নয় বছর আগের প্রতিশোধ রুবেলের!
ফাইনাল বলে কথা। জিতলেই অধরা ট্রফি উঠবে ঘরে। যে ট্রফি জিততে মুখিয়ে মাশরাফির দল। প্রিয় জাতীয় দলের সোনালি সাফল্য দেখতে উন্মুখ পুরো বাংলাদেশ।
এ অপেক্ষার প্রহর এত দীর্ঘ নাও হতে পারতো। ২০০৯ সালের ১৬ জানুয়ারি এ শেরে বাংলায় আজকের প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে ৯ বছর আগেই তিন জাতি ট্রফি জেতার সুবর্ণ সুযোগ এসেছিল টাইগারদের সামনে। স্কোরলাইন দেখে আবার ভাববেন না সেটা বৃষ্টি বা প্রাকৃতিক কারণে কর্তিত ওভারের ম্যাচ ছিল।
পুরো ৫০ ওভারের ম্যাচই ছিল। তাতে মাত্র ১৫২ রানে অলআউট হয়েও প্রাণপন লড়ে জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়েছিল টাইগাররা। দুই পেসার নাজমুল-মাশরাফি আর বাঁ-হাতি স্পিনার সাকিব আল হাসানের সাঁড়াসী বোলিং আক্রমণে এক পর্যায়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছিল লঙ্কানরা। ৬ রানে ৫ উইকেটের পতনও ঘটেছিল তাদের।
সেখান থেকে শেষ পর্যন্ত ২ উইকেটের প্রায় অবিশ্বাস্য জয়ের স্বাদ পায় মাহেলা জয়াবর্ধনের দল। শেষ দিকে দুই বোলার মুত্তিয়া মুরালিধরন আর পারভেজ মাহারুফ হাল ধরে লঙ্কানদের অবিস্মরণীয় জয় উপহার দেন। তাদের হাতে শেষ দিকে বেদম মার খেয়ে ‘খলনায়ক’ বনে গিয়েছিলেন রুবেল হোসেন। ৩০ বলে ৩৫ রান দরকার থাকা অবস্থায় রুবেল ৪৬ নম্বর ওভারে একাই ২০ রান দিলে ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ে বাংলাদেশ।
রুবেলের ওই ওভারেই তিন বাউন্ডারি, এক ছক্কা আর ডাবলসে (৪+৪ +২+৪+০+ ৬ = ২০) ওভারের সবগুলো রানই তুলে নেন লঙ্কান বিশ্বসেরা অফস্পিনার মুত্তিয়া মুরালিধরন। সেটাই শেষ নয়। দুই ওভার পর আবার বোলিংয়ে এসে সর্বনাশ ডেকে আনেন রুবেল। প্রথম চার বলে মাত্র দুই রান দিলেও শেষ দুই ডেলিভারিতে বাউন্ডারি ও ছক্কা খেয়ে ১২ রান দিলে ম্যাচ হাতছাড়া হয় বাংলাদেশের।
৬ রানে ইনিংসের অর্ধেকটা খুইয়ে আর ৫১ রানে ৬ উইকেট পতনের পরও ১১ বল আগে দুই উইকেটের ঐতিহাসিক জয় পায় শ্রীলঙ্কা। নিশ্চিত জয় হাতছাড়ার হতাশায় ডোবে বাংলাদেশ। পেস বোলার পারভেজ মাহারুফ (৭৬ বলে ৩৮*) একদিক আগলে রাখেন। আর অফস্পিনার মুত্তিয়া মুরালিধরন অনেকটা স্বভাববিরোধী ব্যাটিং (১৬ বলে চার বাউন্ডারি আর দুই ছক্কায় ৩৩) করে নাটকীয়ভাবে পাল্টে দেন খেলার চালচিত্র।
যে ম্যাচে মাশরাফি ১০ ওভারে ১৮, নাজমুল ১০ ওভারে ৩০, সাকিব ১০ ওভারে ২২ আর নাঈম ইসলাম ৯.২ ওভারে ২৯ রান দেন, সেই ম্যাচে রুবেলের ৯ ওভারে ওঠে ৫২। মূলতঃ ওইদিন তার আলগা বোলিংয়েই ম্যাচ হারে বাংলাদেশ।
অফ স্পিনার মুরালির হাতে বেদম মার খেয়ে রুবেল হয়ে পড়েন জাতীয় ‘ভিলেন’। অথচ ওই শ্রীলঙ্কার সাথে ১৬ জানুয়ারির ফাইনালের আগেরদিন ওয়ানডে অভিষেকে ৩৩ রানে ৪ উইকেট দখল করেছিলেন রুবেল। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ম্যাচে আলগা বোলিং করা রুবেল তারপর যে আর ম্যাচ জেতানো স্পেল করেননি, তা নয়। করেছেন।
২০১৫ সালে বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দুই ইংলিশ বোলার জেমস অ্যান্ডারসন আর স্টুয়ার্ট ব্রডকে আউট করে দেশকে উপহার দিয়েছিলেন এক ঐতিহাসিক জয়। আজ ৯ বছর পর সেই শেরে বাংলায় লঙ্কানদের বিপক্ষে আগের ব্যর্থতা কাটাতে যেন বদ্ধ পরিকর ছিলেন রুবেল হোসেন।
মনের গহীনে আগের ব্যর্থতা ঝেড়ে ফেলার দৃঢ় সংকল্প পুষে রেখেছিলেন। নিজেকে হয়ত তৈরি করে ফেলেছিলেন, আমাকে কিছু করতেই হবে- এই মানসিকতায়। সেই পণ করেই যেন মাঠে নেমেছিলেন রুবেল।
মাঠেও মিললো সে প্রাণপন চেষ্টার সত্যতা। দুর্দান্ত বোলিং রুবেলের। নামের পাশে ৪ উইকেট (১০ ওভারে ৪৬ রান দিয়ে)। তার স্পেলের কারণেই লঙ্কান ইনিংস শেষ হলো ২২১ রানে। অথচ এক সময় মনে হচ্ছিল চান্দিমালদের স্কোর আড়াইশো পেরিয়ে যাবে।
কিন্তু রুবেলের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের কারণেই ২২০‘র ঘরে আটকে থাকল লঙ্কানরা। তিন স্পেলে (প্রথম স্পেল ৩-০-১২-০, দ্বিতীয় স্পেল ৫-০-১৬-২ ও তৃতীয় স্পেল ২-০-১৮-২) চার লঙ্কানকে সাজঘরে ফেরান রুবেল।
প্রথম স্পেলে ছিলেন উইকেটশূন্য। তবে দ্বিতীয় ও শেষ স্পেলে দুটি করে উইকেটের পতন ঘটান তিনি। রুবেল একা নন। বোলারদের মধ্যে বাঁ-হাতি পেসার মোস্তাফিজুর রহমান আর অধিনায়ক মাশরাফি ও চার নম্বর পেসার হিসেবে খেলা সাইফউদ্দিনও সমীহ জাগানো বোলিং করেছেন।
নাসিরের বদলে দলে আসা অফস্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজও ভাইটাল ব্রেক থ্রু উপহার দিয়েছেন। মোট কথা বোলাররা তাদের কাজ করে দিয়েছেন। উইকেট লঙ্কান ইনিংসের মাঝামাঝি থেকে একটু উল্টা-পাল্টা ব্যবহার করেছে। কোন কোন ডেলিভালি নিচু হয়েছে। আবার একটি দুটি বল লাফিয়েও উঠেছে।
তবুও এ উইকেটে ২২১ একদম কম রান নয়। তারওপর খেলতে হবে ফর্মের চুড়ায় থাকা সাকিবকে ছাড়া। বাঁ-হাতের কনিষ্ঠ আঙ্গুল ফেটে গেছে। তার পক্ষে এ ম্যাচে ব্যাট করা সম্ভব হবে না।
এআরবি/আইএইচএস/জেআইএম