ভিডিও EN
  1. Home/
  2. খেলাধুলা

পাইবাস না, সিমন্সও পছন্দ নয়, তাহলে কোচ কে?

আরিফুর রহমান বাবু | প্রকাশিত: ১১:৩৮ এএম, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৭

নতুন বছরের মাঝামাঝি রাজধানী ঢাকায় শ্রীলঙ্কা, জিম্বাবুয়ে আর বাংলাদেশকে নিয়ে যে তিন জাতি ক্রিকেট আসর বসবে, তার আগে কি দেখা মিলবে নতুন বিদেশি কোচের? নাকি বর্তমান সহকারী রিচার্ড হালস্যাল আর খালেদ মাহমুদ সুজনই অন্তর্বর্তীকালীন কোচ হিসেবে ওই তিন জাতি টুর্নামেন্ট আর শ্রীলঙ্কার সঙ্গে হোম সিরিজ চালিয়ে দেবেন?

বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন ইতোমধ্যেই হালস্যাল আর খালেদ মাহমুদ সুজনকে তৈরি থাকতে বলেছেন। বিপিএল শেষ হবার ক'দিন আগে বিসিবি বিগ বস সাংবাদিকদের সঙ্গে কোচ নিয়ে অনেক কথার ভিড়ে বলেও রেখেছেন দেশের মাটিতে ত্রিদেশীয় আসর আর শ্রীলঙ্কার সঙ্গে সিরিজে হালস্যাল আর সুজনকেই অন্তর্বর্তীকালীন কোচের ভূমিকায় দেখা যেতে পারে।

তারপরও কেটে গেছে সপ্তাহের বেশি সময়। কিন্তু এখন পর্যন্ত নতুন কোচের কোনই খবর নেই। তাহলে কী জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে দেশের মাটিতে কোচিংয়ের কাজ সাড়বেন হালস্যাল আর সুজন? অবস্থাদৃষ্টে তাই মনে হচ্ছে।

বিসিবি পরিচালক, মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান ও কোচ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত জালাল ইউনুস পরিষ্কার জানাতে পারছেন না; কে হবেন মাশরাফি, সাকিব, তামিম, মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহদের নতুন কোচ। কবে নাগাদ কোচ মনোনয়ন চূড়ান্ত হবে-সোমবার দুপুরে তারও কোনো পরিষ্কার জবাব দিতে পারেননি জালাল ইউনুস।

আজ সকালে জাগো নিউজের সঙ্গে কোচ নিয়ে আলাপে জালাল ইউনুস বলেন, 'জাতীয় দলের নতুন কোচ কে হবেন, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। কারণ মনোনয়ন চূড়ান্ত হয়নি।'

তাহলে কি জানুয়ারিতে যে তিন জাতি আসর আর শ্রীলঙ্কার সঙ্গে সিরিজের আগে নতুন কোচ আসছে না? এ প্রশ্নেরও ইতিবাচক জবাব নেই বিসিবি পরিচালক ও কোচ মনোনয়ন প্রক্রিয়ার অন্যতম সদস্য জালাল ইউনুসের কাছে।

কেন? রিচার্ড পাইবাস আর ফিল সিমন্স যে ইন্টারভিউ দিয়ে গেলেন, তাদের কি খবর ? তাদের কেউ কি দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন? এমন প্রশ্নে জালালের কৌশলী জবাব, 'তাও ঠিক হয়নি।'

সবার জানা, ডিসেম্বরের প্রথম ভাগে ইন্টারভিউ দিয়ে গেছেন ইংলিশ কোচ রিচার্ড পাইবাস। তার ক'দিন পর ইন্টারভিউ দিতে এসেছিলেন ফিল সিমন্সও। কোচ হিসেবে তারা কে কি করতে চান, কার লক্ষ্য-পরিকল্পনা কি, কার কোচিং ম্যাথডই বা কেমন হবে- এসব বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন ও কোচ মনোনয়র প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত শীর্ষ কর্তাদের সামনে উপস্থাপন করে গেছেন পাইবাস ও সিমন্স। কিন্তু ভিতরের খবর, শেষ পর্যন্ত তাদের কারো কোচ হবার সম্ভাবনা নাকি খুব কম!

এর মধ্যে রিচার্ড পাইবাস উপাখ্যান নাকি শুরুর আগেই শেষ। পরিচালকদের কেউ স্পষ্ট বা পরিষ্কার করে কেউ কিছু না জানালেও বোর্ডের অতি উচ্চ পর্যায়ের নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করছে, পাইবাস কোচ হচ্ছেন না। এ ইংলিশের নতুন কোচ হবার সম্ভাবনা শুন্যের কোঠায় গিয়ে ঠেকেছে।

সূত্র জানায়, যে দু'জনার ইন্টারভিউ হয়েছে, তাদের মধ্যে নাকি পাইবাসকেই মনে ধরেছিল বোর্ড কর্তাদের। কারণ বোর্ড যেমন প্রকৃতির ও মানসিকতার কোচ খুঁজছিলেন, পাইবাস নাকি ঠিক অমন প্রকৃতির ও মানসিকতার মানুষ। তারপরও পাইবাসকে না নেবার সিদ্ধান্ত একরকম চূড়ান্ত।

কারণ কি ? সূত্রটির ব্যাখ্যা, পাইবাসের লক্ষ্য ও পরিকল্পনা ভালো লেগেছিল বোর্ড প্রধানসহ শীর্ষ কর্তাদের। তার চেয়ে বড় কথা এ ইংলিশ একটু শক্ত ও কড়া প্রকৃতির মানুষ। যার নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতাও বেশি। যিনি ক্রিকেটারদের কঠোর শৃঙ্খলে আবদ্ধ রাখতে পারবেন। এক কথায় ক্রিকেটাররা তাকে সমঝে চলবেন।

ভিতরের খবর, বোর্ড এমন কাউকেই কোচ হিসেবে পেতে যায়। বোর্ডের ভিতরের মানসিকতা হলো , যিনি নতুন কোচ হবেন, প্রথমতঃ তাকে হতে হবে মেধাবী, প্রজ্ঞাবান। যার দল পরিচালনায় বিশেষ দক্ষতা থাকতেই হবে। যিনি দলকে উজ্জীবীত করার পাশাপাশি একটা সঠিক লক্ষ্যে এগিয়ে নিতে ও পুরো দলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন। ক্রিকেটাররা কোচকে ঠিক ভয় না পেলেও সমীহ করবেন।

কিন্তু ঐ সূত্রই নিশ্চিত করেছে, পাইবাস কোচ হচ্ছেন না। কারণ তার ওই অতিমাত্রায় কড়া মেজাজ, সুকঠিন ও ইস্পাতসম মানসিকতা এবং ক্রিকেটারদের ওপর একটু বেশি ছড়ি ঘোরানোর মানসিকতা মোটেই পছন্দ নয় সিনিয়র ক্রিকেটারদের।

জানা গেছে, বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের সঙ্গে কোচ নিয়ে আলাপে মাশরাফি, সাকিব ও মুশফিকরা পাইবাসকে কোচ না করার অনুরোধ জানিয়েছেন। সিনিয়র ক্রিকেটাররা পাইবাসকে কোচ হিসেবে পছন্দ করছেন না, তাই বোর্ড সভাপতিও মনে মনে স্থির করে ফেলেছেন, পাইবাসকে কোচ করা হবে না।

এ তথ্য নিশ্চিত করে কোচ মনোনয়ন প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত এক পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাগো নিউজকে বলেন, যদি ক্রিকেটাররাই কোচকে পছন্দ না করেন, তার আচার-আচরণ ও প্রকৃতি নিয়ে অসন্তুষ্ট থাকেন, তাহলে তাকে কোচ করা হবে আত্মঘাতি কাজ। তাই বোর্ড ভিতরে ভিতরে সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছে, পাইবাসকে কোচ করা হবে না।

পাইবাস 'না ' শুনে আবার ভাববেন না, তাহলে বুঝি সিমন্স 'হ্যাঁ'। সেটাও সম্ভবত না । পরিচয় গোপন রেখে বোর্ডের একাধিক শীর্ষ কর্তা জানিয়েছেন, ফিল সিমন্সকেও আদর্শ ভাবছে না বোর্ড। দীর্ঘ দিন ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে খেলা সিমন্সের কোচিং ম্যাথডে নাকি ক্রিকেটাররাই শেষ কথা।

কিসে ক্রিকেটারদের সুবিধা হবে, তারা একটু কমফোর্ট ফিল করবেন, তা নিয়েই নাকি বেশি মাথা ঘামান সিমন্স। বোর্ড কর্তাদের মূল্যায়ন, ক্রিকেটারদের বেশী স্বাধীনতা দেন, তাদের সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে বেশি মাথা ঘামান এবং কোনো কিছু চাপিয়ে দেন না বলেই এখন পর্যন্ত সফল হতে পারেননি বর্তমান বোলিং কোচ কোর্টনি ওয়ালশ। অথচ সর্বকালের অন্যতম সেরা ফাস্টবোলারদের একজন তিনি।

ফাস্টবোলিংয়ের এমন কোন কৌশল, কারুকাজ কিংবা বুদ্ধি নেই-যা ওয়ালসের নখোদর্পনে নেই। সব জানা, সব কৌশল আয়ত্ব করা এমন একজন বিশ্বমানের ফাস্টবোলারও পেস বোলিং কোচ হিসেবে নিজেকে মেলে ধরতে পারছেন না, মূলতঃ অতি নমনীয়তার কারণে। এক কথায় পেসারদের ওপর তার প্রভাব ও কর্তৃত্ব নেই তেমন।

একদম শেষ কথা , বোর্ড অমন কাউকে কোচ হিসেবে চায় না। বোর্ড এমন কাউকে চায়, যার মেধা ও প্রজ্ঞা আছে। যিনি অনেক কিছুৃই জানেন। ক্রিকেটের অনেক লাগসই ও কার্যকর কৌশল তার জানা। পাশাপাশি যার থাকবে ক্রিকেটারদের নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা। আপাততঃ তেমন কারো জন্যই অপেক্ষা।

যদিও এর মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকান গ্যারি কারস্টেন আর সাবেক লঙ্কান ব্যাটসম্যান হাসান তিলকারত্নেও আছেন বিবেচনায়। তবে কারস্টেন ঠিক কোচ হিসেবে নয়। তিনি ডাইরেক্টর কোচিং হতে চান। হাতে কলমে কোচিং করানোর চেয়ে যিনি ক্রিকেটীয় শিক্ষা, বুদ্ধি, পরামর্শ আর নানা সুক্ষ্ণ কৌশল শেখাতে চান। আর তিলকারত্নে ব্যাটিং কোচ হতেই নাকি আগ্রহী বেশি।

দেখা যাক, বোর্ড কাকে বেছে নেয় শেষ পর্যন্ত!

এআরবি/এমএমআর/আরআইপি

আরও পড়ুন