শেরে বাংলায় শততম ম্যাচে বাংলাদেশ না থাকায় বিব্রত পাপন!
সবার জানা আজ (বুধবার) শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামের শততম ওয়ানডে। এ উপলক্ষে ২০১৮ সালের ১৭ জানুয়ারি শেরে বাংলা স্টেডিয়ামের গ্যালারি থাকতে পারতো কানায় কানায় ভরা। দর্শক কলতানে মুখর। বাংলাদেশের সমর্থকদের সরব উপস্থিতিতে মেতে ওঠার এক অন্যরকম সন্ধ্যা হয়ে থাকতে পারতো আজ। মোট কথা, আজকের দিনটি হতে পারতো বর্ণিল উৎসবে রঙিন।
কিন্তু হায়! বর্ণিল উৎসবের ছিটেফোটাও নেই। আর দর্শক কলতানে মুখর তো বহুদুরে, আজ খেলা দেখতে মাঠে এক হাজার দর্শকও আসেননি। সর্বোচ্চ পাঁচ-ছ’শ দর্শক মাঠের এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিলেন।
উৎসবের ছিটেফোটা কী করে থাকবে! ভেন্যু শেরে বাংলার ১০০ নম্বর ওয়ানডে হলেও সেখানে ছিল না স্বাগতিক বাংলাদেশ। মাশরাফি, তামিম, মুশফিক, সাকিব ও মাহমুদউল্লাহদের খেলা হলে এমনিতই দর্শকে ঠাসা থাকে শেরে বাংলা।
তারওপর এই মাঠের শততম ওয়ানডে- ঐতিহাসিক ম্যাচ। ইতিহাসের অংশ হবার সুবর্ণ সুযোগ। নিজেকে ইতিহাসের অংশ করতে এবং ২৫ হাজার সৌভাগ্যবানের মধ্যে জায়গা করে নিতে রীতিমত সাড়া পড়ে যেত। মাঠে দর্শকের ঢল নামতো।
এটা ক্রিকেটের দুই চির প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ হলেও তবু একটা কথা ছিল; কিন্তু এ যে জিম্বাবুয়ে আর শ্রীলঙ্কার মোকাবিলা! জিম্বাবুয়ে একেবারে তলানিতে। আর স্বর্ণ সময় পিছনে ফেলে নিজেদের হারিয়ে ফেলা শ্রীলঙ্কার এমন ম্যাড়মেড়ে ক্রিকেট দেখতে এই প্রচন্ড শীতে কেনইবা মাঠে ছুটবেন দর্শকরা?
এই যে একটা উৎসবের উপলক্ষ্য গেল, বিশ্বের ৬ নম্বর ভেন্যু হিসেবে ১০০তম ওয়ানডের দিয়ে নিজের নামকে স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখলো মিরপুরের হোম অব ক্রিকেট। সেখানে স্বাগতিক দলের অংশ গ্রহণটাই যে ছিল স্বাভাবিক! আজ শুধু বাংলাদেশের খেলা থাকলেই চলতো। বাণিজ্য মেলার প্রাণ চাঞ্চল্য আর বিক্রি যেত কমে। সব পথ এসে মিশতো শেরে বাংলায়।
কিন্তু এর সবটাই চিন্তায়, চেতনায় আর স্বপ্নে। বাস্তবে নয়। তাই তো বর্ণিল উৎসবের বদলে ক্রিকেট অনুরাগীদের মনে আফসোস-অনুশোচনা। ইস! বুধবার শেরে বাংলার ১০০ নম্বর ওয়ানডে ম্যাচে যদি টাইগারদের খেলা থাকতো! তাহলে ঠিক যেতাম ছুটে।
দুঃখজনক হলেও সত্য, বর্ণিল উৎসবের বদলে সবার আফসোসের একদিন হয়ে থাকলো ২০১৮ সালের ১৭ জানুয়ারি। সবার মনে থাকবে, শেরে বাংলার এক নম্বর ওয়ানডে ম্যাচটি খেললেও শততম ম্যাচে টিম বাংলাদেশ ছিল দর্শকের আসনে।
দেশের এক নম্বর ক্রিকেট ভেন্যুতে শততম ম্যাচ- অথচ তাতে খেলা হলো না মাশরাফি, সাকিব, তামিম, মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহদের। এর চেয়ে বড় অনুশোচনার আর কী হতে পারে?
সিরিজের সূচি তৈরির বিষয় পুরোটাই ছিল বিসিবির এখতিয়ার। তাদের নিজেদের আয়োজন। ইচ্ছেমত ফিকশ্চার তৈরি করার অবারিত সুযোগ ছিল হাতে। ফিকশ্চারটা একটু ভেবে-চিন্তে করলেই হয়ে যেত; কিন্তু তা আর হলো কই!
বোঝাই গেল তিন জাতি ক্রিকেট আসরের ফিকশ্চার করার সময় সংশ্লিষ্ট কারো মাথায় বিষয়টি আসেনি। তারা কেউ হয়ত জানতেনও না যে, ১৭ জানুয়ারি এই মাঠের ১০০ নম্বর ওয়ানডে ম্যাচ। জানলে নিশ্চিতভাবেই বাংলাদেশের ম্যাচ রাখা হতো এদিন।
যারা বাংলাদেশে কোন আন্তর্জাতিক ম্যাচের সূচি তৈরি করেন, তারা একটু চোখ-কান খোলা রাখলেই হয়ে যেত; কিন্তু তারা অন্তত এবার অন্ধ হয়েই ছিলেন। তাদের অদুরদর্শিতায় হাতছাড়া হলো এক উৎসবের উপলক্ষ। একটি ঐতিহাসিক দিন পালিত হলো অতি সাদামাটাভাবে।
বলার অপেক্ষা রাখে না বাংলাদেশের মানুষের ভালবাসা, ঐক্য আর ঐতিহ্যের প্রতীক ক্রিকেট। প্রিয় জাতীয় দলের খেলা থাকলে লাল-সবুজ পতাকা হাতে মাঠে ছোটেন হাজারো বাংলাদেশি। আর ‘বাংলাদেশ’, ‘বাংলাদেশ’ ধ্বনিতে আকাশ বাতাস করে তোলেন মুখরিত। সেই দেশের মূল ক্রিকেট ভেন্যুর ১০০ নম্বর ওয়ানডে ম্যাচে মাশরাফির দল থাকলে কেমন উৎসবের আবির ছড়ানো এক দিন হয়ে থাকতো আজ!
কেন এমন ঐতিহাসিক এক দিনকে স্মরণীয় করে রাখা গেল না? এ প্রশ্ন বাংলাদেশের প্রতিটি ক্রিকেট অনুরাগীর। আজ টিভির সামনে বসে থাকা প্রতিটি টাইগার সমর্থকের মনে ঘুরে ফিরে এ প্রশ্নই উঁকি দিয়েছে।
বিসিবি সভাপতির কাছেও স্থানীয় প্রচার মাধ্যমের পক্ষ থেকে সে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়া হয়েছিল। এমনিতে অনেক জটিল প্রশ্নের উত্তর বেশ দক্ষতার সাথে দেয়ার বেশ নজির আছে তার; কিন্তু আজ শেরে বাংলার শততম ওয়ানডেতে স্বাগতিক বাংলাদেশ কেন নেই?
এ প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে বারবার থমকে যাচ্ছিলেন নাজমুল হাসান পাপনও। নিজেও বুঝেছেন এমন ঐতিহাসিক দিনে টাইগারদের ম্যাচ না থাকাটা রীতিমত একটা অদুরদর্শি কাজ হয়ে গেছে। যেটা ব্যর্থতারই নামান্তর এবং একটা উৎসবের উপলক্ষ্য হাতছাড়া করা। তাই বিসিবি বিগ বস বার বার, হ্যাঁ-না, না-হ্যাঁ করতে করতেই জবাব দিলেন।
এ নিয়ে কিছু কথা বলতে গিয়ে অবশ্য এক জায়গায় গিয়ে ঠিকই তার মুখ থেকে বেরিয়ে এসেছে, ‘আজ যে বাংলাদেশের ম্যাচ আয়োজন করা যেতো না, তা নয়। করতে পারলে ভালো হতো।’
বিসিবি সভাপতির এমন মন্তব্যই বলে দিচ্ছে আসলে একটা বড় ভুল হয়ে গেছে। তবে সে ভুল যে ইচ্ছাকৃত কিংবা শততম ম্যাচ কবে, তা জানায় সমস্যা ছিল- এমন কথা অবশ্য বলেননি নাজমুল হাসান পাপন। সম্ভাব্য কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি আরও কিছু প্রাসঙ্গিক কথা তুলে যা বললেন, তার সারমর্ম হলো, দলগুলোর আসার দিন তারিখ নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকার কারণেই আজকের দিনে বাংলাদেশের ম্যাচের আয়োজন করা সম্ভব হয়নি।
তার ব্যাখ্যা, বাংলাদেশের খেলা আয়োজন হয়তো করা যেতো; কিন্তু দলগুলোর আসার দিন তারিখ শতভাগ নিশ্চিত না হওয়ায় নাকি তা করা যায়নি। তাইতো নাজমুল হাসান পাপনের শেষ কথা, ‘আসলে দলগুলো আসার ব্যাপারে অনিশ্চয়তা ছিল। তারপরও জিম্বাবুয়েও দেরি করে এসেছে। আসলে এই একটু তাড়াহুড়োর মধ্যে ছিল। কিছুটা অনিশ্চয়তা ছিল বলে আমরা আগে থেকে পুরাপুরি নিশ্চিত করতে পারিনি।’
এআরবি/আইএইচএস/এমএস