সাকিব ওপরে চলে আসায় কি মিডল অর্ডার দুর্বল হয়ে গেলো?
‘কুইনিন জ্বর সারাবে বটে; কিন্তু কুইনিন সারাবে কে?’ সৈয়দ মুজতবা আলীর বিখ্যাত লিখনীর এক চরণ। লেখক বুঝিয়েছেন, ম্যালেরিয়া জ্বরে কুইনিন অব্যর্থ দাওয়াই; কিন্তু কুইনিনের স্বাদ বড্ড তেঁতো। কুইনিন খেলে ম্যালেরিয়া সারে; কিন্তু মুখ তো তেঁতো হয়ে যায়। লেখক সেই তেঁতো মুখ নিয়েই আসলে এমন কথাটি লিখেছেন।
বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং অর্ডারের একটি রদ-বদল নিয়ে সেই মুজতবা আলীর লিখনীর কথাই মনে হচ্ছে। তিন নম্বর পজিশনের দুর্বলতা কাটাতে সাকিব আল হাসানকে ওয়ানডাউনে খেলানো হচ্ছে। তাতে সাকিব অনেকটাই সফল। আজকের ম্যাচ ছাড়া আগের তিন ম্যাচেই রান করেছেন তিনি।
পরপর দুই ম্যাচে পঞ্চাশের ঘরেও পা রেখেছেন; কিন্তু ক্যারিয়ারে ১২২ ম্যাচ মিডল অর্ডারে (পাঁচ নম্বর পজিশনে) ব্যাট করা সাকিব ওপরে উঠে যাওয়ায় টপ অর্ডারের দুর্বলতা কাটলেও এখন আবার মিডল অর্ডারে দেখা দিয়েছে শূন্যতা।
সাকিব শুরুর ধাক্কা সামলে যেভাবে বুক চিতিয়ে লড়াই করতে পারেন, প্রতিপক্ষ বোলারদের চেপে বসতে না দিয়ে উল্টো নিজেই কর্তৃত্ব ফলানোর চেষ্টা করেন, তা পারছেন না মাহমুদউল্লাহ, সাব্বির ও নাসিররা। পরপর দুই ম্যাচে মিডল অর্ডার চরম ব্যর্থ। আর সেই ব্যর্থতার চড়া মূল্য দিতে হলো টিম বাংলাদেশকে, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৮২ রানে অলআউট হয়ে।
তাই প্রশ্ন জাগছে, সাকিব তিন নম্বরে খেলায় কি আবার মিডল অর্ডারে শূন্যতা দেখা দিল? বৃহস্পতিবার খেলা শেষে এমন প্রশ্নের মুখোমুখি বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। মাশরাফির অবশ্য তা মানতে রাজি নন। তিনি আগেই বলে রেখেছেন, সাকিব ওয়ান ডাউনে উঠে আসায় বরং লাভ হবে মিডল অর্ডারদের। তারা নিজেদের মেলে ধরার সুযোগ পাবে এবং মিডল অর্ডারে নতুন মুখ বেরিয়ে আসবে।
কিন্তু হায়! টাইগার অধিনায়কের আশার উল্টোটা হচ্ছে। সাকিববিহীন মিডল অর্ডার যেন মাঝিহীন নৌকা। মাহমুদউল্লাহ, সাব্বির ও নাসিররা মিডল অর্ডারে দায়িত্ব নিয়ে লম্বা ইনিংস খেলার বদলে ফিরে যাচ্ছেন চট জলদি। এটা কেন? তবে কি তারা তেমন সুযোগ পাননি, তাই?
মাশরাফি তা মানতে নারাজ। তাই মুখে একথা, ‘আনটেস্টেড এটা বলবো না। ওরা সুযোগ পেয়েছিল। মিডল অর্ডার যে এক্সপোজড হয়নি তা নয়। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেও তারা সুযোগ পেয়েছিল কিন্তু ফেল করেছে। আজকেও আমরা ফেল করেছি। এই ব্যর্থতা চিন্তার কারণ নয়, তা বলবো না।’
মাশরাফির অনুভব, সাকিববে যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে ওয়ান ডাউন খেলানো হচ্ছে, তা সফল; কিন্তু পাশাপাশি মিডল অর্ডারের কাছে যা চাওয়া হয়েছিল, তা মেলেনি এখনো। ‘টপ অর্ডারে সাকিব আল হাসান আসার পর আমরা যেটা চেয়েছি ঠিক সেটাই তারা ডেলিভারি দিতে পেরেছে। এখন মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানদের ডেলিভারি দেয়ার ক্ষেত্রে একটু দায়িত্ব নিতে হবে। এমন না যে তারা অনুশীলনে যেটা চাচ্ছে সেটা হচ্ছে না। কিংবা নেটে যেটা চাচ্ছে সেটা হচ্ছে না। হয়তো করছে ঠিকই; কিন্তু মূল জায়গায় এসে সামর্থ্যরে যথাযথ প্রয়োগ ঠিক মতো হচ্ছে না।’
মাশরাফির ধারণা, জায়গামতো প্রয়োগ বাড়াতে মানসিক দৃঢ়তা প্রয়োজন, ‘আমার কাছে মনে হয়, মানসিকভাবে প্রস্তুত হতে হবে। ভাগ্যও সাথে থাকতে হবে।’
সাব্বির-নাসিরের কী সমস্যা, মানসিক না টেম্পারমেন্টে ঘাটতি? সংবাদ সম্মেলনে ওঠা প্রশ্নের জবাবে মাশরাফি বলে ওঠেন, ‘যে দুটো জিনিস বলেছেন দুটাই হতে পারে। তারা এই মানসিক চাপটা নিতে পারছে কি না, সেটা প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। আবার আরেকটা হচ্ছে টেম্পারমেন্ট। হয়তোবা তারা রানটাকে বেশি পছন্দ করে। উইকেটে সময় কাটানোর চেয়ে মনে করে রানটা দ্রুত আসলে তাড়াতাড়ি সেট হয়ে যেতে পারবে। ফার্স্ট ক্লাসেও যদি দেখেন তিন, চার উইকেট পড়ার পরো স্ট্রাইকরেট কিন্তু ১০০ থাকে। কাজেই ওই অভ্যাসটা আমাদের কম। এমনকি ওয়ানডে ম্যাচেও যে কখনো কখনো উইকেট পড়ে গেলে ছোট সময়ে জন্য উইকেটে সেট হয়ে রান করা, ওই অভ্যাসটা হয়তো বা স্বাভাবিকভাবে আমাদের ক্রিকেটে একটু কম আছে। এখানে একটা ঘাটতি থাকতে পারে। আমার মনে হয়, ওরা নিজেরাও খারাপ ফিল করছে আমার চেয়েও। আমি চাই যে ফাইনালের আগে এটা নিয়ে তারা চিন্তা করুক।’
এআরবি/আইএইচএস/জেআইএম