ভিডিও EN
  1. Home/
  2. খেলাধুলা

দলের সবাইকে ‘ফাইটার’ বানাতে চাই : সুজন

আরিফুর রহমান বাবু | প্রকাশিত: ০৫:২১ এএম, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৭

বাংলাদেশের ক্রিকেটে খালেদ মাহমুদ সুজন এক লড়াকু ক্রিকেটারের প্রতিচ্ছবি। ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশের প্রথম বিশ্বকাপ মিশনে পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক জয়ের নায়ক এই মাঝারি গড়নের ক্রিকেটার। সেটাই শেষ নয়, চার বছর পর ২০০৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে বিশ্বকাপে করুণ পরিণতির (আইসিসির দুই সহযোগি সদস্য কানাডা ও কেনিয়ার কাছে হারসহ) পর জাতীয় দলকে নতুনভাবে গড়ে তোলার চ্যালেঞ্জিং মিশনেরও নাবিক এই অলরাউন্ডার। তখন তার কাঁধেই বর্তায় টিম বাংলাদেশের দাায়িত্ব।

বিশ্বকাপে বিধ্বস্ত দলটি লড়াকু সুজনের নেতৃত্বে আবার ঘুরে দাঁড়ায়। তার নেতৃত্বেই ২০০৩ সালে মুলতানে পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট জয়ের একেবারে দোরগোড়ায় পৌঁছে গিয়েছিল বাংলাদেশ। পরে ইনজামাম-উল হকের অতিমানবীয় ইনিংসের মুখে সে স্বপ্ন ভেঙে যায় বাংলাদেশের। এরপরও ব্যাট-বল হাতে সুজন জাতীয় দলকে ভালো সার্ভিস দিয়েছেন। ক্রিকেটীয় পরিভাষায় যাদের বলা হয় ‘ইউটিলিটি’ ক্রিকেটার। সুজন ছিলেন সে দলের সদস্য।

মাঠ ও মাঠের বাইরে সহযোগি, সমবয়সী এবং ছোট বড় নির্বিশেষে সবার সাথে আন্তরিক বন্ধন দৃঢ় করতে পারেন বলেই তাকে সবাই ‘চাচা’ বলে ডাকেন। সেই চাচা সুজনকে প্রথম জাতীয় দলের ব্যবস্থাপনায় সম্পৃক্ত করেন সাবেক কোচ ডেভ হোয়াটমোর। ২০০৬ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে সরে দাঁড়ানো সুজনকে সে বছর ভারতের মাটিতে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ম্যানেজার পদে বেছে নেন হোয়াটমোর। ডেভের পছন্দের কারণেই বোর্ড সুজনকে ম্যানেজারের দায়িত্ব দেয়।

এরপর শুরু হয় ম্যানেজার-কোচ খালেদ মাহমুদের ক্যারিয়ার। ঢাকার ক্লাব ক্রিকেট, জাতীয় লিগ, বিসিএল ও বিপিএলে নিয়মিত কোচিং করাতে থাকেন সুজন। মাঝে-মধ্যে জাতীয় দলের ম্যানেজার হিসেবে কাজ চালিয়ে যান। তবে ২০১৪ সাল থেকে সেই ম্যানেজারের পদটি প্রায় পাকাপোক্ত হয়েছিল। দু’একটি বিচ্ছিন্ন সিরিজ বা সফর বাদে সুজনই ছিলেন জাতীয় দলের ম্যানেজার।

কিন্তু অতি সম্প্রতি সেই নন্দিত ক্রিকেট ব্যক্তিত্ব খানিক প্রশ্নবিদ্ধ। একইসঙ্গে বোর্ড পরিচালক, আবাহনী ও বিপিএলে ঢাকা ডায়নামাইটসে কোচিং করানো এবং দেশের ক্রিকেট উন্নয়নের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কমিটি গেম ডেভেলপমেন্টের দায়িত্বে থাকা- সব মিলিয়ে এক সঙ্গে চার-পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন প্রশ্ন জাগায় বৈকি!

কিন্তু সুজন সে সব সমালোচনা গায়ে মাখেন না। তার একটাই কথা, আমি কোনো দায়িত্ব চেয়ে নেই না। তবে ক্রিকেট কোচিং আমার ধ্যান-জ্ঞান। আমার প্রধান ভালবাসা। কোচিংকেই আমি আমার মূল কাজ বলে মনে করি। অতীতে বহুবার জাগো নিউজসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, জাতীয় দলের কোচ হওয়াই আমার দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন।

এবার সে স্বপ্ন পূরণ হয়েছে খালেদ মাহমুদের। কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে চলে যাওয়ার পর এখন তিনি টিম বাংলাদেশের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর। রিচার্ড হ্যালসল অন্তর্বর্তীকালীন কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও জাতীয় দলের টেকনিক্যাল বিষয়গুলো থাকবে সুজনের হাতেই।

jagonews24

দায়িত্ব পেয়ে কেমন লাগছে, টেকনিক্যাল ডিরেক্টর হিসেবে কী করতে চান, প্রথম অ্যাসাইনমেন্টে তার লক্ষ্যই বা কী? এসব নিয়ে জাগো নিউজের বিশেষ সংবাদদাতা আরিফুর রহমান বাবুর সঙ্গে বলেছেন অনেক কথা। তারই প্রথম পর্ব প্রকাশ করা হল আজ

জাগো নিউজ : দীর্ঘদিন জাতীয় দলের সাথে আছেন। তবে সেটা মূলতঃ ম্যানেজার হিসেবে। এবার টেকনিক্যাল ডিরেক্টর হিসেবে প্রথম দায়িত্ব পেলেন। দুই জায়গায় কাজের পার্থক্য কি?

সুজন : এক কথায় বলতে গেলে, বলতে হবে পুরোপুরিই ভিন্ন। ম্যানেজার হিসেবে অবশ্যই দলের সঙ্গী ছিলাম। দলের সাথে প্র্যাকটিস, ড্রেসিং রুমসহ সব জায়গায় থাকলেও আগে আমার কাজের ধরণ ও কর্ম পরিধিটা ঠিক ক্রিকেট কেন্দ্রিক ছিল না। সে অর্থে কোচিং রিলেটেড কাজও কম ছিল। আমার দায়িত্বটা ছিল ব্যবস্থপনা। ক্রিকেটার তথা দলের সব কিছু গুছিয়ে দিতে হতো। এখন পুরোটাই কোচিং রিলেটেড কাজ। তাই কাজের ধরণ এখন পুরোপুরি ভিন্ন। এখন আমার কাজ পুরোপুরি ক্রিকেট ও কোচিং কেন্দ্রিক। এক কথায় পুরোদস্তুর কোচিং করানো।

জাগো নিউজ : জাতীয় দলের ব্যবস্থাপনার সাথে আপনার জড়িত হওয়া গল্পটা একটু বলবেন?

সুজন : জাতীয় দলের ব্যবস্থাপনায় প্রথম জড়িয়ে পড়ি ২০০৬ সালে। ওই সময় খেলা ছাড়ার পর ম্যানেজারের কাজ প্রথম শুরু করি। সেবার চ্যাস্পিয়ন্স ট্রফিতে ডেভ হোয়াটমোরের সাথে শুরু করেছি। এরপর মাঝে-মধ্যে এক সিরিজ বা টুর্নামেন্টে ম্যানেজার হিসেবে কাজ করলেও জাতীয় দলে আর টানা ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করিনি। বরং ক্লাব কোচিংয়ে মনোযোগি হই।

শেষ তিন বছর প্রায় নিয়মিতই ম্যানেজার ছিলাম। তবে এটা সত্য, জাতীয় দলে বেশি সময় ধরে ম্যানেজার হিসেবে কাজ করেছি। যদিও ব্যক্তিগতভাবে আমার ম্যানেজারের চেয়ে কোচিং অভিজ্ঞতা অনেক বেশি। আমার কোচিং ক্যারিয়ারের বয়স প্রায় এক যুগ হতে চললো। এ দীর্ঘ সময় ঢাকার ক্লাব ক্রিকেট, জাতীয় লিগ, বিসিএল ও বিপিএলে নিয়মিত কোচিং করিয়েছি।

জাগো নিউজ : ম্যানেজার থেকে এবার টেকনিক্যাল ডিরেক্টর, কেমন লাগছে? এটা কি খুব চ্যালেঞ্জিং?

সুজন : আসলে আমি মনে করি এটা আমার জন্য অনেক বড় সুযোগ। কোচিংয়ের এ কাজটাই অনেক বেশী উপভোগ করি আমি। কোচিং আমার খুব পছন্দের জায়গা এবং বছরের একটা বড় সময় আমি এই কোচিং করাতেই বেশি অভ্যস্ত। হ্যাঁ এটা সত্যি যে, জাতীয় দলের ব্যানারে আগে কখনোই কোচিং করাইনি; কিন্তু এখন যারা জাতীয় দলে খেলছে, এক টিম বাংলাদেশের যারা অপরিহার্য সদস্য- সেই তামিম, মুশফিক, সাকিব, মাশরাফি, মাহমুদউল্লাহসহ প্রায় সবার সাথে কোন না কোনভাবে এক দলে কোচিং করানোর অভিজ্ঞতা আমার আছে। এদের সবার সাথেই কোচ হিসেবে কাজ করেছি।

ম্যানেজার হিসেবে এক রকম কাজ ছিল। আর এখন অনেক বেশি ক্রিকেট ও কোচিং কেন্দ্রিক কাজ। এই কাজটিই আমি করতে অনেক বেশি ভালবাসি। উপভোগও করি।

জাগো নিউজ : আপনার গায়ে আছে ‘ফাইটারে’র তকমা। এ মুহূর্তে বাংলাদেশ দলে কি ফাইটিং স্পিরিট একটু কম? তা কি বাড়ানোর তাগিদ অনুভব করেন?

সুজন : যখন আপনি চাপের মধ্যে থাকবেন, মানে হারের বৃত্তে আটকা পড়বেন তখন যে কোন দলেরই ফাইটিং স্পিরিট একটু কমে যায়। ওই সময় একটি জয় মনোবল বাড়াতে, আত্ববিশ্বাস ও আস্থা ফিরিয়ে আনতে খুব কার্যকর ভূমিকা রাখে। বড় রসদ হিসেবে কাজ করে।

দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে একটানা বেশি ম্যাচ হারে হয়ত দলকে একটু ভগ্ন মনে হয়েছে। আবার একটা ম্যাচ জিতলে দেখতেন, আমাদের দলের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ অন্যরকম হয়ে যেত। পুরো দলের চেহারা পাল্টে যেত। পরে হারলেও পারফরমেন্সটা হতো ভাল। আমরা আরও ভালো পারফর্ম করতে পারতাম।

হ্যাঁ, আমাদের দলের একটা রোগ আছে। জিততে থাকলে কোনই মানসিক সমস্যা হয় না। তখন আর তাদের মোটিভেশন দরকার পড়ে না; কিন্তু হারলেই তাদের উজ্জীবিত করতে হয়। অনুপ্রেরণা জোগাতে হয়। ক্রিকেট কোচিংয়ের বাইরে মেন্টর ও মোটিভেটর হিসেবে সেটাও আমার কাজ হবে। আমি সাধ্যমত চেষ্টা করবো দলকে উজ্জীবিত করতে। চাঙ্গা রাখতে।

জাগো নিউজ : আপনি আগেও বলেছেন জাতীয় দলের কোচ হওয়ার দীর্ঘ লালিত স্বপ্ন আছে। এবার প্রথমবার সে স্বপ্ন পূরণের হাতছানি। কিভাবে দেখছেন?

সুজন : সত্যি দারুন লাগছে। বলতে পারেন, জাতীয় দলকে নিয়ে আমি স্বপ্ন দেখি অনেকদিন ধরেই। জাতীয় দলকে কোচিং করানোর ইচ্ছে বহু পুরনো। দীর্ঘ দিনের লালায়িত স্বপ্ন। এটাই আমার অনেক দিনের ধ্যান-জ্ঞান। অবশেষে সে স্বপ্ন বাস্তব রুপ পেয়েছে। এ দায়িত্ব প্রাপ্তি আমার নিজেকে প্রমাণ করার বিরাট সুযোগ বলে মনে হচ্ছে।

এটা অত্যুক্তি হবে না যে, আমাদের জাতীয় দলের ক্ষেত্রে স্থানীয় কোচের ওপর অনেকের আস্থা ও বিশ্বাস তুলনামুলক কম। তারপরও আমার হাতে তো আর আলাদিনের আশ্চার্য প্রদীপ নেই যে, রাতারাতি দলকে বদলে দেব। হাতে সময় মাত্র ১৫ দিন। এ স্বল্প প্রস্তুতিতে একটা দলের আমূল পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়।

আমি একা তো আর অনেক কিছু করতে পারবো না। এটা পুরো দলের বিষয়। পুরোপুরি টিমওয়ার্ক খুব জরুরি। যেটুকু সময় হাতে পাবো, তার মধ্যেই চেষ্টা করবো যতটা ভাল করা যায়। এখন কাউকেই নতুন করে কিছু শেখানোর পর্যায় নেই। তৈরির সময়ও নেই।

এত বছর ধরে ক্রিকেটের সাথে জড়িয়ে আছি। ক্রিকেটই আমার ভালবাসা। ক্রিকেটই ভুবন। ক্রিকেটছাড়া আর অন্য কোন কিছুই চিন্তা করিনি। আমার ভাবনার সবটুকু জুড়েই ছিল ক্রিকেট। সেই খেলোয়াড়ি জীবন থেকে এখন পর্যন্ত আমি যা শিখেছি, যা জেনেছি, যতটুকু অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছি, তার সবটুকু উজাড় করে চেষ্টা করবো।

দলের পরিচর্যার কাজটুকু যতটা ভালভাবে করা যায়- সে চেষ্টাই থাকবে। কী করলে এই দল মাঠে আরও বেশি চ্যালেঞ্জিং ও ফাইটিং দল হিসেবে পরিণত হবে, আরও ভাল ক্রিকেট খেলবে- আমার সার্বক্ষণিক চিন্তা এবং চ্যালেঞ্জ এখন সেটাই।

জাগো নিউজ : দায়িত্ব প্রাপ্তির পর নতুন কিছু করার তাগিদ অনুভব করছেন?

সুজন : আমি একটি বিষয় নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছি। তাহলো, দলের জুনিয়র ক্রিকেটারদের কাছ থেকে আরও কার্যকর এবং ম্যাচ উইনিং পারফরমেন্স বের করে আনা। সে চেষ্টাই থাকবে। গত এক বছরে স্কোর কার্ড দেখুন, দেখবেন ঘুরে ফিরে তামিম, মুশফিক, সাকিব, মাহমুউল্লাহ আর মাশরাফি- এই পাঁচ সিনিয়র ও অভিজ্ঞ ক্রিকেটারই সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

jagonews24

দলের সাফল্যের ভিত রচিত হয়েছে তাদের হাতে। এক কথায়, বাংলাদেশ দলের মূল চালিকাশক্তি হিসেবে বারবার ওই পাঁচ অভিজ্ঞ ও সিনিয়র ক্রিকেটারকেই চোখে পড়েছে। এখানে সিনিয়র আর জুনিয়রের ভেদাভেদ খোঁজার বিষয় নয়। আমি চাই সিনিয়রদের পাশাপাশি জুনিয়রদেরও তৈরি করতে। যাতে তারা নিয়মিত ভাল পারফর্ম করে দলের সাফল্যে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। আমাদের দলে মিরাজ, সাব্বির, মোসাদ্দেকসহ আরো ক’জন মেধাবি তরুণ আছে। তারা যথেষ্ঠ মেধাবি। তাদের সামর্থ্যও আছে প্রচুর। এখন তাদের তৈরি করতে হবে। এটা করতে পারা খুব কঠিন কাজ নয়।

বোঝাতে হবে, তারাও দলের একটা বড় শক্তি। শুধু সহায়ক ভূমিকা নেবার জন্যই তাদের দলে নেয়া হয় না। তারাও ম্যাচ উইনার হতে পারে। তারাও দলের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাদেরও আছে দল জেতানোর পর্যাপ্ত সামর্থ্য। আমি সে দিকেই নজর দেব বেশি। জুনিয়রদের বোঝানোর প্রাণপন চেষ্টা করবো, তোমরাও দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। দলে তোমারাও সাকিব-তামিমের মত রাখতে পারো কার্যকর অবদান। তাদের যদি ওইভাবে বোঝাতে পারি, তাহলে দেখবেন আমরা একটা ইউনিট হিসেবে গড়ে উঠবো। এটা করতে পারলে আমার কাজটাও অনেক সহজ হয়ে যাবে।

জাগো নিউজ : চন্ডিকা হাথুরুসিংহে এদেশের ক্রিকেটারদের খুব কাছ থেকে দেখেছেন। সবার সম্পর্কে ধারণা সুস্পষ্ট। এটা কি তার প্লাস পয়েন্ট আর টিম বাংলাদেশের জন্য মাইনাস পয়েন্ট?

সুজন : হ্যাঁ আমাদের দলের অভ্যন্তরীন বিষয় আর ক্রিকেটারদের দোষ, গুণ, ভাল, মন্দ- প্রায় সবই জানা হাথুরুর। এটা তার প্লাস পয়েন্ট। তবে আমার মনে হয় না এ নিয়ে আমাদের অত বেশি চিন্তার কারণ আছে। আমাদের শঙ্কিত হবার কারণ নেই। আসলে সব কিছু নির্ভর করে বাস্তব রূপ দেবার ওপর। হাথুরুসিংহে এবার যখন আমাদের বিপক্ষে লঙ্কান কোচ হিসেবে গেম প্ল্যান করবেন, তখন তার জানা বিষয়গুলো অবশ্যই প্ল্যানিংয়ে থাকবে বা অগ্রাধিকার পাবে; কিন্তু তার সে সব লক্ষ্য পরিকল্পনাই যে সফল হবে- এমন ভাবার কোনই কারণ নেই। কারণ, সেই সব পরিকল্পনাগুলোর তো বাস্তব রূপ দিতে হবে!

আর এখনকার ক্রিকেট অনেক রকম আধুনিক সুযোগ সুবিধা আছে। আপনি একজন অলটাইম কম্পিউটার অ্যানালিস্ট পাচ্ছেস। যিনি সর্বক্ষণ সবরকম টেকনিক্যাল বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করেন। আপনার যখন যে দলের সাথে খেলা, সেই দলের প্লাস পয়েন্ট কি? দলটির শক্তির মূল জায়গা কোথায়, দূর্বলতা বা ঘাটতিগুলো কী কী, কোন ক্রিকেটারের কোথায় সমস্যা- এসব এখন কম্পিউটার অ্যানালিস্টই আপনাকে দেখিয়ে দেবেন। সেটাই তার কাজ।

আমরা সবাই এখন কম্পিউটার অ্যানালিস্ট নিয়ে কাজ করি। তাই নিজ দল আর প্রতিপক্ষ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা জন্মানো এখন অনেক সহজসাধ্য। আর তা নিয়ে প্রতিপক্ষ দলের চিন্তা ভাবনারও অত কিছু দেখি না। একটি উদাহরণ দেই। ধরুন হাথুরুসিংহে কখনোই আমাদের দলের কোচ ছিলেন না। আমাদের ক্রিকেটারদের সাথে কোনদিনই তিনি কাজ করেননি। তারপরও তিনি যখন শ্রীলঙ্কার কোচ হয়ে বাংলাদেশ সফরে আসবেন, তখন কি শূন্য ধারনা নিয়ে আসতেন? কিছুতেই না। তার কম্পিউটার অ্যানালিস্ট তাকে সব ধারনাই দিয়ে দিতেন।

কাজেই এখন প্রতিপক্ষ দল সম্পর্কে ধারনা নিয়ে প্ল্যান করা অনেক সহজ। চন্ডিকা যদি কখনো আমাদের কোচ নাও থাকতেন, তাও তিনি জানতেন- তামিম, মুশফিক, সাকিবের কোনটা প্লাস, কোনটা মাইনাস। আসলে সেই ধারনা অনুযায়ী গেম প্ল্যান করাটা বড় নয়। মূল কাজ হচ্ছে তার বাস্তবায়ন।

হাথুরুসিংহে আমাদের ক্রিকেটারদের সম্পর্কে নিজের ধারণা থেকেও প্ল্যান তৈরি করবেন; কিন্তু লঙ্কানদের তো আমাদের কন্ডিশনে এসে তার সফল বাস্তব রূপ দিতে হবে। বেশি দুর যাওয়ার দরকার নেই, বর্তমান সময়ের ভয়ঙ্কর উইলোবাজ ক্রিস গেইলেরও কি দূর্বলতা আর সীমাবদ্ধতা নেই? আছে। তারমতো বেপরোয়া উইলোবাজেরও দূর্বল জায়গা আছে।

কিন্তু আপনার তো সেই দূর্বল জায়গায় আঘাত হানার অস্ত্র থাকতে হবে। আপনি জানেন গেইলকে দূর্বল করতে ১৪৫ কিলোমিটার গতি বল করতে হবে। ওই প্রচণ্ড গতিতে বল ছুঁড়ে গেইলের মাথা ও মুখ সমান উচ্চতায় বল ফেললে, তাকে খানিক বিব্রত করা যাবে- এটা আপনি জানেন; কিন্তু আপনার হাতে অত জোরে বল করতে পারে, তেমন নিখুঁত বোলারও লাগবে। তা না হলে সব পরিকল্পনাই যে ভেস্তে যাবে! গেইল মেরে ফাটিয়ে দেবে। সবচেয়ে বড় কথা অমন অস্ত্র থাকতে হবে।

তাই আমাদের তামিম, ইমরুল, মুশফিক, সাকিব, মাহমুদউল্লাহদের নিয়ে নিশ্চয়ই চন্ডিকা প্ল্যান করবে। আমরাও করবো। হাথুরুর প্ল্যান থেকে বের হতে আমাদের আরও টেকনিক্যাল হতে হবে। আরেকটু চিন্তা করতে হবে। আমাদের প্ল্যান কি হবে সেটা ক্রিকেটারদের সাথে বসে ঠিক করতে হবে। তবে আপনি যতই প্ল্যান করুন না কেন, শেষ ও আসল কথা হলো তা জায়গামত, মানে মাঠে সফল বাস্তবরূপ দেয়া। মাঠের খেলাটাই আগে। আপনার স্কিল প্লেয়ার থাকলে তার বাস্তব রুপ দেয়া সহজ।

এআরবি/আইএইচএস/আরআইপি

আরও পড়ুন