নাটকীয়ভাবে টেস্ট দলে আবদুর রাজ্জাক
মাত্র কয়েকদিন আগেই প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে প্রথম বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে ৫০০ উইকেটের মাইলফলক ছুঁলেন অন্যতম সেরা বাম হাতি স্লো অর্থোডক্স আবদুর রাজ্জাক। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ত্রিদেশীয় সিরিজের রাউন্ড রবিন লিগের শেষ ম্যাচ শুরুর আগে রাজ্জাকের হাতে ৫০০ উইকেটের স্মারক তুলে দিয়ে সম্মানিত করেছেন বর্তমান জাতীয় দলের ক্রিকেটার সাকিব-মাশরাফিরা।
তখন রাজ্জাক ঘূর্ণাক্ষরেও বুঝতে পারেননি, জাতীয় দলের দরজা আবারও তার জন্য খোলা হচ্ছে! ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে আচমকা চোট পেয়ে মাঠ থেকে সোজা হাসপাতালে যেতে হলো সাকিব আল হাসানকে। বাম হাতের কনিষ্ঠ আঙ্গুলে সেলাই দিতে হয়েছে। যার ফলে ৩১ জানুয়ারি থেকে চট্টগ্রামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শুরু হতে যাওয়া টেস্টে সাকিব খেলতে পারবেন না বলে জানিয়ে দেয়া হয়েছে বিসিবির পক্ষ থেকে। তার পরিবর্তে চট্টগ্রাম টেস্টে নেতৃত্ব দেবেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
নির্বাচকরা তাৎক্ষণিক সাকিবের বদলি হিসেবে দলে আরও দুই স্পিনারকে অন্তর্ভূক্ত করার ঘোষণা দেয়। তারা হলেন বামহাতি স্পিনার সানজামুল ইসলাম এবং লেগ স্পিনার তানবীর হায়দার। কিন্তু এই দু’জনের কেউই যে সাকিবের জায়গা পূরণ করার মত নয়! অনেক ভেবে-চিন্তে নির্বাচকরা আবারও রাজ্জাককে ডাক দিলেন। টেস্ট দলে ডেকে নেয়া হলো অভিজ্ঞ এই স্পিনারকে।
টিম ম্যানেজমেন্ট সূত্রে জানা গেছে, আজ রাতের (সন্ধ্যা ৭টায়) ফ্লাইটেই ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম চলে যাচ্ছেন রাজ্জাক। সেখানে গিয়ে তিনি দলের সঙ্গে যোগ দেবেন। প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু ফোন করে রাজ্জাককে চট্টগ্রামে যাওয়ার প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশ দেন।
বরাবর তিন বছর পর আবারও টেস্ট দলে ডাক পেলেন রাজ্জাক। ২০১৪ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ৮ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেই সর্বশেষ টেস্ট খেলেছিলেন রাজ্জাক। বরাবর তিন বছর পর সেই চট্টগ্রাম এবং সেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেই জাতীয় দলে ফিরতে চলেছেন রাজ্জাক।
মোহাম্মদ রফিকের পর বাংলাদেশের ক্রিকেটে দীর্ঘদিন সার্ভিস দিয়েছেন আবদুর রাজ্জাক। রফিকের বিদায়ের পর তার শূন্যাস্থানটা পূরণ করেন তিনি। প্রায় ৩৬ ছুঁই-ছুঁই এই স্পিনারের টেস্ট অভিষেক ২০০৬ সালে, চট্টগ্রামেই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। যদিও টেস্টে নিয়মিত ছিলেন না তিনি। ২০১৪ সাল পর্যন্ত আট বছরে খেলেছেন মোটে ১২টি টেস্ট। এর মধ্যে ৬৭.৩৯ গড়ে উইকেট নিয়েছেন ২৩টি। সেরা বোলিং ৯৩ রানে ৩ উইকেট।
তবে ওয়ানডেতে ছিলেন নিয়মিত। ২০১৪ সালের আগস্টে সর্বশেষ ওয়ানডে খেলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে, সেন্ট কিটসে। এরপর জাতীয় দল থেকে রাজ্জাকের নাম-দাম পুরোপুরি মুছে ফেলেন তৎকালীন কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। নতুন নতুন মুখের সমাবেশ ঘটিয়েছেন তিনি; কিন্তু অভিজ্ঞ আবদুর রাজ্জাকের নাম স্মরণেই আনতেন না। এমনকি প্রস্তুতি ক্যাম্পের জন্য ৩০-৩৫ জনের প্রাথমিক স্কোয়াড ঘোষণা করলেও সেখানে দেখা যেতো না রাজ্জাককে। যদিও ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিতই পারফরম্যান্স করে গিয়েছেন রাজ্জাক।
শেষ পর্যন্ত দীর্ঘদিন অপেক্ষার পর আবারও জাতীয় দলে ডাক পেলেন আবদুর রাজ্জাক। যদিও সেটা সাকিব আল হাসানের বিনিময়ে। টেস্ট দলের নতুন অধিনায়ক ইনজুরিতে পড়ে অনাকাঙ্খিতভাবে মাঠের বাইরে চলে যাওয়ার কারণেই সুযোগ এসেছে রাজ্জাকের সামনে। নিজেকে পূনরায় প্রমাণ করার এই তো সময় রাজ্জাকের সামনে।
এআরবি/আইএইচএস/আরআইপি