্য হলো, দলে সাকিবের মানের কেউ নেই। তার ক্যাটাগরিরও কেউ নেই। তিনি যে ‘টু ইন ওয়ান।’ একজন বিশ্বমানের ব্যাটসম্যান কাম বিশ্বমানের স্পিনার।
মিরাজ, তাইজুলরা যত ভালো বোলিংই করুন না কেন, সাকিবের অভাব পূরণ কঠিন। আর ব্যাটসম্যান সাকিবের জায়গা নেবারও সে অর্থে কেউ নেই।
ঢাকা টেস্টে হয়তো সাকিবের অভাব পূরণের চেষ্টা চলবে আব্দুর রাজ্জাককে দিয়ে। চট্টগ্রামে খেলানো হয়নি অভিজ্ঞ এই স্পিনারকে। তবে যতদূর জানা গেছে, এবার খেলবেন তিনি।
১২ টেস্টের ছোট্ট ক্যারিয়ারে কখনো পাঁচ বা তার বেশি উইকেট না পাওয়া রাজ্জাক স্পিনিং ট্র্যাক পেলে বল হাতে জ্বলেও উঠতে পারেন। সেটা হলে বোলার সাকিবের ঘাটতি পূরণ হতেও পারে।
তবে এটা ঠিক ব্যাটসম্যান সাকিবকে ঠিকই মিস করবে দল। এই অভাবটা পূরণ করতে বাড়তি দায়িত্ব নিতে হবে দলের ব্যাটিংয়ে অন্যতম ভরসা তামিম ইকবালকে। ইংল্যান্ড আর অস্ট্রেলিয়ার সাথে দুই ম্যাচ জয়ের সহ-নায়ক ছিলেন এই ওপেনার। এবার না হয়, মূল নায়কই হবেন!
পরিসংখ্যানই জানান দিচ্ছে, ইংলিশদের সাথে ২০১৬ সালের অক্টোবরে ২০ রানের জয়ের অন্যতম রুপকার ছিলেন তামিম। দুই ইনিংসে (১০৪ এবং ৪০) ১৪৪ রান বেরিয়ে এসেছিল তার ব্যাট থেকে।
এটুকু শুনে আবার ভাববেন না, এটা আর এমন কি পারফরম্যান্স! যে ম্যাচে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস শেষ হয়েছিল ২২০ রানে , সেখানে ওই ১০৪ রান তো অনেক বড় অবদানই। লো স্কোরিং ওই ম্যাচে পরের ইনিংসে তার ৪০ রানও দলের জয়ে কম অবদান রাখেনি।
এরপর অজিদের সাথে ঐতিহাসিক টেস্ট জয়ের দুই ইনিংসেও তামিম ব্যাট হাতে ছিলেন ভীষণ উজ্জ্বল। ৭১ ও ৭৮ রানের একজোড়া ফিফটিতে দলকে বড় নির্ভরতা দিয়েছিলেন এই ওপেনার। এবারও পরীক্ষিত এই সেনানীই হতে পারেন ব্যাট হাতে বড় নির্ভরতা।
দলের আরেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটসম্যান মুমিনুল হক তো চট্টগ্রামে ক্যারিয়ার সেরা ব্যাটিং করেছেন। এক টেস্টের উভয় ইনিংসে শতরানের দূর্লভ কৃতিত্বের অধিকারি প্রথম বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান হিসেবে নিজের নাম স্বর্ণাক্ষরে লিখে ফেলেছেন। বোঝাই যাচ্ছে, ফর্মের চূড়োয় আছেন মুমিনুল।
তবে তামিম চট্টগ্রামে প্রথম বার পঞ্চাশ আর পরের বার চল্লিশের ঘরে ফিরে এসেছেন। এবার ঢাকায় তার ব্যাট থেকে অন্তত একটি বড় ইনিংস বেরিয়ে আসলে দল উপকৃত হবে। কারণ টার্নিং উইকেট হলে কিন্তু চট্টগ্রামের মত স্বচ্ছন্দ ও সাবলীল ব্যাটিং করা সহজ হবে না। অমন পাঁচ সেঞ্চুরি আর গন্ডায় গন্ডায় হাফ সেঞ্চুরির সম্ভাবনাও থাকবে না। সেক্ষেত্রে দুই লঙ্কান স্পিনার রঙ্গনা হেরাথ আর সান্দাকানকে মোকাবিলায় তামিমের দীর্ঘ সময় উইকেটে থাকা এবং জ্বলে ওঠা খুব জরুরি।
এআরবি/এমএমআর/আইআই