গেইলের ব্যাটে ১৪ ছক্কা!
ক্রিস গেইল খেলতে নামবেন, আর মুহূর্মুহু ছক্কার ঝড় উঠবে না, তা কি করে হয়! বিপিএল খেলতে এসেই যে তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন, ব্রেন্ডন ম্যাককালামকে নিয়ে বিধ্বংসী ব্যাটিং করতে চাই!
কিন্তু কোথায় কী! গেইল-ম্যাককালাম জুটি যে পুরোপুরিই ব্যর্থ! ম্যাককালাম তো ব্যাট ধরাই যেন ভুলে গেলেন। ক্রিস গেইল রংপুরের জার্সি গায়ে এর আগে দুই ম্যাচে জ্বলে ওঠার ইঙ্গিত দিতে দিতে আউট হয়ে গিয়েছিলেন। ওই দুই ম্যাচে যদিও তার ব্যাট থেকে এসেছে দুটি হাফ সেঞ্চুরি।
কিন্তু গেইল ভক্তদের কী তাতে মন ভরে! ভরার মোটেও কথা নয়। গেইলের কাছ থেকে যে তারা আরও বেশি কিছু চান! আরও বিধ্বংসী, আরও ভয়ঙ্কর রূপ চান! পরিস্থিতি এমন দাঁড়াল যে, রংপুর রাইডার্সের সমর্থকরা ধরেই নিয়েছে, বয়সের ভারে হেলে পড়া গেইলের ব্যাটে হয়তো আর বিধ্বংসী রূপটা দেখা যাবে না।
কিন্তু কথায় বলে হাতি মরলেও লাখ টাকা। ক্রিস গেইল তো এমনি এমনি আর বিশ্বব্যাপি টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের বিজ্ঞাপন হয়ে ওঠেননি। এমনি এমনি তো আর বড় ম্যাচের খেলোয়াড় নন তিনি। তার শিকারে যে বড় মাছটিই ধরা পড়বে, এই বিশ্বাস ছিল রংপুরের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা এবং কোচ টম মুডির। এ কারণেই হয়তো, একের পর এক এতগুলো সুযোগ দিয়ে যাচ্ছিলেন ক্যারিবীয় ব্যাটিং দানবকে।
অবশেষে গেইলের ব্যাটে সেই ঝড় উঠলো। ঝড়, হ্যারিকেন, টর্নেডো- যে নামেই অভিহিত করুন না কেন, গেইলের এই ভয়ঙ্কর ব্যাটিংকে কোনো উপমা দিয়ে বেধে রাখা যাবে না। হেরে গেলেই বিদায়। জিতলে সম্ভাবনা টিকে থাকবে। ফাইনাল নিশ্চিত হবে না হয়তো; কিন্তু ফাইনালে ওঠার পথ তো খোলা থাকবে!
এমনই এক ডু অর ডাই ম্যাচে জ্বলে উঠলো গেইলের দানবীয় রূপ। ঠাণ্ডা মাথায় যিনি ব্যাটকে তলোয়ার বানিয়ে খুন করে গেছেন খুলনা টাইটান্সের বোলারদের। গ্রুপ পর্বে দুর্দান্ত খেলে আসা খুলনা টাইটান্সকে এক ফুৎকারে উড়িয়ে দিলেন গেইল। মাত্র ৫১ বল খেললেন। তাতে কত উঠতে পারে রান! বড় জোর ৭০-৮০! গেইল বলে সেটা সর্বোচ্চ সেঞ্চুরিও হতে পারে।
কিন্তু গেইলের ব্যাটে ৫১ বলে উঠলো ১২৬ রান। হার মানেননি তিনি খুলনার কোনো বোলারের কাছে। আবু জায়েদ, মাহমুদউল্লাহ, জোফরা আরচার, মোহাম্মদ ইরফান, কার্লোস ব্র্যাথওয়েট, আফিফ হোসেন ধ্রুব কিংবা নাজমুল হোসেন শান্ত- কেউ পারেনি গেইলের কাছ থেকে একটু সমীহ আদায় করতে। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তিনি শুধু বোলারদের বলগুলোকে বাউন্ডারির অপরপ্রান্তে পাঠিয়েছেন।
বল মোকাবেলা করেছেন ৫১টি। এর মধ্যে ২০টিকেই পাঠিয়েছেন বাউন্ডারির অপরপ্রান্তে। ৬টি চারের মার। বাকি ১৪টি ছক্কা। এক ম্যাচে এতগুলো ছক্কা। শুধুমাত্র গেইলের ব্যাট থেকেই আসা সম্ভব। আর কোনো ব্যাটসম্যানের ব্যাট থেকে কেউ কল্পনাই করতে পারে না, এতগুলো ছক্কার মার।
১২৬ রানের মধ্যে গেইলের ১০৮ রানই এসেছে শুধু বাউন্ডারি থেকে। ৮৪ রান ছক্কা এবং ২৪ রান এলো বাউন্ডারি থেকে। গ্যালারিতে উপস্থিত হাজার পঁচিশেক দর্শকন মন ভরে দেখলো গেইলের ছক্কার ঝড়। বিপিএলের ইতিহাসে এক ম্যাচে এতগুলো ছক্কা মারার রেকর্ড এবারই প্রথম। এর আগে বিপিএলের দ্বিতীয় আসরে সিলেট রয়্যালসের বিপক্ষে এক ম্যাচে ১২টি ছক্কা মেরেছিলেন গেইল। এবার মারলেন ১৪টি।
১৬৮ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ওপেনিংয়ে নামা সোহাগ গাজী দারুণ ব্যর্থ। তিনি সুনিল নারিন হতে পারলেন না। রংপুর চেয়েছিলেন সুনিল নারিনের মত সোহাগ গাজীকে দিয়ে একটা চমক দেখাতে। দারুণ ঝুঁকিপূর্ণ এবং পুরোপুরি গেম্বলিং করার মত একটি কাজ। তাতে তারা ব্যর্থ। ম্যাককালাম বরাবরের মতই ব্যর্থ। ০ রান করে ফিরে গেলেন। শেষ পর্যন্ত রংপুরের হাল ধরলেন গেইল এবং একার হাতেই খুলনাকে দুরমুশ করে দিলেন। ৫১ বলে খেললেন অপরাজিত ১২৬ রানের ইনিংস।
আইএইচএস/এমএমআর/এমএস