নতুন কে আসছেন দলে?
প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু আগেই জানিয়ে দিয়েছেন ৭ জানুয়ারি তিন জাতি ক্রিকেটের জন্য দল ঘোষণা। আজই (রোববার) ৭ জানুয়ারি। দল ঘোষণার দিন। দল কি চূড়ান্ত?
মিনহাজুল আবেদিন নান্নু রোববার সকালেই জাগো নিউজকে জানিয়ে দিলেন, ‘ঘোষণার আগের পর্ব শেষ হয়েছে আগের দিনই। আমরা ৬ জানুয়ারি রাতেই বোর্ডে দল জমা দিয়ে দিয়েছি।’ এখন বোর্ড সভাপতির অনুমোদনের পর তা ঘোষণা। সে পর্বটা যদিও বোর্ডের এখতিয়ার। তারপরও মিনহাজুল আবেদিন নান্নুর ব্যাখ্যা, হয়তো আজ দুপুরেই ঘোষণা। দল নিয়ে যথারীতি প্রধান নির্বাচক নীরব। সর্বোচ্চ গোপনীয়তা। তবে জাগো নিউজকে একটি তথ্যই দিয়েছেন। তাহলো, দল হবে ১৫ জনের।
আগে জানা ছিল ১৪ জনের স্কোয়াড সাজানো হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হিসেব বদলে গেছে। সেটা কেন? ১৪ জনের জায়গায় দল ১৫ জনের কেন? জাগো নিউজকে সে ব্যাখ্যা দিয়েছেন তিন জাতি সিরিজ ও শ্রীলঙ্কার হোম সিরিজের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজন। তার ব্যাখ্যা, এটা তিন জাতি সিরিজ, প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা আর জিম্বাবুয়ে। একেক দলের গঠন শৈলী ও বৈশিষ্ট ভিন্ন, দুরকম। তাই ঐ দুই রকমের বৈশিষ্টের দলের জন্য আমাদেরও দলে একটু বৈচিত্র রাখার চিন্তা ভাবনা করতে হচ্ছে।
খালেদ মাহমুদের ঐ ব্যাখ্যাই বলে দিয়েছে জিম্বাবুয়ে আর শ্রীলঙ্কার কথা ভেবেই একজন ক্রিকেটার বাড়ানো। বলার অপেক্ষা রাখে না, জিম্বাবুয়ে বরাবরই স্পিনে দূর্বল। তাদের বিপক্ষে একজন বাড়তি স্পিনার নিয়ে দল সাজানোর চিন্তা থাকে সব সময়। কিন্তু অপর প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কাকে আবার স্পিন দিয়ে কাবু করা কঠিন। তাই বিকল্প পথে হাঁটা ছাড়া উপায় নেই। এ কারণেই হয়তো একজন বাড়তি পেসারের অন্তর্ভুক্তির কথা ভাবা হচ্ছে।
তাই দল হবে ১৫ জনের। ধরেই নেয়া যায়, সেটা কোন স্পেশালিষ্ট ব্যাটসম্যান না, হয়তো একজন বোলার হবেন। বলার অপেক্ষা রাখে না, এ মুহূর্তে জাতীয় দলের উদ্বোধনী জুটিই ঠিক না। তামিম ইকবাল ছাড়া আর কেউ সে অর্থে রানে নেই। টেস্টে হয়তো তামিম-ইমরুলকেই দেখা যাবে। তিন জাতি আসর ও শ্রীলঙ্কার সঙ্গে টি-টোয়েন্টি সিরিজে লিটন দাস,সৌম্য আর এনামুল হক বিজয়ের দিকে চোখ নির্বাচকদের।
মাঝে যে তিনজন তামিমের সঙ্গে তিন ফরম্যাটে খেলেছেন, সেই ইমরুল, সৌম্য ও লিটন কারোই ফর্ম ভালো না। ইমরুল বিপিএলে রান করলেও সৌম্য-লিটনের ব্যাটে রান নেই। তাই নির্বাচকরা দুইজন ওপেনার নির্বাচন নিয়ে খানিক দ্বিধা ও সংশয়ে। মাঝে তামিম-ইমরুল টেস্টে ইনিংসের সূচনা করলেও সীমিত ওভারের ফরম্যাটে তামিমের সঙ্গী ছিলেন সৌম্য সরকার। কিন্তু তার সময় ভালো যাচ্ছে না। দক্ষিণ আফ্রিকায় দুই ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে চল্লিশের ঘরে পা রাখলেও বিপিএলে একদমই ভালো খেলেননি সৌম্য। বিপিএলে যে দলের হয়ে খেলেছেন, সেই চিটাগাং ভাইকিংসের টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার ছিলেন খোদ প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু। তিনি পাখির চোখে পরখ করেছেন সৌম্যকে। লিটন দাস কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে বিপিএলে শেষ দিকে রান পেলেও আহামরি ভালো খেলতে পারেননি। সে তুলনায় এনামুল হক বিজয়ের ব্যাট সাবলীল ছিল খানিকটা। তিনি রানও (২০৬) পেয়েছেন।
গতকাল শনিবার শেরে বাংলায় যে প্রস্তুতি ম্যাচ হয়েছে, সেখানে তামিম ছাড়া একজন ওপেনারও রান পাননি। তামিম সেঞ্চুুরি করেছেন। আর ইমরুল, লিটন দাস, সৌম্য, এনামুল বিজয় কেউ রান পাননি। কারো ব্যাট তিরিশেরে ঘরেও পৌঁছায়নি। বরং মাশরাফির নেতৃত্বাধীন সবুজ একাদশের হয়ে ওপেন করতে নেমে মোহাম্মদ মিঠুন সর্বাধীক ৩২ রান করেছেন। এছাড়া বিজয়ের রান ছিল ২১। ইমরুল, লিটন আর সৌম্যর কেউ বিশের ঘরেও যেতে পারেননি। এখন দেখার বিষয় তামিমের সঙ্গে তিন জাতি আসরে ওপেনারে কোটায় আর কে কে সুযোগ পান? এই জায়গায় ইনফর্ম মিঠুন ফিরে আসলেও অবাক হবার কিছু থাকবে না।
আরও দুটি পজিসন নিয়েও নির্বাচকরা দুবার ভেবেছেন। তার একটি থার্ড সিমার কাম লেট অর্ডার; মাঝে থার্ড সিমার কাম লেট অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসেবে সাইফউদ্দীন খেলেছেন। এবার বিপিএলে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়েও বল ও ব্যাট হাতে নজর কেড়েছে তরুণ সাইফউদ্দীন। একই ক্যাটাগরিতে ভালো করেছেন সিলেট সিক্সার্সের আবুল হাসান রাজুও। তার দিকেও দৃষ্টি আছে নির্বাচকদের। কাল প্র্যাকটিস ম্যাচে ১৯ বলে ৩৫ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে নিজের দলে থাকার দাবিটা আরও জোরালো করেছেন আবুল হাসান রাজু।
এছাড়া বাঁহাতি স্পিনারের দ্বিতীয় অপশনেও রদবদল আসতে পারে। সেখানে সানজামুলই সাকিবের সঙ্গী হবেন, না বিপিএলে ভালো করা নাজমুল অপুকে বিবেচনায় আনা হবে, তা নিয়েও চলছে হিসেবে নিকেশ।
তারপরও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে গত অক্টোবরে যে দলটি খেলেছে তাতে বড় ধরণের পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা কম। কারণ তিন ম্যাচের সিরিজে পুরো দলই ছিল ব্যর্থ। কারো একক পারফরমেন্স তাই মানদণ্ডে আনার সুযোগ নেই। তারপরও ওপেনার সৌম্য সরকার, ফাস্ট বোলার তাসকিনকে নিয়ে দোটানায় নির্বাচকরা।
একটি নির্ভরশীল সূত্র জানিয়েছে সৌম্য সরকারকে বিশ্রাম দেয়ার কথা ভাবা হচ্ছে জোরে সোরে। দেশের মাটিতে জিম্বাবুয়ে ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হয়তো স্লো উইকেটেই খেলা হবে। সেখানে সব সময় বাড়তি গতি সঞ্চারের চেষ্টা করা তাসকিনকে খেলানো নিয়ে আছে সংশয়। দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কাদের কপাল খোলে।
সম্ভাব্য দল: তামিম ইকবাল, ইমরুল কায়েস, লিটন দাস/ এনামুল বিজয়, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহীম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, সাব্বির রহমান, নাসির হোসেন, মাশরাফি বিন মর্তুজা (অধিনায়ক), মেহেদি মিরাজ, মোস্তাফিজুর রহমান, রুবেল হোসেন, তাসকিন আহমেদ/আবুল হাসান রাজু, সাইফউদ্দীন, সানজামুল ইসলাম/নাজমুল অপু।
এআরবি/এমআর/পিআর