ভিডিও EN
  1. Home/
  2. খেলাধুলা

বেতন বৈষম্য কমানোর আহ্বান সাকিবদের

স্পোর্টস ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৬:১৫ পিএম, ১০ জানুয়ারি ২০১৮

এমসিসি ওয়ার্ল্ড ক্রিকেট কমিটির সভায় প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে অংশ নিয়ে ক্রিকেটে দারুণ অশনিং সংকেত শুনতে পেলেন বাংলাদেশের বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। এমসিসি ক্রিকেট কমিটির সভায় বিশ্ব ক্রিকেটারদের বেতন বৈষম্য নিয়েই সবচেয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে। যেখানে উদাহরণ হিসেবে টেনে আনা হয় বাংলাদেশের সাকিব আল হাসান এবং ইংল্যান্ডের জনি বেয়ারেস্টকে।

বেতন বৈষম্যের কথা ওঠে আসার পর এমসিসি ওয়ার্ল্ড ক্রিকেট কমিটি সতর্ক করে দিয়েছে, যেসব ক্রিকেটার কম বেতন পান কিংবা ন্যূনতম কোনো বেতনে ক্রিকেট খেলে থাকেন, তাদের দ্বারাই সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি হওয়ার সম্ভাবনা। তাদেরকে সহজেই অনৈতিকতার দিকে নিয়ে যাওয়া যাবে।

এ দুই ক্রিকেটারের মধ্যে যে পরিমাণ বেতন বৈষম্য- তা কমানো না গেলে ক্রিকেট খেলারই আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে ক্রিকেটাররা। এমনকি স্পট ফিক্সিং, ম্যাচ ফিক্সিংয়ের মতো ক্রিকেট দুর্নীতি কমানো যাবে না। শুধু তাই নয়, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের চেয়ে তখন ক্রিকেটাররা ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি লিগের দিকেই গণহারে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকে পড়বে।

অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে মঙ্গলবার এবং বুধবার অনুষ্ঠিত হয়েছে এমসিসি ওয়ার্ল্ড ক্রিকেট কমিটির বার্ষিক সভা। যে কমিটিতে রয়েছে সাবেক ক্রিকেটারদের মধ্যে রিকি পন্টিং, ব্রেন্ডন ম্যাককালাম, কুমার সাঙ্গাকারার মতো গ্রেটরা। সেই সভায় নিজের মতামত তুলে ধরতে গিয়ে সাকিব আল হাসান বলেছেন, ‘বাংলাদেশের অসংখ্য তরুণ ক্রিকেটার টেস্ট ক্রিকেটকে আর তাদের লক্ষ্য হিসেবে দেখেন না। টেস্টের তুলনায় টি-টোয়েন্টি থেকে বেশি আয়ের সুযোগ থাকাই এর কারণ।’

বেতন বৈষম্যের কারণেই এখন আর জাতীয় দলে খেলার আগ্রহ নেই ক্রিকেটারদের মধ্যে। তার চেয়ে বরং, জাতীয় দল ছেড়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের প্রতি ঝুঁকে পড়ার প্রবণতা বেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে। অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক রিকি পন্টিং এ ব্যাপারে বলেন, ‘আমরা আশা করবো, আইসিসি খেলোয়াড়দের আর্থিক নিরাপত্তার বিষয়টি আরও ভালোভাবে অনুধাবন করবে এবং এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এটা তো স্বাভাবিকভাবেই বোঝা যায় যে, ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট খেলোয়াড়দের অনেক বেশি আর্থিক নিরাপত্তা দিচ্ছে। সেখানে তারা অনেক বেশি পারিশ্রমিক পাচ্ছে। যে কারণে জাতীয় দলের চেয়ে এসব ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে খেলাই বেশি নিরাপদ মনে করছে তারা। আপনি খেলোয়াড়দের এসব টুর্নামেন্টে খেলার কারণে দোষও দিতে পারবেন না। ইংলিশ কিংবা অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটারদের আপনি জাতীয় দল ছেড়ে আইপিএল খেলতে দেখবেন না। এর কারণ তারা (বোর্ড) খেলোয়াড়দের সন্তোষজনক পারিতোষিক দিয়ে থাকে। তাই বছরের বেশির ভাগ সময় ধরে টেস্টে সেরা খেলোয়াড় পেতে ইংল্যান্ড কিংবা অস্ট্রেলিয়ার কাছাকাছি চুক্তি নিশ্চিত করা উচিত। এতে তাদের দেশের প্রতিনিধিত্ব করার আগ্রহে ভাটা পড়বে না।’

সাকিবের কথার সূত্রকেই টেনে আনেন পন্টিং তার কথায়। তিনি বলেন, ‘সাকিব উদাহরণ হিসেবে বাংলাদেশের ক্রিকেটে অনেক দিন ধরে চলে আসা কিছু সমস্যা আর ঘটনার কথা বলেছে। সে এও বলেছে, টাকা (সারা বিশ্বে ক্রিকেট থেকে যে পরিমাণ আয় হয়, এর অংশ) কোথায় যায় সেটা আইসিসিকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সে জানে, বিশাল অঙ্কের টাকা হয়তো সঠিক জায়গাতেই যাচ্ছে, কিন্তু খেলোয়াড়দের কাছে যেভাবে যাওয়া উচিত, সেভাবে নয়।’

এমসিসি ক্রিকেট কমিটির সভায় ওঠে এসেছে, এ ধারা চলতে থাকলে বাংলাদেশের মতো টেস্ট ক্রিকেটে দীর্ঘ ঐতিহ্য বা অবকাঠামো নেই- এমন দেশগুলোতে বড় দৈর্ঘ্যের ক্রিকেট আরও গুরুত্ব হারাবে ক্রিকেটারদের কাছে। শুধু তো গৌরব আর ঐতিহ্যকে তুলে ধরে এখন আর ক্রিকেটের প্রতি আকর্ষণ তৈরি করা যাবে না তরুণ ক্রিকেটারদের। এমসিসি কমিটির সদস্যরা সতর্ক বার্তা দিয়েছেন, ২০ ওভারের ক্রিকেট তরুণদের কাছে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠলে, শুধু টেস্ট নয়; আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের গুরুত্ব দেশের খেলোয়াড়দের কাছে কমে যাবে। এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ তো সামনেই রয়েছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ! তাদের ইতিহাস-ঐতিহ্য কী নেই! কিন্তু সেখানে তো ২০ ওভারের ক্রিকেটেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটারদের কাছে। টেস্ট নয়।

সাকিব যে আহ্বান জানিয়েছেন, সেটাকে বেশ গুরুত্বের সঙ্গেই নিয়েছেন রিকি পন্টিং। তিনি এর সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে বলেন, ‘আমরা দেখতে চাই, টাকা যেখানে যাওয়া উচিত, সেই খেলোয়াড়দের পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার ব্যাপারে আরও সম্পৃক্ত হবে আইসিসি। এটাও বুঝতে হবে, ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টগুলো খেলোয়াড়দের দেশের প্রতিনিধিত্ব না করার ব্যাপারটি আরও সহজ করে দিচ্ছে, সেটা আরও ভালো বেতন-ভাতা দেওয়ার মধ্য দিয়ে। আইপিএল এ ক্ষেত্রে সম্ভবত সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখে অন্যান্য দেশের ঘরোয়া টুর্নামেন্টকেও প্রভাবিত করছে।’

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দেশভেদে খেলোয়াড়দের বেতন-ভাতার বিস্তর ফারাক। অস্ট্রেলিয়ার স্টিভেন স্মিথ গত বছর আয় করেছেন প্রায় ১৫ লাখ ডলার। অথচ এ একই সময়ে জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক গ্রায়েম ক্রেমারের আয় ৮৬ হাজার ডলার! সাকিব অবশ্য ক্রেমারের চেয়ে বেশি আয় করেছেন। গত বছর ১ লাখ ৪০ হাজার ডলার আয় করেছেন বাংলাদেশের এ ক্রিকেটার।

এমসিসিসি ক্রিকেট কমিটি শুধু আইপিএল নয়, বিগ ব্যাশ কিংবা সুপার লিগের জন্যও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সূচিতে একটা জায়গা চেয়েছে। এর কারণ, এসব লিগে যেন বিশ্বসেরা ক্রিকেটাররা খেলার সুযোগ পায়।

আইএইচএস/জেআইএম

আরও পড়ুন