সুজন ভাই সবাইকে সমানভাবে দেখেন : ইমরুল
বাংলাদেশের কোচদের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা তুলনামূলক কম। স্থানীয় কোচদের কথাও নাকি ক্রিকেটাররা সেভাবে শোনেন না। বা কম শোনেন। ক্রিকেট পাড়ায় এসব কথা প্রায়ই শোনা যায়। এমনও কথা চাউর আছে, ‘আরে ঢাকার ক্লাব ক্রিকেট ও বিপিএলে কোচিং করানো আর জাতীয় দলের প্রশিক্ষকের ভূমিকা নেয়া কি এক কথা?'
জাতীয় দল পরিচালনা, ক্রিকেটারদের সঠিক ও যথাযথ পরিচর্যা ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট উপযোগী কৌশল নির্ধারণ- অনেক ঝক্কির কাজ। এজন্য বাড়তি মেধা ও প্রজ্ঞা দরকার।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে চলমান ধারার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কোচিং ম্যাথড আত্মস্থ করা প্রয়োজন। দেশি কোচদের যাতে ঘাটতি রয়েছে। তাই চন্ডিকা হাথুরুসিংহের পদত্যাগের পর ঘরের ছেলে আমিনুল ইসলাম বুলবুল, খালেদ মাহমুদ সুজনের মত সাবেক আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার থাকার পরও হন্যে হয়ে বিদেশি হেড কোচ খুঁজছে বিসিবি। ভাবটা এমন, সুজন-বুলবুলরা জাতীয় দলকে সামলাতে পারবেন না।
সত্যিই কি তাই? স্বদেশি খালেদ মাহমুদ সুজন, আমিনুল ইসলাম বুলবুল আর মোহাম্মদ সালাউদ্দীনের কি টিম বাংলাদেশকে সামলানোর ক্ষমতা নেই? নিশ্চয়ই আছে। তা যদি না থাকবে, তাহলে বিপিএলে এক ঝাঁক তারকার দল ঢাকা ডায়নামাইটস আর কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে কি করে সামলান ওরা?
বিপিএলে কুমারা সাঙ্গাকারা, শহিদ আফ্রিদী, সুনিল নারিন, এভিন লুইস, কাইরন পোলার্ড আর মোহাম্মদ আমিরের মত প্রতিষ্ঠিত ও তারকা ক্রিকেটারদের অনায়াসে পরিচালনা করা খালেদ মাহমুদ সুজন কি হাথুরুর বিকল্প হতে পারেন না?
ঢাকা ডায়নামাইটস আর কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের ড্রেসিং রুম আর বেঞ্চ কি বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ে কম সমৃদ্ধ? ঐ দুই দলে কম করে হলে ৬/৮ জন বিশ্বমানের ক্রিকেটার ছিলেন। বাংলাদেশে তার অর্ধেক সংখ্যক তারকাও নেই।
আসলে এটাও এক রকম হীনমন্যতা। নিজেদের মেধা ও প্রজ্ঞাকে খাটো করে দেখার মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ।
এটা সত্য যে, দায়িত্ব পেলে স্থানীয় কোচরাও পারেন। তাদেরও দল পরিচালনা এবং ক্রিকেটারদের ব্যবস্থাপনার যথেষ্ট সক্ষমতা আছে। তারাও ক্রিকেটারদের ভুল ত্রুটি শুধরে দেয়ার সামর্থ্য রাখেন। আর সবচেয়ে বড় কথা, সুজন বেশ কয়েক বছর ধরে জাতীয় দলের সাথে আছেন। ঘরের ক্রিকেটে নিয়মিত কোচিং করান, বাংলাদেশের অন্তত ৪০/৫০ জন শীর্ষ ক্রিকেটার সম্পর্কে তার আছে স্বচ্ছ ধারণা। ক্রিকেটাররাও মানেন তা।
অনুশীলন ক্যাম্পে থাকা ক্রিকেটাররা প্রতিদিন বলছেন সে কথা। মাশরাফি, সাকিব, মাহমুদউল্লাহ, সৌম্য-সবাই স্বীকার করেছেন খালেদ মাহমুদ সুজন তাদের বড় ভাইয়ের মত। ঘরোয়া ক্রিকেট এবং জাতীয় দলে তিনি অনেক দিন তাদের সঙ্গে কাজ করেছেন। ক্রিকেটারদের সঙ্গে তার সম্পর্কও অনেক আন্তরিক। তাদের ভুল ত্রুটি কাটাতে সুজন বড় সহায়। কারণ তিনি সুসময় ও দু:সময়-সব সময়ই সাথে বড় ভাইয়ের ছায়া নিয়ে থাকেন।
আজ প্রায় একই কথা বললেন ইমরুল কায়েস। জানিয়ে দিলেন, সুজন ভাইয়ের ওপর ওপর স্থানীয় ক্রিকেটারদের বিশ্বাস ও আস্থা যথেষ্ট। শুক্রবার প্র্যাকটিসে জাতীয় দলের প্রস্তুতি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে এ বাঁহাতি ওপেনার বলে ওঠেন, ‘সুজন ভাই আমাদের অনেক দিন ধরেই হেল্প করছেন। উনি আমাদের সবাইকে খুব ভালোভাবে চেনেন। আমরাও তাকে ভালোভাবে চিনি। আমরা অনুশীলনে নতুন কিছু করছি না। আমাদের যে সব জায়গায় উন্নতি দরকার, সেগুলো নিয়ে কাজ করছি।’
অভিযোগ আছে, হাথুরুসিংহে সবাইকে সমানভাবে ট্রিট করতেন না। সবার প্রতি সমান নজর, গুরুত্বও দিতেন না। খালেদ মাহমুদ সুজন যেটা দিচ্ছেন । এ সম্পর্কে কিছু বলতে বলা হলে ইমরুল বলেন, ‘আগের কোচ কি করেছে না করেছে, সেটা তার ব্যাপার। আর একটা মানুষের কাছে সবাই ভালো হতে পারে না। তবে সুজন ভাই দীর্ঘদিন দলের সঙ্গে আছেন। উনি সবাইকে সমানভাবেই দেখেন।'
হাথুরুর সময়ের সঙ্গে সুজনের এই সময়টার পার্থক্য কি? দলের আবহাওয়া এখন কেমন-এমন প্রশ্নে হেসে দিলেন ইমরুল। বললেন, ‘আপনি যদি দেখেন আবহাওয়া এখন ঠান্ডা (হাসি)... পরিবেশ। আসলে...সুজন ভাই এখন আমাদের সাথে থাকাতে তাকে অনেক কাছের মনে করি। আমি ছোট থেকে যখন খেলছি, একাডেমিতে উনাকে কাছে থেকে দেখেছি। এদিক থেকে যদি বলেন, একজন গাইড হিসেবে পেয়েছি তাকে। আমরা চেষ্টা করবে এই জিনিসটার (সুবিধা) কাজে লাগানোর।’
এআরবি/এমএমআর/এসএম