হাসল গেইলের ব্যাট জিতল রংপুর
দুঃখ-হতাশা আর যন্ত্রণা; এসব তার ব্যাকরণে নেই। কেন থাকবে? ইনজুরিই যাকে টলাতে পারে না , তাকে কি আর না পারার বেদনা পোড়াতে পারে? পারে না কখনো। তবে এবার রংপুর রাইডার্সের ব্যাটিংয়ে অনেকটাই হতাশ ছিলেন মাশরাফি।
তাইতো কাল রাতে জাগো নিউজের সঙ্গে একান্ত আলাপে বলেছিলেন, ‘আমরা পুরো টুর্নামেন্টে ব্যাটিং নিয়ে ধুঁকেছি। এবারের আসরে আমরা দুটি ম্যাচে দেড়শো রানের মাঝারি লক্ষ্য তাড়া করতে পারিনি। বেশির ভাগ খেলাতেই আমাদের গড় পড়তা স্কোর ছিল ১৪০ থেকে ১৫০।
খুলনার বিপক্ষে এলিমিনেটর পর্বের প্রথম ম্যাচে তাই ব্যাটসম্যানদের দিকে তাকিয়ে ছিলেন মাশরাফি। এ ম্যাচে নিজ দলের সম্ভাবনার কথা বলতে গিয়ে রংপুর রাইডার্স অধিনায়ক বলে বসেন, 'আমরা যদি আগের খেলাগুলোর মতো ব্যাটিং করি তাহলে কঠিন হবে। আর যদি ব্যাটিং ভালো হয়, তাহলে অবশ্যই চান্স থাকবে। মোট কথা ব্যাটিং অনেক ভালো করতে হবে। অন্য দলগুলো যেমন ব্যাটিং করেছে, আমরা তার ধারে কাছে দিয়েও যেতে পারিনি। আমাদের ব্যাটিংয়ের ওপর অনেক কিছুই নির্ভর করবে।’
নিশ্চয়ই ওপরের কথাগুলো কাল রাতে কিংবা আজ সকালে টিম মিটিংয়েও বলেছেন মাশরাফি। আর তার বার্তা অবশ্যই প্রতিটি ক্রিকেটারের কানে গিয়ে পৌঁছেছে। তা পৌঁছেছে, তার জ্বলন্ত প্রমাণ ক্রিস গেইলের জ্বলে ওঠা। অবশেষে জ্বলে উঠলেন ক্যারিবীয় ক্রিকেটের এ ‘অলস সিংহ।’
বিপিএলের আগের চার আসরে যার নামের পাশে তিন তিনটি শতরান, সেই গেইল তিন রবিন লিগের ৮ খেলায় করেছিলেন মোটে ২১০ রান। তাও ১৪৪.৮২ স্ট্রাইকরেট। ২৬.২৫ গড়ে। সর্বোচ্চ ছিল ৫১।
আজ অতি প্রয়োজনীয় সময়ে হাসলো গেইলের ব্যাট। আর তাতেই সহজ জয় রংপুরের। ১৬৭ রান করতে গিয়ে ৮ উইকেট হাতে রেখে মাশরাফির দল সাজঘরে পৌঁছাল খেলার ২৮ বল আগেই।
গেইল জ্বলে ওঠা মানেই তিন অঙ্কে পৌঁছে যাওয়া। আর এ ক্যারিবীয় বিধ্বংসী উইলোবাজের শতরান মানেই চার ও ছক্কার অবাধ প্রদর্শনী। শেরে বাংলার উইকেটে যার আকাল ছিল এবার। পিচ নিয়ে সবার অভিযোগ ছিল। আজ গেইলের ব্যাটিং তাণ্ডব ও চার-ছক্কার ফলগুধারায় তা খনিকের জন্য মিথ্যে প্রমাণ হলো।
বোঝাই গেল, গেইলের দিনে আর উইকেট ভালো কিংবা মন্দ কোনোই প্রভাব ফেলে না। রংপুরের বোলারদের পাড়ার বোলারের মানে নামিয়ে ২৪৭.০৫ স্ট্রাইকরেটে ৫১ বলে ১৪ ছক্কা ও ৬ বাউন্ডারিতে ১২৬ রানের টর্নেডো ইনিংস উপহার দিলেন গেইল।
দ্বিতীয় ওভারেই শুরু গেইলের ছক্কা বৃষ্টি। চললো ১৬ নম্বর ওভার অবধি। অকেশনাল স্পিনার নাজমুল হোসেন শান্তর বলে ডিপ মিড উইকেটের ওপর দিয়ে বিশাল ছক্কায় রংপুরকে পৌঁছে দিলেন জয়ের বন্দরে।
এ মুহূর্তে হয়ত ক্রিকেটের সবচেয়ে ছোট ফরম্যাটের এক নম্বর ও সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ব্যাটসম্যান তিনি নন। তিনি টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের প্রথম সেঞ্চুরিয়ান। তারপরও আইপিএল, বিগ ব্যাশ কিংবা যে কোনো টি-টোয়েন্টি আসরের আলোচিত ক্রিকেটার ‘ক্রিস গেইল’।
বাংলাদেশের ক্রিকেট অনুরাগীরা খুবই সৌভাগ্যবান। তারা ক্রিস গেইলের ব্যাটিং দেখেছেন বেশ ক’বার। ইতিহাস ও পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, বিপিএলের আগের চার আসরের প্রতিবার দেখা মিলেছে সীমিত ওভারের ক্রিকেটের ভয়ঙ্কর ওপেনার ক্রিস গেইলকে।
কিন্তু কোনোবারই খুব বেশি ম্যাচ খেলেননি তিনি। ২০১২ সালে হওয়া বিপিএলের প্রথম আসরে বরিশাল বার্নার্সের হয়ে ক্রিস গেইল অংশ নিয়েছিলেন পাঁচ ম্যাচে। আগেরবার, মানে সর্বশেষ আসরেও পাঁচ ম্যাচ খেলেছেন ক্যারিরীয় ক্রিকেটের ‘অলস সিংহ’ গেইল।
৭ দলের ডাবল লেগের আসরে অনেক কম মাচ খেলে রান সংগ্রহে সবার ওপরে থাকা অলিক কল্পনা, শীর্ষ রান সংগ্রহকারীদের তালিকায় জায়গা পাওয়াও কঠিন। গেইল তা পারেনওনি। বিপিএলের কোনো আসরের রান তোলায় শীর্ষ তালিকায় জায়গা হয়নি তার।
তবে দুটি পরিসংখ্যানে সবার ওপরেই ছিলেন গেইল। বিপিএলে সর্বাধিক তিন সেঞ্চুরির কৃতিত্ব ছিল তার। আজ চার নম্বর সেঞ্চুরিটিও করে ফেললেন। তাও মাত্র ৪৫ বলে। যা বিপিএলে তার নিজের দ্বিতীয় দ্রুততম শতক আর বিপিএলের তৃতীয় দ্রুততম।
২০১২ সালে প্রথমবার বিপিএল খেলতে এসে পাঁচ ম্যাচে দুই সেঞ্চুরিসহ ১৮৭.০১ স্ট্রাইক রেটে ২৮৮ রান করেছিলেন গেইল। গড়ও ছিল দুর্দান্ত; ৯৬.০০। পরেরবার, ২০১৩ সালে ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্সের হয়ে একটি মাত্র ম্যাচ খেলতে এসে এক ম্যাচে ২২৩.৫২ স্ট্রাইক রেটে ৫১ বলে ১২ ছক্কা আর পাঁচ বাউন্ডারিতে ১১৪ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলে গেছেন গেইল।
তবে তৃতীয় ও চতুর্থ আসরে তার ব্যাট সেভাবে কথা বলেনি। ২০১৫ সালে চার ম্যাচে ১৬৩.৫২ স্ট্রাইক রেটে করেন ১৩৯ রান। শতরান ছিল না একটিও। হাফ সেঞ্চুরি একটি। সর্বোচ্চ ৯২। আর গত বছরের রেকর্ড আরও জীর্ণ। চিটাগং ভাইকিংসের হয়ে ৫ ম্যাচে সংগ্রহ ১০৯। কোন ফিফটি নেই। সর্বোচ্চ ৪৪। ২১.০০ গড়। স্ট্রাইকরেটও (১২৩.৮৬ ) ছিল তার মানের চেয়ে কম।
এবারো নিজেকে খুঁজে পাচ্ছিলেন না। আজ অবশেষে সেই না পারাকে জয় করা। এমন দিনে এমনভাবে জ্বলে উঠলেন গেইল, যাতে পুরে ছাড়খার খুলনা টাইটান্স বোলিং।
এআরবি/এমএমআর/এমএস