২০ লাখ টাকা জরিমানা, ৬ মাস নিষিদ্ধ, চুক্তি থেকে বাদ সাব্বির
জাতীয় ক্রিকেট লিগের (এনসিএল) শেষ রাউন্ড চলাকালে এক ক্ষুদে দর্শককে পেটানো এবং পরে শুনানির জন্য ডাকা হলে ম্যাচ অফিসিয়ালদের হুমকি দেয়ার অপরাধে যে সাব্বির রহমানের কঠোর শাস্তি হতে যাচ্ছিল সেটা অনুমেয়ই ছিল। আগেরদিনই জানা গিয়েছে, কঠোর শাস্তি হতে যাচ্ছে সাব্বিরের। অবশেষে সেটাই সত্যি প্রমাণিত হলো।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন আজ বিকেলে সংবাদ সম্মেলন ডেকে সাব্বিরের শাস্তির ঘোষণা দেন। সেখানেই তিনি জানান, জাতীয় দলের চুক্তি থেকে বাদ দেয়া হয়েছে তাকে। একই সঙ্গে ২০ লাখ টাকা জরিমানা এবং ঘরোয়া ক্রিকেটে ৬ মাসের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সাব্বিরের এসব কঠোর শাস্তির জন্য ডিসিপ্লিনারি কমিটি থেকে বিসিবির কা ছে সুপারিশ করেছে বলে জানিয়েছেন সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন।
ডিসিপ্লিনারি কমিটি থেকে সাব্বিরের শাস্তির ব্যাপারে যে সুপারিশ বিসিবির কাছে পাঠানো হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে ২০ লাখ টাকা জরিমানা, ৬ মাসের জন্য ঘরোয়া ক্রিকেটে নিষেধাজ্ঞা। একই সঙ্গে এবারই তাকে শেষ সুযোগ দেয়া হচ্ছে বলে সুপারিশ করা হয়। ভবিষ্যতে এ ধরনের অপরাধ করলে আজীবনের জন্য নিষিদ্ধ করা হতে পারে। শৃঙ্খলা কমিটির এসব সুপারিশ মিডিয়ার মাধ্যমে সবাইকে সভাপতি জানালেও তা পাশ হবে বিসিবির আগামী কার্যনির্বাহী কমিটির সভায়।
এসব বিষয়ে বিসিবি প্রেসিডেন্ট নাজমুল হাসান পাপন বলেন, ‘সাব্বিরের বিষয়ে আলাপ আলোচনা হয়েছে। আমাদের ডিসিপ্লিনারি কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শুনানিও হয়েছে। আমরা ম্যাচ রেফারির রিপোর্টও পেয়েছি। ওর ব্যাপারে প্রস্তাব যেটা এসেছে সেটা হচ্ছে, আমাদের যে কেন্দ্রীয় চুক্তি আছে- সেটা থেকে ও বাদ পড়ছে। সাব্বির আমাদের কেন্দ্রীয় চুক্তির খেলোয়াড় আর থাকছে না। এমনি এখন নতুন করে হওয়ার কথা। এই চুক্তিতে সে থাকছে না।’
কেন্দ্রীয় চুক্তির বাইরে রাখার সঙ্গে আরও বড় শাস্তি রয়েছে সাব্বিরের। ডিসিপ্লিনারি কমিটি ২০ লাখ টাকা জরিমানার সঙ্গে ৬ মাসের ঘরোয়া ক্রিকেটে নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাবও দিয়েছে। নাজমুল হাসান পাপন বলেন, ‘আমাদের ডিসিপ্লিনারি কমিটি যে সুপারিশ করেছে সেটা আপনাদের বলেছি। এখন পর্যন্ত বোর্ডের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত কি সেটা কিন্তু বলিনি।’
অথ্যাৎ বোর্ড চাইলে এই শাস্তির কম-বেশি করতে পারে। পাপনের অনুভব শাস্তির পরিমাণ বেশিই হয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘প্রস্তাবগুলো কিন্তু কম না। প্রথমত হচ্ছে, বোর্ডের চুক্তি থেকে বাদ পড়া। বোর্ডের চুক্তি থেকে একটা খেলোয়াড় কিন্তু অনেক টাকা পায় (সাব্বির ছিলেন বি ক্যাটাগরিতে, বেতন মাসিক ২ লাখ টাকা করে)। ১৪ জন চুক্তিভুক্ত খেলোয়াড়। তারা কিন্তু ভালো টাকা পায়। এটা একটা বড় বিষয়। সঙ্গে বলেছে ২০ লাখ টাকা জরিমানা। তাকে ক্যাশ টাকা দিতে হবে। এরপর বলেছে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলতে পারবে না। ছয় মাসের জন্য। প্রিমিয়ার লিগও খেলতে পারবে না। এটাও বড় আর্থিক ক্ষতি। এই সিদ্ধান্তই হয়ে গেছে যে, তা নয়। প্রস্তাব এসেছে আজকে। আমরা দেখেছি ডিসিপ্লিনারি কমিটি কি সিদ্ধান্ত নেয়। তবে এটা খুব কম নয়।’
এবারই শেষ সুযোগ সাব্বিরের সামনে। এরপর আর সুযোগ দেয়া হবে না, নিষিদ্ধ করা হবে। পাপন তেমনই জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি বলছি প্রস্তাবনা কি এসেছে। তবে হ্যাঁ, একটা জিনিস বলেছে প্রস্তাবনায় আছে যে- এবারই তাকে শেষ সুযোগ দেয়া হচ্ছে। টাকার অঙ্ক কিন্তু অনেক। তারপরও বলছে, এটা তার শেষ সুযোগ। তার মানে তারা অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য সাসপেন্ড করার চিন্তাও করেছে। আমরা বোর্ড মিটিংয়ে সব ফাইনাল করবো।’
ঘরোয়া ক্রিকেটে আগামী ছয় মাস নিষিদ্ধ হওয়ার অর্থ, সাব্বির বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগ (বিসিবিএল) এবং ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে খেলতে পারছেন না। তবে, জাতীয় দলের হয়ে খেলতে কোনো বাধা নেই তার সামনে। নিষেধাজ্ঞা শুধুই ঘরোয়া ক্রিকেটের ক্ষেত্রে। আসন্ন ত্রিদেশীয় সিরিজ কিংবা শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজে খেলতে পারবেন তিনি।
এর আগেও শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে জরিমানা গুণতে হয়েছিল সাব্বির রহমানকে। গত বছর বিপিএল চলাকালীন সময়ে চট্টগ্রামে শৃঙ্খলাভঙ্গের শাস্তি হিসেবে প্রায় ১২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছিল তাকে। এছাড়া আম্পায়ারের অসদাচরনের জন্যও জরিমানা করা হয়। শুধু তাই নয়, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অসদাচরনের জন্য ৩ ডিমেরিট পয়েন্ট যোগ হয়ে আছে তার নামের পাশে।
আইএইচএস/আইআই/আরআইপি