সাকিব ছাড়াও ২২২ রান করার মত ব্যাটসম্যান ছিল : মাশরাফি
আরও একটি ফাইনাল। আবারো স্বপ্ন ভঙ্গের বেদনায় ‘নীল’ হওয়া। ভক্ত-সমর্থকরা হতাশ। যে রাত হতে পারতো বিজয়ের আনন্দে গাঁথা, যে ম্যাচ হয়ে থাকতে পারতো সাফল্যের নতুন দিগন্ত হয়ে- তা শেষ পর্যন্ত না আবার আক্ষেপের প্রতীক হয়েই থাকলো।
এবার নিয়ে গত ৯ বছরে চার চারটি ফাইনালে হারলো টাইগাররা। মোহাম্মদ আশরাফুল আর মুশফিকুর রহীমের নেতৃত্বে সাফল্যের দেখা মেলেনি। দুই বছর আগে মাশরাফির দল টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের এশিয়া কাপের ফাইনালেও পারেনি। এবার সেই মাশরাফির অধিনায়কত্বেও ট্রফি বিজয় হলো না।
শুরুর সাথে শেষটার কোনই মিল থাকলো না। ১৫ জানুয়ারি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৮ উইকেটের জয়ে উড়ন্ত সূচনা। ১৯ জানুয়ারি শ্রীলঙ্কাকে ১৬৩ রানের পাহাড় সমান ব্যবধানে হারিয়ে ওয়ানডে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় জয় পাওয়া দলটি সেই শ্রীলঙ্কার কাছে রাউন্ড রবিন লিগের ফিরতি পর্বে ৮২ রানে অলআউট। আর আজ ফাইনালে আবারও ৭৯ রানের বড় হার থাকলো সঙ্গী।
কেন বারবার ফাইনালে গিয়ে মুখ থুবড়ে পড়তে হচ্ছে এভাবে? আগের দুবার (২০০৯ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আর ২০১২ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে) সম্ভাবনা জাগিয়ে একদম শেষ মুহূর্তে ম্যাচ হাতছাড়া। আর আজ অনেক আগেই ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়লো বাংলাদেশ।
যে উইকেটে লঙ্কানরা ২২১ করলো, সে উইকেটে কেন ১৪২‘এ গুঁড়িয়ে যেতে হলো? এটা কি মানসিক চাপ? ফাইনালের চাপ নিতে না পারা? নাকি সাকিব আল হাসানের হাতের আঙ্গুল ফেটে মাঠের বাইরে চলে যাওয়ায় আত্মবিশ্বাস ও আস্থা হারিয়ে ফেলা?
নানা রকম প্রশ্ন। গুঞ্জন। খেলা শেষে সংবাদ সম্মেলনেও ঘুরে-ফিরে এসব প্রশ্নই উঠলো। ভয়-ডর যাকে কখনোই স্পর্শ করতে পাওে না। শত প্রতিকুলতা আর না পাওয়ার বেদনায় যিনি অন্য সময় নিজেকে স্বাভাবিক রাখতে পারেন, সেই মাশরাফিকেও আজ স্বপ্ন ভঙ্গের বেদনায় খানিক ম্লান মনে হলো।
কথায়ও জানা গেলো, তারা শিরোপা জয়ের স্বপ্ন ভঙ্গের বেদনাক্লিষ্ট। ট্রফি জেতার আশায় মাঠে নামা। তারপরও এমন খাপছাড়া ব্যাটিংয়ের চরম মূল্য দিয়ে হেরে মাঠ ছাড়তে হলো। মুখে তাই এমন কথা, ‘স্বাভাবিক! সবাই হতাশ। আমরা যেটা প্রত্যাশা করিনি সেটাই হয়েছে। আমরা অবশ্যই চেয়েছিলাম জিততে; কিন্তু তা পারিনি। ফাইনাল ম্যাচ হারলে ড্রেসিংরুমে সব সময়ই বিষণ্নতা কাজ করে। আমাদেরও খারাপ লাগছে।’
কিন্তু এ পরাজয় কেন? এই দলটির সাথেই তো সপ্তাহ খানেক আগে ৩২০ রানের হিমালয় সমান স্কোর গড়ে রেকর্ড জয়ে মাঠ ছেড়েছেন? সেই দলের বিপক্ষে এমন অনুজ্জ্বল ও দ্যুতিহীন পারফরমেন্স কেন? সাকিব পুরো ১০ ওভার বল করতে পারেননি আর ব্যাটিংয়ে নামা সম্ভব হয়নি তাই?
মাশরাফি ঠিক মানতে রাজি নন যে, সাকিব ব্যাট করতে না পারার কারণেই দল হেরেছে। তার ব্যাখ্যা, ‘হ্যাঁ, দলের সেরা খেলোয়াড় নেই। একটা মনস্তাত্বিক চাপ থাকা স্বাভাবিক। তারপরও আমার কাছে মনে হয় না ব্যাপারটা তেমন।’
মাশরাফি পরিষ্কার জানিয়ে দেন, সাকিব মাটিতে পড়ার পর তার কাছে গিয়েই বুঝতে পেরেছিলেন যে, সাকিবকে ছাড়াই ব্যাট করতে হবে। সাকিবের আহত হবার ঘটনার বর্ননা দিতে গিয়ে মাশরাফি প্রেস কনফারেন্সে বলে ওঠেন, ‘সাকিব যখন পড়ে যায়, তার হাত দেখে আমার শিওর হয়েছিলাম তাকে ব্যাটিংয়ে পাচ্ছি না। প্রত্যেক খেলোয়াড়রই জানতো, সাকিব আজ আর খেলতে পারবে না। ড্রেসিং রুমে আমরা আলোচনাও করেছি, সাকিব ব্যাটিং করতে পারবে না। সাকিবের না থাকা কাউকে মাথার মধ্যে না আনার পরামর্শও দিয়েছি। আমার হয়তো এটাকে এক্সকিউজ দেওয়া ঠিক হবে না।’
সাকিবের ইনজুরি ইস্যু এবং ম্যাচ হারা নিয়ে মাশরাফির শেষ কথা, ‘আসলে সাকিব ব্যাট করতে না পারলেও ২২০ চেজ করার মতোই স্কোর। আমি বিশ্বাস করি ওই রান করার মত ব্যাটসম্যান আমাদের হাতে ছিল।’
তাহলে পারলেন না কেন? কি কারণে ওই রান করে জেতা সম্ভব হলো না? মাশরাফি মনে করেন, ‘একটা বড় জুটি গড়ে উঠলেই হয়ত হয়ে যেত।’ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের প্রশংসা করে মাশরাফি বলেন, ‘রিয়াদ এক প্রান্তে সাধ্যমত চেষ্টা করেছে; কিন্তু কেউ তাকে সত্যিকার সাপোর্ট দিতে পারেনি। মুশফিক কিছুক্ষণ সঙ্গ দিয়েছে। ওই পার্টনারশিপটা দীর্ঘ হলে হয়ত কিছু হতো; কিন্তু তাও হয়নি।’
তাই মুখে এমন কথা, ‘দশ ওভার শেষে রিয়াদ এবং মুশফিক যেভাবে ব্যাটিং করছিল তাতে আশা জেগেছিল। আমার মনে হয় তাদের জুটিটা আরও একটু এগিয়ে যেতে পারলে পরের দিকে হয়তো একটু সহজ হতো; কিন্তু মুশফিক আউট হওয়ার পর চিত্রটা পাল্টে যায়।’
এআরবি/আইএইচএস