কুমিল্লাকে ফেবারিট ভাবতে চান না কোচ সালাউদ্দীন
কোন বড় বা গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগে কখনো কখনো বাকযুদ্ধ চলে। এক দল আরেক দলের সমালোচনা করে। শক্তি ও সামর্থ্য নিয়ে কটুক্তি হয়। কিন্তু আগামীকাল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ও ঢাকা ডায়নামাইটসের কোয়ালিফায়ারের আগে তেমন কিছুই হয়নি। দুই পক্ষই সতর্ক, সাবধানী।
ভাবছেন, দু' দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান আর তামিম ইকবাল তো বন্ধু। তাই হয়ত কথার যুদ্ধ বন্ধ। কিন্তু দুই শিবিরের কোচ খালেদ মাহমুদ সুজন আর মোহাম্মদ সালাউদ্দীন তো আর বন্ধু নন। বরং বর্তমান সময়ে একজন আরেক জনের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বি।
এ মুহূর্তে বাংলাদেশের দু'জন সেরা কোচের তালিকা করতে দেয়া হলে যে কেউ সুজন ও সালাউদ্দীনের নামই বলবেন। বাংলাদেশ জাতীয় দলের ভবিষ্যত ও সম্ভাব্য কোচ হিসেবেও ঘুরে ফিরে এ দুজনার নামই উঠে আসছে। তাই কালকের ম্যাচ যে তাদেরও অন্যরকম যুদ্ধ! দুই দ্রোনাচার্য্য ব্যস্ত কৌশল আঁটায়।
মাঠে এক দলের ক্যাপ্টেন সাকিব। অন্য দলের তামিম। কিন্তু মাঠের বাইরে সব রকম বুদ্ধি-পরামর্শ দেয়া, একাদশ সাজানো ও গেম প্ল্যান তৈরী করছেন দুই প্রশিক্ষক।
খানিক অবাক করা সত্য হলো, শুক্রবার কোয়ালিফায়ারের আগে ঢাকা ডায়নামাইটসের কোচ খালেদ মাহমুদ সুজন ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স প্রশিক্ষক মোহাম্মদ সালাউদ্দীনের কেউ প্রতিপক্ষ দলকে নিয়ে একটি তির্য্যক কথাও বললেন না। ঢাকার কোচ খালেদ মাহমুদ সুজন অকপটে স্বীকার করলেন, 'আমাদের যত বেশী নামী ও দামি তারকাই থাকুক না কেন, কালকের ম্যাচে আমরা আন্ডারডগ। কুমিল্লাই ফেবারিট।'
আর প্রতিপক্ষ ঢাকা সম্পর্কে বলতে বলা হলে কুমিল্লা কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দীন জাগো নিউজকে জানালেন, ‘ ঢাকায় বেশ ক'জন সিনিয়র ও অভিজ্ঞ ক্রিকেটার আছেন। যারা পরিণত।’
কিন্তু তাতে কি ? আপনার দলও তো মাঠে সেরা ক্রিকেট খেলছে। রবিন লিগের দুই পর্বেই ঢাকাকে হারিয়েছে। সেদিক থেকে কালকের লড়াইয়ে কুমিল্লারই ফেবারিট হিসেবে মাঠে নামার কথা। কিন্তু সালাউদ্দীন তা মানতে রাজি নন। ঠিক মানতে রাজি নন, বলা হয়ত ঠিক হলো না। আসলে সালাউদ্দীনের বোধ ও উপলব্ধি ভিন্ন। তিনি সেভাবে দেখতে নারাজ। তার ভাবনা ভিন্ন।
তিনি কিছুতেই নিজ দল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে ফেবারিট মনে করতে চান না। তার মত, 'টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে কোন দলই ফেবারিট নয়। আপনি সারা ম্যাচ ভাল খেললেন, কিন্তু দেখা গেল ৩৮ ওভারে গিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেললেন। ঐ দুই ওভার খারাপ খেলার কারণে হেরেও যেতে পারেন। অর্থাৎ আমি বোঝাতে চাই , এটা ২০ + ২০ = ৪০ ওভারের ম্যাচ। আবার ঘুরিয়ে বললে ১২০+১২০ = ২৪০ বলের খেলা। আপনাকে ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হবে। এক অংশ ভাল খেলে পরের অংশে গিয়ে নুয়ে পড়লে চলবে না। আমি ঐভাবেই চিন্তা করি। আমার ম্যাচ ভাবনায় সেটাই থাকে।’
ঢাকায় অনেক সিনিয়র প্লেয়ার আছেন-মুখে এমন কথা বললেও এর সাথে আরও একটি লাইন জুড়ে দিয়েছেন কুমিল্লা কোচ, ‘ কে কত অভিজ্ঞ ও পারদর্শি সেটা মাঠেই প্রমাণ দিতে হয়। আমি আশা করবো, আমার দলের ক্রিকেটাররা মাঠে জায়গামত তাদের সামর্থর প্রমাণ রাখবে।’
কোয়ালিফায়ারে তার দলের এ্যাপ্রোচে পরিবর্তন না আনার পরামর্শ দিয়ে সালাউদ্দীন বলেন, 'ভিতরে বাড়তি চাপ, চিন্তা, দ্বিধা ও সংশয় নিয়ে কোন দিনই সেরা ক্রিকেট খেলা যায় না। তাই প্রতিপক্ষ ও ম্যাচ নিয়ে অতিমাত্রায় সিরিয়াস না হয়ে যতটা সহজভাবে নেয়া যায়, ততই ভালো। তাতে ভুল কম হবে। আর যে দল যত কম ভুল করবে, তাদের সম্ভাবনাই বেশী থাকবে।’
শিষ্যদের উদ্দেশ্যে কুমিল্লা কোচের পরামর্শ এমন, ‘আমি আসলে কালকের ম্যাচকে ঠিক সেভাবে চিন্তা করছি না। আগের ম্যাচ গুলোর সাথে কালকের খেলাকে আলাদা করে ভাবতে চাই না। এ ম্যাচকে ভিন্ন ভাবে চিন্তা করিনি। খেলাটা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু তা নিয়ে অতিমাত্রায় সতর্ক-সাবধানী হবার কিছু দেখি না। আগের খেলাগুলো আমরা যেভাবে খেলেছি, যে মন মানসিকতা নিয়ে মাঠে নেমেছিলাম, ঠিক সেভাবেই খেলতে চাই।'
তার দল রবিন লিগের দুই পর্বেই ঢাকার সাথে জিতেছে। কিন্তু কালকের লড়াইয়ে আগের সেই ফলকে বিবেচনায় আনতে চান না কুমিল্লা প্রশিক্ষক। তিনি চান, তার দল যে ধারাবাহিকভাবে ভাল খেলে এসেছে, সেটা বজায় রাখতে।
নিজ দলের সাফল্যের পিছনের কথা জিজ্ঞেস করলে সালাউদ্দীন জাগো নিউজকে জানান, 'কোন বিশেষ কারণ নেই। আমরা যে সব ক্রিকেটারের ওপর নির্ভর করেছি, তাদের প্রায় সবাই ধারাবাহিকভাবে ভাল খেলেছে। সবচেয়ে বড় কথা, স্থানীয় ক্রিকেটাররা খুব ভাল খেলে চমৎকার সাপোর্ট দিয়েছে। আমাদের টিম কম্বিনেশন ও টিম পারফরমেন্স হয়েছে যথার্থ। লোকাল আর বিদেশি মিলেই আমরা ভাল খেলেছি।’
কুমিল্লা কোচের আরও একটি উপলব্ধি হলো, তার দলে ফাঁক ফোকর বা দূর্বলতা তুলনামূলক কম।
তাই মুখে এমন কথা, ‘আমাদের টিম খুব ব্যালান্সড। ব্যাটিং, বোলিং মিলে আমরা ব্যালেন্সড। এটাই এডভান্টেজ । ফরেন প্লেয়াররা ওয়েল সেট হয়ে গেছে। সবাই শুরু থেকে নিজ নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য জেনে যে যার দায়িত্ব পালন করছে। তাতে টিম পারফরমেন্স ভাল হচ্ছে।'
নিজ দল সম্পর্কে কুমিল্লা কোচের আরও একটি মূল্যায়ন, 'আমি দলে পরিবর্তন করেছি খুব কম। লাইন আপে নড়াচড়া কম করি।'
আগামীকাল ঢাকার বিপক্ষে কুমিল্লার সম্ভাব্য একাদশ ও পাঁচ বিদেশি সম্পর্কে জানতে চাইলে সালাউদ্দীন বলেন, 'এটা উইকেটের ওপর নির্ভর করবে।'
তবে তার কথা ও শরীরী অভিব্যক্তি বলে দিয়েছে, জস বাটলার, মারলন স্যামুয়েলস, ডোয়েন ব্রাভো , শোয়েব মালিক ও হাসান আলীই হয়ত খেলবেন। তবে উইকেট স্পিন সহায়ক হলে জিম্বাবুয়ান ক্রেমারকে দেখা গেলেও অবাক হবার কিছু থাকবে না।
এআরবি/এমএমআর/আইআই