বল টেম্পারিংয়ের অভিযোগে উত্তপ্ত অ্যাশেজ
অস্ট্রেলিয়া আর ইংল্যান্ডের মধ্যে চলছে অ্যাশেজ সিরিজ। এর মধ্যে কোনো বিষয় নিয়ে উত্তেজনা ছড়াবে না তা কী করে হয়! কথার যুদ্ধ তো সব সময়ই হয়, মাঠের যুদ্ধে নতুন নতুন বিষয় না উঠলে কী আর লড়াই জমে! অবশেষে মেলবোর্ন টেস্টে ব্যাট-বলের লড়াইয়ের বাইরে ‘অন্য লড়াই’য়ের দারুণ রসদ পেয়ে গেলো অস্ট্রেলিয়ান মিডিয়া।
শুধু পাওয়াই নয়, সেই রসদ নিয়ে ইতোমধ্যেই হা-রে-রে করে জাঁপিয়ে যুদ্ধের ময়দানেও ঝাঁপিয়ে পড়েছেন তারা। কারা সেই যুদ্ধের ময়দানের সৈনিক শুনবেন? শেন ওয়ার্ন, মাইকেল স্ল্যাটার এবং মাইক হাসির মত সাবেক বিখ্যাত ক্রিকেটাররা।
ঘটনার সূত্রপাত, মেলবোর্ন টেস্টের বৃষ্টি বিঘ্নিত চতুর্থদিনের শুরুতে অস্ট্রেলিয়া যখন দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করছিল তখন। চ্যানেল নাইনের ক্যামেরা ক্রু এবং ধারভাষ্যকাররা আবিস্কার করেন, ইংলিশ পেসার জেমস অ্যান্ডারসন আঙ্গুলের নখ ডুবিয়ে দিচ্ছেন বলের উপরিভাগের ওপর। যাতে বলের আকৃতিও পরিবর্তন হতে পারে। যা নিশ্চিত, বল টেম্পারিং। একই সময় জো রুটকেও দেখা যাচ্ছিল, বলটা অ্যান্ডারসনের হাতে তুলে দিতে।
চ্যানেল নাইনের ধারাভাষ্যকাররা এ নিয়েই ব্যাস্ত হয়ে পড়লেন। ভিডিও এবং ছবি বিশ্লেষণ করে তারা অস্ট্রেলিয়াজুড়ে ছড়িয়ে দিলেন, বল টেম্পারিং করছেন অ্যান্ডারসন এবং ইংলিশ অধিনায়ক জো রুট। চ্যানেল নাইনের ধারাভাষ্যকার শেন ওয়ার্ন বলে বসলেন, ‘আমি নিশ্চিত নই তাকে (অ্যান্ডারসনকে) বলের মধ্যে আঙ্গুলের নখ ডুবিয়ে দেয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে কি না।’
ওয়ার্নের সহযোগি মাইকেল স্ল্যাটার বলেন, ‘এটা তো খুবই অবাক করা ব্যাপার! আপনি কোনোভাবেই বলের মধ্যে নখ ডুবিয়ে দিতে পারেন না। এটা হতে পারে না, এটা হতে পারে না।’ ওয়ার্ন-স্ল্যাটারের সহযোগিতায় চ্যানেল নাইনের হয়ে মাঠের মধ্যে কাজ করছিলেন মাইক হাসি। তিনি তখন ভবিষ্যদ্বানী করেন, নিশ্চিত এ নিয়ে ম্যাচ রেফারি রঞ্চন মাদুগালের সামনে শুনানির মুখোমুখি হতে হবে অ্যান্ডারসনকে। যদিও চতুর্থ দিনের খেলা শেষে আইসিসির এক মুখপাত্র অস্ট্রেলিয়ানদের হতাশ করে জানিয়ে দিয়েছেন, অ্যান্ডারসনকে এ নিয়ে কোনো শুনানির মুখোমুখি হতে হবে না।
অস্ট্রেলিয়ানরা তো আর খালি মাঠে গোল দিতে পারে না। সেখানে তো প্রতিপক্ষ তৈরিই আছে। বল টেম্পারিংয়ের অভিযোগ ওঠার পরই ইংল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিষয়টার নোট নিয়ে রাখে। শুধু তাই নয়, ইংলিশ মিডিয়ায় ‘বল টেম্পারিং’ নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করায় তারা এ নিয়ে উষ্মাও প্রকাশ করেছে। বিষয়টা যখন বোঝা গেলো যে, তা পুরোটাই অস্ট্রেলিয়ান মিডিয়ার প্রোপাগান্ডা, তখন কয়েকটি প্রভাবশালী ব্রিটিশ মিডিয়া ‘বল টেম্পারিং’- এই দুটি শব্দই বাদ দিয়ে রিপোর্ট পূনরায় সম্পাদনা করেছে। শুধু তাই নয়, ফক্স স্পোর্টস তো রীতিমত ইংল্যান্ড দলের কাছে দুঃখও প্রকাশ করেছে এ নিয়ে।
এ নিয়ে শেষ পর্যন্ত মুখ খুলেছেন ইংল্যান্ড দলের কোচ ট্রেভর বেলিস। বল টেম্পারিংয়ের অভিযোগকে উড়িয়ে দিয়ে তিনি বললেন, অস্ট্রেলিয়ানরা এ অভিযোগ দিয়ে আমাদের ওপর নোংরা আক্রমণ করেছে। তারা বল টেম্পারিং অভিযোগ তুলে ‘পমি ব্যাশিং’ (ইংলিশদেরকে দেয়া অস্ট্রেলিয়ানদের এক ধরনের গালি বিশেষ) করতে চাইছে।
মূলতঃ ঘটনা হচ্ছে, বৃষ্টি বিঘ্নিত ম্যাচে বলের মধ্যে ময়লা লেগে গিয়েছিল। যা তোলার জন্য নখ দিয়ে খোঁচাতে হয়। বলের যে অংশ উজ্জ্বল, সেই অংশেই এই কাজ করতে হয়েছে। বেলিস বলেন, ‘বৃষ্টির কারণে খেলা বন্ধ হওয়ার পরই যখন ঘটনাটা আমার চোখে পড়লো, তখনই আমি আম্পায়ারদের কাছে গিয়েছি, বিষয়টা জানার জন্য। তারা যেটা বললো, সেটা হচ্ছে বলে ময়লা লেগে গিয়েছিল। আম্পায়ারদের কাছে বিষয়টা উত্থাপনের পর তারা বোলারদের সেটা পরিস্কার করার অনুমতি দিয়েছেন। এ কারণেই আমরা (বোলাররা) সেটা করেছি। এতে তো কোনো সমস্যা হয়নি!’
চলতি অ্যাশেজ সিরিজে অনেক ঘটনাই ইতিমধ্যে ঘটে গিয়েছে। হেড বাটের অভিযোগ, বিয়ার নিক্ষেপ করা, ম্যাচ ফিক্সিংয়ের অভিযোগ এমনকি স্লেজিংয়ের অভিযোগও উঠেছিল। বাকি ছিল বল টেম্পারিংয়ের অভিযোগ তোলা। সেটাও অবশেষে উঠে গিয়েছে মেলবোর্ন টেস্টে।
আইএইচএস/এমএস